ইরাকে চলমান সহিংস পরিস্থিতিতে বিভিন্ন স্থানে আটকে পড়া বাংলাদেশির নিরাপদ এলাকায় সরিয়ে নেয়া হচ্ছে। গত দু সপ্তাহে আল কায়েদা সমর্থিত সুন্নি বিদ্রোহীরা দেশটির গুরুত্বপূর্ণ এলাকা দখল করে নেয়ার পর সেখানে ভয়াবহ পরিস্থিতি বিরাজ করছে।
এখন পর্যন্ত ইরাকের রাজধানী বাগদাদের দিকেই এগিয়ে আসছে বিদ্রোহী যোদ্ধারা।
প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের সচিব ড. খন্দকার শওকত হোসেন ইরাকে বাংলাদেশিদের নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নিয়ে যাওয়ার খবর নিশ্চিত করেছেন।
অন্যদিকে সুন্নিদের দখলে থাকা সংঘাতপূর্ণ মসুল শহরের বিভিন্ন ভবনে আটকে থাকা ৫১ বাংলাদেশিকে অপেক্ষাকৃত নিরাপদ স্থান কুর্দিস্থানে সরিয়ে নেওয়া হচ্ছে বলেও জানান মন্ত্রী।
খবরে বলা হয়, তিকরিত ও মসুল ইরাকের গুরুত্বপূর্ণ প্রাদেশিক শহর। গুরুত্বপূর্ণ এই দুই শহরই এখন সুন্নি বিদ্রোহীদের দখলে। তবে সরকারী বাহিনীর সঙ্গে মাঝে মধ্যেই সংঘর্ষ হচ্ছে প্রাদেশিক শহর দুটিতে।
সংঘর্ষের সময় তিকরিতের দুটি ফাস্টফুড দোকানে আটকে পড়া ২১ বাংলাদেশি কর্মী অপেক্ষাকৃত নিরাপদ স্থানে আশ্রয় নিয়েছেন। বাংলাদেশি এসব কর্মী খেয়ে, না খেয়ে বেশ কিছু দিন ধরে ওই দোকানে মৃত্যুর মুখোমুখি অবস্থানে ছিলেন।
বাংলাদেশের ওই ২১ কর্মীদের একজন হলেন মেহেরপুরের গাংনী উপজেলার মো. পিন্টুর মামা সাইফুল ইসলাম। সাইফুল ইরাকের রাজধানী বাগদাদে অবস্থান করছেন।
সাইফুল সেখানে বাংলাদেশি শ্রমিকদের এমন নাজুক অবস্থার কথা জানান। নওগাঁ জেলার মহাদেবপুর উপজেলার চকগোবিন্দপুর গ্রামের মোঃ শাহজাহান আলীর ছেলে রুবেল হাসানও সেখানকার অবস্থার কথা জানিয়েছেন।
রুবেল জানান, রেস্টুরেন্ট আটকে পড়া বাংলাদেশিরা এখন তিকরিত মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় ও হাসপাতালে আশ্রয় নিয়েছেন।
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কসবার হাজী ফয়জুল ইসলাম জানান, বর্তমানে ওই মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে মোট ৩৭ জন বাংলাদেশি আশ্রয় নিয়েছেন। এছাড়া সেখানে ৩৪ জন ভারতীয় নার্সও রয়েছেন।
ফয়জুল ইসলাম বলেন, “তিকরিত শহর পুরোটাই সুন্নিদের দখলে। হাসপাতালেও সুন্নিদের সশস্র লোকজন আছে। তবে, তারা আমাদের কোনো সমস্যা করছে না। হাসপাতালটিকে নিরাপদ বলা যাবে না। মাঝে মধ্যেই তিকরিত শহর নিয়ন্ত্রণ নিতে সেনাবাহিনী হেলিকপ্টার দিয়ে বোম্বিং করছে। নিরাপত্তার জন্য আমরা হাসপাতালের আন্ডার গ্রাউন্ডে অবস্থান করছি।“
তিনি বলেন, “আমরা খুবই চিন্তার মধ্যে আছি। রাস্তায় গাড়ি নেই, দোকানপাট সব বন্ধ। খাবার ও পানির সঙ্কটও প্রকট হয়ে উঠছে। গ্যাস নেই, ইন্টারনেট ও মোবাইল সংযোগ বন্ধ হয়ে গেছে। আমাদের সাথে হাসপাতালের বড় কর্মকর্তাদের কথা হয়েছে। তারা এখন নিরাপদে আশ্রয় নিয়েছেন। তারা জানিয়েছেন, জাতিসংঘের হস্তক্ষেপ ছাড়া এখান থেকে আমাদের উদ্ধার হওয়া সম্ভব নয়।”