লালন সাঁইজীর আদি সুরে শূন্যতার শঙ্কা সৃষ্টি করে চলে গেলেন একুশে পদকপ্রাপ্ত বাউল আবদুল করিম শাহ। দীর্ঘদিন রোগভোগের পর ৯৫ বছর বয়সে গতকাল সকাল ৮টা ৪০ মিনিটের দিকে শহরতলির চৌড়হাস জিকে ক্যানেল পাড়ের বাসভবনে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি (ইন্নালিল্লাহে…রাজেউন)। লালনের আদি সুরের ধারক করিম শাহ’র মৃত্যুতে লালন ভক্ত অনুসারীদের মধ্যে নেমে এসেছে শোকের ছায়া। বাংলা একাডেমি থেকে ২০১১ সালে বাউল শিল্পী হিসেবে শিল্পকলায় একুশে পদক পান বাউল আবদুল করিম শাহ। এছাড়া ১৯৯৯ সালে কলকাতায় মধুসূধন মঞ্চের পুরস্কারসহ মোট ১৫টি পুরস্কার পেয়েছিলেন তিনি। লালন ভক্তদের মতে, সাঁইজির (লালনের) আদি সুরের অপর নাম বাউল আবদুল করিম শাহ। যিনি গেয়ে গেছেন মরমী সাধকের বহু গান। জীবন অপরাহ্ণেও থামেনি তার প্রকৃত সুরে গান গাওয়া। জীবন সায়াহ্নে এসে অসুস্থ বাউল একটু ভাল চিকিৎসার আশায় ভর্তি হয়েছিলেন
হাসপাতালে। চিকিৎসা শেষে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল থেকে গত ৭ই জুন বাড়ি ফিরেছিলেন তিনি। পরিবারের স্বজনদের দাবি, বাউল আবদুল করিম শাহ তার জীবনের শেষদিকে এসে সরকারি সহযোগিতা পেয়েছেন। তার আগে ভাঙাচোরা জরাজীর্ণ ছোট্ট একটি কুটিরে অনাহারে-অর্ধাহারে দীর্ঘদিনের
শ্বাসকষ্ট নিয়ে বিনাচিকিৎসায় মানবেতর জীবনযাপন করেছেন। বাউল আবদুল করিম শাহ’র জন্ম ১৯১৯ সালে কুষ্টিয়া জেলার মিরপুর থানার অঞ্জনগাছী গ্রামে। বাবা ঝুমুর আলী জোয়ার্দ্দার পেশায় বাউল শিল্পী। মা কুসুম নেছা গৃহিণী ছিলেন। ৩ বোন ১ ভাইয়ের মধ্যে তিনিই সবার বড়। ছোটবেলা থেকেই তিনি লালন ভক্ত হয়ে পড়েন। ফলে আর লেখাপড়া করা হয়ে উঠেনি। স্ত্রী রিজিয়া খাতুনও আগে বাউল গান করতেন। তার বড় মেয়ে রাবেয়া, ছোট মেয়ে আছিয়া। তার গায়ক ও বাউল হওয়া সম্পর্কে জানা যায়, পিতা ও এলাকার বাউলদের অনুপ্রেরণায় লালনের ভক্ত ও বাউল গানের শুরু। তার গুরু ছিলেন নিতাই শাহ, গানের ওস্তাদ বিহাল শাহ। এই পথে এসে পৈতৃক সূত্রে প্রাপ্ত মাঠান ৫৫ বিঘা সম্পত্তি বিক্রি করে ঠাঁই হয়েছিল সরকারি জায়গায়। প্রবীণ বাউল শিল্পী করিম শাহ লালনের গান শুদ্ধভাবে গাইতেন। তিনি লালনের গান বিকৃত করা ও আদি সুরের বাইরে লালনসংগীত পরিবেশনের বিরোধী ছিলেন। করিম শাহকে বিচিত্র ধারার মানুষ উল্লেখ করে এই ধারাকে টিকিয়ে রাখার জন্য অভিমত ব্যক্ত করেছেন কবি সাহ্যিতিক ও লালন গবেষকরা। বাউল আবদুল করিম শাহর মৃত্যুতে লালনের গানের আদি সুরের চরম শূন্যতা সৃষ্টি হবে বলে লালন ভক্ত অনুসারীরা আশঙ্কাবোধ করছেন। উল্লেখ্য, হাসপাতালে নিজেদের তত্ত্বাবধানে চিকিৎসা করানোর পাশাপাশি তার চিকিৎসার জন্য সমাজ সেবা অধিদপ্তর থেকে দুই লাখ টাকার অনুদান দেয়া হয়েছিল তাকে।