গত বছর ডিসেম্বরে পারিবারিক বন্ধুদের সাথে ইন্ডিয়া বেড়াতে গিয়েছিলাম…নিষাদ নিনিত খুব খুশি…, তাদের বন্ধুরা সাথে আছে…
কাছাকাছি বয়সের অনেকগুলো বাচ্চা… এই দৌড়াচ্ছে তো এই ব্যথা পাচ্ছে… এই খেলা তো এই ঝগড়া…, আবার মুহূর্তেই মিটমাট…
তাজমহলে ঢুকার পথে দেখা গেল অনেক ভিড়… বাচ্চাদের ছুটাছুটি দেখে আমাদের দলের একজন বললেন- “বাচ্চারা দৌড়াদৌড়ি বন্ধ। এইখানে অনেক ভিড়, হারিয়ে যেতে পারো কিন্তু। দুষ্টামি না করে যার যার বাবার হাত ধরো।”
নিষাদ আমার কানের কাছে মুখ এনে ফিসফিস করে জিজ্ঞেস করল
“আমি কার হাত ধরব মা..?”
ওর প্রশ্ন শুনে আমার কেমন লাগছে এটা বোঝার আগেই আমি খুব দ্রুত তার উত্তর খুঁজতে লাগলাম…
নিষাদ একদৃষ্টিতে আমার চোখের দিকে তাকিয়ে আছে…
আমি ওর চোখ থেকে চোখ একটুও না সরিয়ে উত্তর দিলাম
“তুমি আমার হাত ধরবে…”
নিষাদ তখনও তাকিয়ে আছে…
“দেখছো না সবার মা হাতে চুড়ি পরে আছে আর বাবারা ঘড়ি পরে আছে… তোমার যখন মা’র হাত ধরতে ইচ্ছা করবে তখন তুমি আমার চুড়ি পড়া ডান হাতটা ধরবে… আর যখন বাবার হাত ধরতে ইচ্ছা করবে তখন আমার ঘড়ি পড়া বা’হাত ধরবে…”
নিষাদ আমার চোখ থেকে চোখ সরিয়ে ঘড়ি পড়া হাতটা শক্ত করে ধরল…
নিষাদ এর বাবা হতে চাওয়া মেহের আফরোজ শাওন কে বাবা দিবসের শুভেচ্ছা…
২.
“মা… আমার মোচ হবে কখন..?”
“বড় হলে হবে বাবা…”
কয়েকদিন পর
“মা, এখন তো আমি একটু বড় হয়েছি.., এখন কি আমার একটু একটু মোচ হয়েছে..?”
গোঁফ হওয়া নিয়ে নিষাদের আগ্রহের কারন জিজ্ঞেস করায় সে উত্তর দিল
“আমার যখন মোচ হবে, তখন আমি নিনিতের বাবা হয়ে যাব… নিনিতকে স্কুলে নিয়ে যাব.., অ্যামেরিকায় বেড়াতে নিয়ে যাব.., আর নিনিতের যা কিনতে ইচ্ছা করবে পকেট থেকে মানিব্যাগ বের করে সব কিনে দিব…”
দিন বিশেক আগে সে আয়নার সামনে দাড়িয়ে আছে দেখে আমি বললাম
“আরে নিষাদ..!!! দেখো… তোমার তো একটু একটু মোচ হয়েছে মনে হয়…”
নিষাদ আয়নার আরও কাছে মুখ নিয়ে ঠোঁটের উপরের পশমের রেখা দেখে মুচকি হাসল…
সন্ধ্যায় শুনি সে নিনিতকে বলছে
“নিনিত… এখন থেকে তুমি আমাকে বাবা ডাকবে হ্যাঁ…”
তারপর থেকে নিনিতের কথাবার্তা
“আইয়া (ভাইয়া) বাবা.., আমাকে দাঁত বাস (ব্রাশ) করায়ে দাও…”
“আইয়া বাবা.., আমাকে হাত ধোয়ায়ে দাও…”
“আইয়া বাবা.., আমাকে মজার পানি (ঠাণ্ডা পানি) দাও…”
নিনিত এর বাবা হতে চাওয়া সাত বছর চার মাস বয়সী নিষাদ হুমায়ূন কে বাবা দিবসের শুভেচ্ছা…
৩.
গতকাল রাত… নিনিতের সাথে নিষাদের কথোপকথন…
নিষাদ: আইয়া বলতো.., বাবা এখন কোথায়..?
নিনিত: তোথায় (কোথায়) আইয়া বাবা..?
নিষাদ: এই তো আমাদের পাশেই বসে আছে… তুমি আর আমি যা যা করছি বাবা সব দেখতে পাচ্ছে… শুধু আমরা বাবা কে দেখতে পাচ্ছি না…
সারাক্ষণ অদৃশ্য হয়ে ট্যানটা ঘ্যাংগার পাশে বসে থাকা হুমায়ূন আহমেদ কে বাবা দিবসের শুভেচ্ছা…
৪.
আর আমার বাবা…?
তাঁকে কোনও শুভেচ্ছা দিবো না…
আমাদের তিনজনের (নিষাদ, নিনিত আর আমি) ছোট্ট পরিবারের বাবা হয়ে যাবার জন্য পৃথিবীর সব শুভেচ্ছাও কম পড়ে যাবে…
তাঁর জন্য পরম করুনাময়ের কাছে শুধুই প্রার্থনা…
সূত্র: ফেসবুক