বাংলাদেশকে ব্রিটিশ আইনজীবীদের ছবক ও ধমক

London-Seminar2-311x186বিশ্বের খ্যাতিসম্পন্ন ল‘ ফার্ম হলবর্ন চেম্বার্স অয়োজিত সেমিনারে ব্রিটিশ আইনজীবীরা বলেছেন, বাংলাদেশে নির্বাহী বিভাগ, আইনবিভাগ এবং বিচার বিভাগ এক ব্যক্তির পাপেটে পরিণত হয়েছে। গণতন্ত্র রয়েছে বুলেটের নিশানায়। এই অবস্থা চলতে পারে না। এর বিরুদ্ধে অবস্থান নেয়ার জন্য তারা লিখিতভাবে ব্রিটিশ সরকারের কাছে আবেদন জানাবেন।

বৃহষ্পতিবার লন্ডনে দ্য অনারেবল সোসাইটি অব লিংকন্স ইন-এ আয়োজিত “এওয়ারনেস এন্ড ওয়ার্নিং এব্যাউট বাংলাদেশ“ শীর্ষক সেমিনারে ব্রিটিশ আইনজীবীরা এসব কথা বলেন। সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন হলবর্ন চেম্বারের প্রধান এবং মানবাধিকার ব্যক্তিত্ব ব্যারিস্টার স্টুয়ার্ট স্টিভেন্স।

সেমিনারে বক্তারা বাংলাদেশের বর্তমান সরকারকে অবৈধ উল্লেখ করে এই সরকারের নেতা-মন্ত্রী-এমপিদের সঙ্গে বৃটেনের কোনো ব্যবসা বাণিজ্য থাকলে তার ওপর অবিলম্বে অবরোধ আরোপের দাবি জানান। প্রয়োজনে তাদের বৃটেনে প্রবেশের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপেরও আহবান জানান। সেমিনার শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নেরও জবাব দেন আইনজীবীরা।

বিশ্বে গণতন্ত্র সুশাসন ও মানবাধিকার নিয়ে সোচ্চার এই আইনজীবীরা বলেন, বাংলাদেশের প্রধান একটি রাজনৈতিক দলের নেতা তারেক রহমানের বক্তব্য প্রচার না করার জন্য গণমাধ্যমের প্রতি হুমকি ধামকি প্রমাণ করে দেশটিতে গণতন্ত্র ও বাকস্বাধীনতা নেই। ব্যারিস্টার এ্যান হোওস বলেন, তারেক রহমান সরকারের পক্ষ থেকে প্রমাণহীন অভিযোগ, মিথ্যা প্রোপাগান্ডা এবং রাজনৈতিক প্রতিহিংসার শিকার।

ব্যারিস্টার এ্যান হোওস বাংলাদেশের গনমাধ্যম সম্পর্কে তার লিখিত বক্তব্যে দৈনিক আমার দেশ সম্পাদক মাহমুদুর রহমানের উপর সরকারের অত্যাচার, সাগর-রুনীর হত্যাকান্ডের বিচার না হওয়া প্রসঙ্গ উল্লেখ করে বলেন, বাংলাদেশে বাক ও ব্যক্তি স্বাধীনতা শূন্যের কোঠায়।

মুল প্রবন্ধে ব্যারিস্টার স্টুয়ার্ট স্টিভেন্স বলেন, বাংলাদেশে নির্বাহী বিভাগ, আইনবিভাগ এবং বিচার বিভাগ এক ব্যক্তির পাপেটে পরিণত হয়েছে। বাংলাদেশের বর্তমান সরকার ক্ষমতায় টিকে থাকার জন্য ব্যবহার করছে আইনশৃংখলাবাহিনীকে। দেশটির বিশেষ বহিনী র‌্যাপিড এ্যাকশন ব্যাটালিয়ন-র‌্যাব এখন জনগণের কাছে খুনী বাহিনী হিসেবে পরিচিত।

তিনি র‌্যাবকে অবিলম্বে বিলুপ্তির দাবি জানান। একইসঙ্গে র‌্যাব সম্পর্কে বৃটিশ সরকারকে তাদের অবস্থান স্পষ্ট করারও দাবি জানান।

৫ জানুয়ারির নির্বাচনকে হাস্যকর নির্বাচন উল্লেখ করে ব্যারিস্টার স্টুুয়ার্ট বলেন, সাবেক রাষ্ট্রপতি এরশাদ প্রকাশ্যে বলেছেন, তিনি নিজেই জানেন না কিভাবে তিনি এমপি হয়েছেন। এর চেয়ে হাস্যকর নির্বাচন আর কী হতে পারে? যেই নির্বাচনে জনগণের অংশগ্রহন নেই সেই নির্বাচন বৈধ হতে পারে না। সেই সরকারও বৈধ হতে পারে না।

তিনি বলেন, বাংলাদেশে গণতন্ত্র ও আইনের শাসন দু‘টিই অনুপস্থিত। এমন একটি নির্বাচন যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপিয়ান কমিশনের কাছে গ্রহনযোগ্যতা পায়নি। হাউজ অব কমন্স, মার্কিন সিনেট এবং ইউরোপিয়ান পার্লামেন্টেও একাধিকবার বাংলাদেশের নির্বাচন নিয়ে শুনানি অনুষ্ঠিত হয়েছে। ওইসব শুনানি শেষে সকলের কাছে গ্রহনযোগ্য ও অবাধ নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য আহবান জানানো হয়েছে। কিন্তু বাংলাদেশ সরকার এইসব আহবানকে গুরুত্ব না দিয়ে উল্টো বিরোধীদলীয় নেতাকর্মীদের ওপর হামলা মামলা ও গুম খুন করে ক্ষমতা টিকিয়ে রাখার চেষ্টা করছে।

তিনি এ ব্যপারে বৃটিশ সরকারকে বাংলাদেশে গনতন্ত্র প্রতিষ্ঠায় আরো কঠোর হওয়ার আহবান জানান। তিনি বলেন, সবচেয়ে দুঃখজনক হচ্ছে দেশটিতে আদালত নিরপেক্ষভাবে কাজ করতে পারছে না, বিচারকদের নিয়োগ দেয়া হচ্ছে দলীয় আনুগত্য বিবেচনায়, এমনকি দলীয় আনুগত্যের কারণে খুনের আসামীকেও বিচারক নিয়োগ দেয়ার অভিযোগ রয়েছে।

তিনি বলেন, ‘যারা বাংলাদেশে আইন পেশায় জড়িত তাদের অনেকেই বৃটেনে আইন বিষয়ে পড়াশোনা করেছেন। তারা তাদের আইনী কার্যক্রম ও বিচার প্রক্রিয়ায় দলীয় আনুগত্যের উর্দ্ধে উঠে জুডিশিয়ারিকে সরকারের বিশ্বাসযোগ্যতা অর্জনের চেয়ে জনগনের বিশ্বাসযোগ্যতা অর্জনে সচেষ্ট হবেন বলে আশা করি।’

বাংলাদেশ সম্পর্কে নিজের উদ্বেগের কারণ ব্যাখ্যা করতে গিয়ে ব্যারিস্টার স্টুয়ার্ট বলেন, কমনওয়েলথভুক্ত রাষ্ট্রের সদস্য হিসেবে বাংলাদেশে সুশাসন প্রতিষ্ঠার ব্যাপারে তাদের বক্তব্য দেয়ার যুক্তিসংঙ্গত অধিকার রয়েছে। কারণ গণতন্ত্রহীনতা এবং সুশাসনের অভাব হলে এর প্রভাব উন্নত রাষ্ট্র হিসেবে ব্রিটেনের ওপর পড়ে।

তিনি বলেন, ব্রিটেনের উচিত এমন পদক্ষেপ নেয়া যাতে বাংলাদেশের মানুষ নিজ দেশে নিরাপদে থাকতে পারেন। দেশটিতে অনুষ্ঠিত হতে পারে অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন, প্রতিষ্ঠিত হয় গণতন্ত্র ও আইনের শাসন।

সেমিনারে আরো বক্তব্য রাখেন ব্যারিস্টার এ্যান হোওস, ব্যারিস্টার এস কে কুমার, ব্যারিস্টার ডেভিড রেকটার, ব্যারিস্টার এন্ড সলিসিটর এ কে এম কামরুজ্জামান, ব্যারিস্টার আয়েশা কোরেশী, ব্যারিস্টার টি আই এম ওয়েলচ, ব্যারিস্টার ক্রিস্টিলি, ব্যারিস্টার ফ্রাংকো, ব্যারিস্টার মারিয়া গঞ্জালেস, ব্যারিস্টার এ. গ্যালাহার এবং ব্যারিস্টার হুসেইন শামসুজ্জোহা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *