জাকির হোসেন। বয়স ৩৩। হত্যা মামলার আসামি। অভিযোগ প্রমাণ হওয়ায় তাকে ৩০ বছরের সশ্রম কারাদণ্ডের আদেশ দিয়েছেন ঢাকার একটি আদালত।
মঙ্গলবার বিকাল ৪টায় ঢাকার মহানগর দায়রা জজ আদালত প্রাঙ্গণে খাবার দেওয়া নিয়ে দায়িত্বরত পুলিশ সদস্যদের সাথে ধস্তাধস্তিতে গুরুতর আহত হন আসামি জাকির। সারাদিন না খেয়ে ছিলেন বলে তার মা খাবার দিতে আসেন। নিয়ম না থাকায় পুলিশ সদস্যরা খাবার দিতে বাধা দেন। জাকির তখন ক্ষেপে গিয়ে প্রিজনভ্যানের গ্লাস হাত দিয়ে ভেঙ্গে নিজ শরীরে গুরুতর জখম করে ফেলেন। পুলিশ বাধা দিতে গেলে আসামির সাথে পুলিশের সংঘর্ষ বাধে।
জাকিরের মা হালিমা বেগম বলেন, “আমার ছেলেকে খাবার খাওয়াইতে চাইলে পুলিশ টাকা দাবি করে। টাকা দিতে না চাইলে গিয়াসউদ্দিন নামের পুলিশ সদস্য জানিয়ে দেয়, টাকা না দেওয়া হলে খাবার খাওয়াইতে দেওয়া হবে না। এরপরও প্রিজনভ্যানে খাবার খাওয়াইতে গেলে আরাফাত নামের এক পুলিশ আমাকে লাথি মেরে আমার ছেলেকে পেটায়। এতে জাকিরের শরীরের বিভিন্ন জায়গায় আঘাতসহ কপাল ও ডান হাতের কনুই ফেটে রক্ত পড়তে থাকে।”
পুলিশ সদস্য গিয়াস উদ্দিন বলেন, “আমি তাকে কোনো মারধর করিনি। সে প্রিজনভ্যান থেকে পড়ে যায়। এতে তার মাথা ফেটে যায়।”
তিনি আরো বলেন, “জাকিরের বিরুদ্ধে একাধিক মামলা রয়েছে। সে একটা মামলার সাজাপ্রাপ্ত আসামি। সে প্রিজনভ্যানে গাজা নিতে চেয়েছিল।”
খাবার দেওয়ার বিষয়ে তিনি বলেন, “আদালতে আসলে কোনো আসামিকে বাইরের খাবার দেওয়ার নিয়ম নেই। তাই খাবার দিতে দেওয়া হয়নি। এতে আসামি পুলিশের ওপর ক্ষিপ্ত হয়ে হামলা চালায়।”
ঢাকার সিএমএম আদালতের অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার আনিসুর রহমান বলেন, “এ ধরনের ঘটনা আমি শুনেছি, সত্যতা যাচাই করা হচ্ছে।”
তিনি আরোও বলেন, “প্রতিদিন ঢাকার নিম্ন আদালতে কাশিমপুর ও ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার হতে চারশত আসামিকে বিচারের জন্য আনা হয়। এছাড়া নতুন আসামি হিসেবে প্রতিদিন প্রায় দুইশত আসামিকে আনা হয়। এসব আসামির জন্য প্রতিদিন খুব অল্প পরিমাণে খাবার বরাদ্দ থাকে। জন প্রতি ১০০ গ্রাম চিড়া ও ২০ গ্রাম গুড় পায় তারা। তাও অনেকটা নিম্নমানের। আসামিরা এ খাবার খেতে চায় না।”
তিনি বলেন, “প্রতিদিন কারাগার হতে আসামিরা ভোর ৫টায় আদালতের উদ্দেশে রওনা দেয়। আর ফিরে যায় রাত্র ৮ টায়। এর মাঝে তাদের খাবার ওই সামান্যতম চিড়া আর গুড়। তাই প্রায় ওই দিনের খাবার তাদের খাওয়া হয় না।”
তিনি আরেও বলেন, “গত মাসে সিএমএম আদালতের হাজত খানায় এক আসামি খাবার না পেয়ে সেলের ভিতরে বাথরুমের দরজায় লোহার সাথে হাত দিয়ে রগ কেটে আত্মহত্যার চেষ্টা করেন। পরে এক পুলিশ সদস্য তাকে উদ্ধার করে চিকিৎসার জন্য ঢাকা মেডিকেলে নিয়ে যায়। এ খাবারের বিষয়ে সংশ্লিষ্ট জেল কর্তৃপক্ষ সুনজর দিলে আসামিরা তাদের পর্যাপ্ত খাবার পাবে।”
এ বিষয়ে মানবাধিকারকর্মী এডভোকেট সৈয়দ নাজমুল হুদা পরিবর্তনকে বলেন, “মানুষের মৌলিক অধিকারের মধ্যে খাদ্য অন্যতম। যত বড় অপরাধী হোক না কেন তার খাবারের অধিকার রয়েছে। আসামিরা কারাগারে থাকুক আর হাজতখানায় থাকুক দুটিই সরকারের হেফাজত। দুটি জায়গায় আসামির পর্যাপ্ত খাবার যোগান দেওয়া সরকারের দায়িত্ব। আর তা না হলে মানবধিকারের চরম লঙ্ঘন হবে।”