ভুটানে মোদি ঢাকার জন্য বার্তা

modiনরেন্দ্র মোদির ‘বিফরবি’ কূটনীতির তাৎপর্য নিয়ে ভারতের দক্ষিণ এশীয় প্রতিবেশীরা ভাবতে বসেছেন। ঢাকা  ভারতের প্রথম পররাষ্ট্রমন্ত্রী সুষমা স্বরাজের প্রথম সফরের জন্য অপেক্ষা করছে। মোদি নিজেই তার সদ্যসমাপ্ত ভুটান সফরে গভীরভাবে সন্তুষ্ট। তিনি মনে করেন এটা হলো বিফরবি। এর মানে ‘ভারত ফর ভুটান অ্যান্ড ভুটান ফর ভারত।’ এটা লক্ষণীয় যে, ভারত কোনদিন ভুটানের রাজতন্ত্র নিয়ে কোন মন্তব্য করেনি। ভারত অন্তত প্রকাশ্যে বলেনি বা পৃষ্ঠপোষকতা দেয়নি যে ভুটানের রাজতন্ত্রের অবসান হোক। কিন্তু এবারে মোদি স্পষ্ট বলছেন যে, ভুটান গত সাত বছরের ব্যবধানে রাজতন্ত্র থেকে যে ভাবে নিজকে গণতন্ত্রে উত্তরণ ঘটিয়েছেন সেটা প্রশংসনীয়। তবে ভুটানের সংসদের যৌথ অধিবেশনে ভারতের প্রধানমন্ত্রী যা ভুটানকে উদ্দেশ্য করে বলেছেন তাতে মোদি সরকারের প্রতিবেশী ডকট্রিন ফুটে উঠেছে কিনা সেটা অনেক বিশ্লেষকই খতিয়ে দেখতে চাইবেন। কারণ সাধারণভাবে প্রচলিত প্রবাদ হচ্ছে তুমি আমার জন্য এক কদম হাঁটলে তোমার জন্য আমি তিন কদম হাঁটবো। কিন্তু ভারতের নয়া প্রধানমন্ত্রী মোদি বলেছেন, ‘আপনি যদি আমার জন্য কয়েক কদম হাঁটেন তাহলে আমিও আপনার জন্য হাঁটবো।’ পেশাদার কূটনীতিকদের মতে এতে নতুনত্ব কিছু নেই। এটা হলো গিভ অ্যান্ড টেক ডিপ্লোমেসির দর্শন। প্রতিবেশীদের জন্য এটা কোন বিশেষ ছাড় দেয়ার ইঙ্গিতবহ নীতি নয় বলেই প্রতীয়মান হয়। ভারতের সাবেক প্রধানমন্ত্রী আই কে গুজরাল তার বিখ্যাত প্রতিবেশী নীতি যা গুজরাল ডকট্রিন হিসেবে ব্যাপক পরিচিতি লাভ করেছিল তার সার কথা কিন্তু এটা ছিল না। সেখানে গুজরাল বলেছিলেন, ভারত একটি জায়ান্ট নেইবার বা বৃহৎ প্রতিবেশী হিসেবে ক্ষুদ্র প্রতিবেশীদের ওপর তার বিশেষ করণীয় আছে। সে জন্য তিনি গিভ অ্যান্ড টেক নীতি পরিহার করে, কিছু পাওয়ার আশা না করেই দেয়ার দায়িত্ব পালনের অঙ্গীকার করেছিলেন। মোদি ডকট্রিনের সঙ্গে গুজরাল ডকট্রিনের এটাই আসল তফাৎ বলে কূটনীতিকদের অনেকে মনে করছেন। অবশ্য আবার এটাও সত্য যে, মোদি খুব জোর দিয়েই বলেছেন, প্রতিবেশীদের প্রতি দায়িত্ব পালনে ভারতের সচেতনতা রয়েছে। আর সে কারণেই তিনি তার শপথ গ্রহণের অনুষ্ঠানে সার্ক নেতাদের দিল্লিতে আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন। মোদির কথায়, ‘এটা একটি বাড়তি দীপ্তি।’   
 মোদি তার লিখিত ভাষণে বলেছেন, সরকার পরিবর্তনের কারণে ভারতের সঙ্গে ভুটানের অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ সম্পর্কে কোন চিড় ধরেনি। তার কথায়, একটি শক্তিশালী, সমৃদ্ধ ভারত তার প্রতিবেশীদের জন্য মঙ্গলজনক। একটি শক্তিশালী ভুটান মানে একটি শক্তিশালী ভুটান।
থিম্পু থেকে রয়টার্সের সঞ্জীব মিগলানি মন্তব্য করেছেন, ভারতের প্রতিবেশী পাকিস্তান, নেপাল, শ্রীলঙ্কা ও বাংলাদেশ চীনের সঙ্গে ক্রমবর্ধমানহারে অর্থনৈতিক ও অবকাঠামোগত সম্পর্কে জড়িয়ে পড়ছে।  এতে ক্রমশ পিছিয়ে পড়া ভারতের অনুভূতিতে বিচ্ছিন্নতা বোধ এসেছে। নিজকে সে প্রতিবেশীদের দ্বারা বেষ্টিত হয়ে পড়ছে বলে মনে করছে।
কিন্তু অভিজ্ঞ কূটনৈতিক মহল বলছেন যে, ভুটান সফরে মোদির প্রতিবেশী নীতিরই প্রতিফলন ঘটলে আসলে ভুটানকে ভারতের নতুন করে জয় করার কিছু নেই। ভুটানের সঙ্গে তার কখনওই বনিবনা নিয়ে সমস্যা হয়নি। অন্য যে কোন প্রতিবেশীকে জয় করাটা হবে তার সাফল্যের পরিমাপক। ভারতের প্রধানমন্ত্রী সেখানে নতুন জলবিদ্যুৎ প্রকল্প উদ্বোধন করেছেন। কিন্তু নেপাল, ভুটান ও বাংলাদেশকে নিয়ে আঞ্চলিক সহযোগিতায় বহুপক্ষীয় বাতাবরণে বিদ্যুৎ প্রকল্প নির্মাণের কথা বহুকাল ধরে অনুচ্চারিত থাকছে। 
এডিবি তার এক সাম্প্রতিক প্রতিবেদনে বলেছে, বাংলাদেশ ও ভারত যে ট্রান্সমিশন লাইন স্থাপন করেছে সেই একই লাইন দিয়ে ভুটানের বিদ্যুৎ বাংলাদেশে আসবে। একসময় সমন্বিত আঞ্চলিক বিদ্যুৎ গ্রিডের কথা আলোচনার টেবিলে ছিল।     

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *