‘সমর্থন চাও, সমর্থন দেবো। ক্ষমা চাও ক্ষমা করবো, বেদনা দাও সহ্য করবো, কিন্তু আর কত?’ গতকাল বাংলাদেশে ক্রিকেটের সমর্থকরা মানববন্ধন করেছেন দলের ভরাডুবিতে নিজেদের ক্ষোভ প্রকাশ করে। মিরপুর শেরে বাংলা স্টেডিয়ামের মূল ফটকের সমনে সেই মানববন্ধনে এমনই একটি প্ল্যাকার্ড নিয়ে হাজির হয়েছিলেন এক ক্রিকেট ভক্ত। তার কিছুক্ষণ আগেই বাংলাদেশ জাতীয় দলের ছয়জন ক্রিকেটার এসেছিলেন অনুশীলনে। মুশফিকুর রহীম, তামিম ইকবাল, মুমিনুল হক, আবদুর রাজ্জাক, সোহাগ গাজী ও শামসুর রহমান শুভরা নেটে বেশ ঘাম ঝরিয়েছেন। কিন্তু তারা সঙ্গলবার ভারতের বিপক্ষে ৫৮ রানের লজ্জার সঙ্গে হেরেছে তিন ম্যাচের সিরিজটিও। হাতে এক ম্যাচ বাকি রেখে মিরপুর শেরে বাংলা স্টেডিয়ামে গোটা বাংলাদেশকে লজ্জায় ডুবিয়ে ভারত সিরিজ জিতে নিয়েছে। আজ দুপুর ১টায় তৃতীয় ও শেষ ওয়ানডেতে মুখোমুখি হবে বাংলাদেশ। শেষ ম্যাচটি জিততে না পারলে অপেক্ষা করছে আরেকটি লজ্জা। প্রশ্ন শুধু পারবেতো বাংলাদেশ সেই লজ্জা থেকে বের হতে? ভারতের বিপক্ষে ২০০৪ ও ২০০৭ সালে বাংলাদেশ দু’টি সিরিজ দ্বিপক্ষীয় সিরিজ খেলেছিল। যার কোনটিতেই সিরিজ জিততে পারেনি। শুধু মাত্র ২০০৪ সালে একটি দ্বিপক্ষীয় সিরিজে একটি ম্যাচ জিতেছিল বাংলাদেশ। এই পর্যন্ত ২৭ বার ভারতের মুখোমুখি হয়েছে বাংলাদেশ। জয় প্রাপ্তি শুধু তিনটিতে। শেষ ২০১২ সালের এশিয়া কাপে ভারতকে দেশের মাটিতে হারিয়ে ভারতকে। এমন পরাজয়ের পর জাতীয় দলের প্রধান নির্বাচক ফারুক আহমেদ বলেন, ‘আসলে এই হারটাকে ব্যাটসম্যানদের দায়িত্বহীনতার পরিচয়ই বলবো। যদিও উইকেট কঠিন ছিল। কিন্তু যে ২০৬ রানের টাগের্ট ৪০ ওভারে ছিল তা হারার মতো না। আমাদের বেশ কয়েজন ব্যাটসম্যান দায়িত্ব নিয়ে খেলতে ব্যর্থ হয়েছে।’
তিন ম্যাচ সিরিজের প্রথম ওয়ানডেতে বাংলাদেশ ২৭২ রানে করেও বৃষ্টি আইনে হারে ৭ উইকেটে। দ্বিতীয় ওয়ানডেতে মাঠে নামার আগে ঘুরে দাঁড়ানোর কথা বলেও উলটো এসেছে আরেকটি বিভীষিকাময় দিন। সুযোগ এসেছিল। তরুণ পেসার তাসকিন আহমেদ তাজিমের রেকর্ড বোলিংয়ে বাংলাদেশ ভারতকে গুটিয়ে দিয়েছিল ১০৫ রানেই। কিন্তু ভাগ্যের নির্মম পরিহাস ২০১১ সালের বিশ্বকাপের এই মাঠে ৫৮ রানের লজ্জায় ডুবেছিল বাংলাদেশ। সেই দিনটিই যেন ফিরে আসে। ব্যাটসম্যানদের দায়িত্ব জ্ঞানহীন ব্যাটিং গোটা বাংলাদেশের দর্শকদের চোখের জলই শুধু ঝরায়নি হৃদয়ের রক্তক্ষরণ ঘটিয়েছে। গতকাল ভারত থেকে আসা দুই সংবাদ কর্মি প্রেস বঙে বলেন, ‘এবার তোমাদের দেশে যে দলটি এসেছে তা ভারতের দ্বিতীয় সারির দল। এই ক্রিকেটারদের যেতন গোটাতেই ধরি না আমরা। কিন্তু তাদের বিপক্ষে ১০০ রান করতে পারবে না বাংলাদেশ এটা আমরা ভাবতেও পারিনি। মূল অতি আত্মবিশ্বাস আর দায়িত্ব জ্ঞানহীন ব্যাটিংটাই দায়ী।’
গতকাল মাঠে মুশফিক, তামিমরা এলেও আসেনি সাকিব আল হাসান। এছাড়াও আগের দিন ভারতের ৮ উইকেট তুলে নেয়া কোন পেসারও আসেনি অনুশীলনে। ধরাণা করা হচ্ছে আজ একাদশ থেকে বাদ পড়তে পারেন তামিম ইকাল ও নাসির হোসেন। একাদশে ফিরতে পারেন মুমিনুল হক ও শামসুর রহমান শুভ। অনুশীলনে কোন ক্রিকেটারই কথা বলেনি। এমন লজ্জার পরাজয়ের পর যেন কুলুপই এঁটেছিলেন মুখে। আসেনি আরেক ব্যর্থ ক্রিকেটার নাসির হোসেন ও মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ ও জিয়ারউর রহমান। যারা কিনা দলের পরাজয় ঠেকাতে পারতেন ব্যাট হাতে। ৪৪ রানে তৃতীয় উইকেট পতনের পর ব্যাট হাতে চরম দায়িত্বহীনতার পরিচয় দিয়েছেন সাকিব আল হাসান, মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ, নাসির হোসেন ও জিয়াউর রহমান। কিন্তু তাদেরই শেষ ম্যাচের আগে অনুশীলনে দেখা যায়নি। দলের ব্যর্থ তারকা তামিম, নাসিরদের নিয়ে ফারুক আহমেদ বলেন, ‘আসলে দেখেন দলের আরা যে দু’জনের অভিষেক করেছি তারা বেশ ভাল করেছে। আর নাসির, তামিমদের নিয়ে বলবো ওরাতো ফর্মে নেই। ওদের সুযোগও দেয়া হচ্ছে কিন্তু কি করার আছে এখন?’
অন্যদিকে সিরিজে জেতে ফুরফুরে মেজাজে ভারত দল। তবে অনুশীলনে এসেছেন ভারতের চারজন ক্রিকেটার। আজ শেষ ম্যাচে জিততে পারলে ভারতের দ্বিতীয় সারির এই দলের অধিনায়ক সুরেশ রায়না বীরের বেশেই দেশে ফিরবেন বাংলাদেশকে লজ্জায় ডুবিয়ে।