ইয়াবা পাচারের রুট পরিবর্তন করেছে মাদক ব্যবসায়ীরা। আগে মায়ানমার থেকে ইয়াবার চালান দক্ষিণ চট্টগ্রাম দিয়ে সড়কপথে বন্দরনগরীতে ঢুকলেও সাম্প্রতিক সময়ে রুট ও কৌশল পরিবর্তন করেছে ব্যবসায়ীরা।
সড়কপথে পুলিশের নজরদারি বেড়ে যাওয়ায় মাদক ব্যবসায়ীরা এখন নদী ও সাগরপথে ইয়াবা পাচার করছে। আর চট্টগ্রামকে ট্রানজিট পয়েন্ট হিসেবে ব্যবহার করে ব্যবসায়ীরা এসব ইয়াবা ছড়িয়ে দিচ্ছে দেশের সর্বত্র। আর ইয়াবা পাচারের ক্ষেত্রে তারা ব্যবহার করছে সাগরে যাওয়া মাছ ধরার ট্রলার এবং মাঝিমাল্লাদের।
গত ২০ জুন নগর গোয়েন্দা পুলিশ নগরীর পাথরঘাটা ফিশারিঘাট এলাকা থেকে ৩০ হাজার ইয়াবাসহ আকতার ও আজম নামে দুজন ইয়াবা বিক্রেতাকে আটক করেন। মূলত তাদের কাছ থেকেই প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে ইয়াবা পাচারের নতুন রুটের সন্ধান পায় পুলিশ।
নগর পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার (অপরাধ ও অভিযান) বনজ কুমার মজুমদার বলেন, আগে ইয়াবা ব্যবসায়ীরা কক্সবাজার থেকে দক্ষিণ চট্টগ্রাম হয়ে শাহ আমানত সেতু অথবা কালুরঘাট সেতু দিয়ে ইয়াবা নিয়ে নগরীতে আসত। এখন দেখা যাচ্ছে তারা নৌপথে ইয়াবা আনছে। এক্ষেত্রে তারা ফিশারিঘাট কিংবা অন্যান্য স্থানে মাছ নামানোর কথা বলে কৌশলে ইয়াবা নামাচ্ছে।
নগর গোয়েন্দা পুলিশের সহকারী কমিশনার (বন্দর) আনোয়ার হোসেন বলেন, গত ৪-৫ মাস ধরে ইয়াবা ব্যবসায়ীরা নৌরুট ব্যবহার করছে। এখন সড়কপথে এক-দেড় হাজারের বেশি ইয়াবা আসেনা। আর ফিশিং ট্রলারে প্রতিদিন ইয়াবা আসছে হাজার হাজার।
পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, নগর পুলিশের কাছে একসময় মাদক পাচারের রুট হিসেবে চিহ্নিত ছিল দুটি। এগুলো হচ্ছে, মায়ানমার থেকে বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি হয়ে দক্ষিণ চট্টগ্রাম দিয়ে শাহ আমানত সেতু কিংবা কালুরঘাট সেতু অথবা মায়ানমার থেকে কক্সবাজারের টেকনাফ হয়ে দক্ষিণ চট্টগ্রাম দিয়ে শাহ আমানত সেতু কিংবা কালুরঘাট সেতু। কিন্তু গত ২০ জুন নগরীতে ৩০ হাজার ইয়াবা উদ্ধারের পর পুলিশের ধারণা পাল্টে গেছে।
সূত্রমতে, মাদক ব্যবসায়ীরা এখন নাইক্ষ্যংছড়ি সীমান্ত দিয়ে তেমন ইয়াবা আনছেনা। কিছু চালান ঢুকলেও সেগুলো চন্দনাইশ, পটিয়া কিংবা বোয়ালখালী পর্যন্ত সড়কপথে এনে নদীপথে সাগরে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। আর মিয়ানমার থেকে সেন্টমার্টিন হয়ে যেসব বড় বড় ইয়াবার চালানগুলো ঢুকে পড়ছে কর্ণফুলী নদীতে এবং সাগরপথে দেশের বিভিন্ন স্থানে।
নগর গোয়েন্দা পুলিশের সহকারী কমিশনার (বন্দর) আনোয়ার হোসেন বলেন, আমাদের কাছে তথ্য আছে, নদী এবং সাগরপথে আসা ইয়াবার চালান খালাস করা হয় চট্টগ্রামের বিভিন্ন নৌঘাটে। নদীপথে মিরসরাই, ফেনী কিংবা অন্যান্য এলাকায়ও নিয়ে গিয়ে ইয়াবা খালাস করা হয়।
সূত্র জানায়, অনুসন্ধানে পুলিশ তথ্য পেয়েছে, ফিশারিঘাটকেন্দ্রিক কিছু মাছ ধরার নৌকা, ট্রলার ইয়াবা পাচারের কাজে ব্যবহৃত হচ্ছে। এক্ষেত্রে নৌকা কিংবা ট্রলারের মালিক, মাঝি, মাদক ব্যবসায়ী এবং মায়ানমারের ইয়াবা সরবরাহকারীদের কয়েকটি শক্তিশালী সিন্ডিকেট গড়ে উঠেছে।
মায়ানমার থেকে ইয়াবা সংগ্রহের কিছু কৌশলের কথাও জেনেছে নগর গোয়েন্দা পুলিশ। সূত্রমতে, মায়ানমার থেকে আসা ইয়াবা চার দফা হাতবদল হয়।
মাছ ধরার ট্রলার সেন্টমার্টিনে যাবার পর মিয়ানমার থেকে ইয়াবা নিয়ে আসা নৌকা কিংবা ট্রলার এর কাছকাছি দাঁড়ায়। মায়ানমারের পার্টি বাংলাদেশি ট্রলার কিংবার নৌকার মাঝির কাছে ইয়াবার প্যাকেট সরবরাহ করে। আবার বাংলাদেশী ট্রলারটি সেন্টমার্টিন পার হয়ে নিরাপদ স্থানে এসে আরেকটি ট্রলারে ইয়াবাগুলো তুলে দেয়। শেষ ট্রলারটি চট্টগ্রাম কিংবা অন্যান্য স্থানে এসে বিক্রেতাদের কাছে সেগুলো খালাস করে। এরপর এসব ইয়াবা ছড়িয়ে পড়ে সেবনকারী এবং খুচরা বিক্রেতাদের হাতে।
নগর গোয়েন্দা পুলিশের সহকারী কমিশনার (বন্দর) আনোয়ার হোসেন বলেন, মাছ ধরার অধিকাংশ ট্রলার কিংবা নৌকায় জেলে-মাঝিমাল্লার আড়ালে ইয়াবা ব্যবসায়ীদের লোক থাকে। হাত বদলের সময় ইয়াবার সাংকেতিক নাম থাকে ‘পার্টস’। নৌ রুটে কোন সংস্থা কিংবা অন্য কোন ট্রলারের লোকজন ইয়াবার বাক্সগুলো সম্পর্কে জানতে চাইলে তারা সেগুলো পার্টস বলে জানায়।
২০ জুন ৩০ হাজার ইয়াবাসহ দুজন আটকের ঘটনায় নগরীর কোতয়ালী থানায় একটি মামলা দায়ের হয়েছে। আটক দুজনকে পুলিশ তিনদিনের রিমান্ডে এনে জিজ্ঞাসাবাদ করছে।
নগর পুলিশের কোতয়ালী জোনের সহকারী কমিশনার শাহ মো.আব্দুর রউফ বলেন, দুই ইয়াবা বিক্রেতাকে রিমান্ডে জিজ্ঞাসাবাদের মাধ্যমে সাগরপথে ইয়াবা পাচারের রুট, এর সঙ্গে কারা কারা জড়িত, গডফাদার কারা তা জানার চেষ্টা করছি।