ধর্মপ্রাণ মুসলিমদের কাছে পবিত্র রমজানের গুরুত্ব অনেক। ছোট-বড়, নারী-পুরুষ ভেদে প্রায় সকল মুমিন মুসলমান রোজা রাখেন। রমজান এলেই সবার মধ্যেই রোজা রাখার প্রবণতা লক্ষ্য করা যায়। কিন্তু আমাদের এই প্রবণতা কি ইসলামী শরীয়াহ মেনে চলছে, নাকি চলছে না? আসুন জেনে নেয়া যাক আমরা সাধারণত কি কি ভুল করে থাকি রোজা পালনে..
১. রমজানকে প্রথাগত অনুষ্ঠান মনে করা
আমাদের অনেকের কাছে রমজান একটি প্রথাগত অনুষ্ঠানে রূপ লাভ করেছে। তার আধ্যাত্মিকতা হারিয়ে ইবাদাতের বদলে আমরা সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত উপোস থাকি শুধুমাত্র। আমরা ভুলে যাই যে এই সময়টা আমাদের অন্তর ও আত্মাকে সকল প্রকার খারাপ কাজ থেকে পরিশুদ্ধ করার জন্য দোয়া করতে এবং আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাইতে হবে। সকল প্রকার পানাহার থেকে বিরত থাকি, কিন্তু সেটা কেবল লৌকিকভাবেই।
আল্লাহর রাসূল (সাঃ) বলেছেন, “জিবরাঈল (আঃ) আমাকে বলেছেন, আল্লাহ্ ওই ব্যক্তির নাক মাটিতে ঘষুন যার নিকট রমজান আসল এবং তার গুনাহসমূহ মাফ হলো না, এবং আমি বললাম, আমিন। তারপর তিনি বললেন, আল্লাহ ওই ব্যক্তির নাকও মাটিতে ঘষুন যে জীবদ্দশায় তার পিতামাতার একজনকে অথবা উভয়কে বৃদ্ধ হতে দেখলো এবং সে জান্নাতে প্রবেশ করার অধিকার রাখলো না তাদের সেবা করার মাধ্যমে, আর আমি বললাম, আমিন।
অতঃপর তিনি বললেন, আল্লাহ্ ওই ব্যক্তির নাক মাটিতে ঘষুন যার উপস্থিতিতে যখন আপনার নাম উচ্চারণ করা হয় তখন সে আপনার প্রতি সালাম বর্ষণ করে না আর আমি বললাম, আমিন।”(তিরমিযী, আহমাদ, এবং অন্যান্য_আলবানী কর্তৃক সহীহকৃত)
২. অতিমাত্রায় পানাহারের ব্যাপারে চাপে থাকা
আমাদের অনেকের ক্ষেত্রে, রমজান মাসের পুরোটাই খাবার ঘিরে আবর্তিত হয়। সালাত, কুরআন তিলাওয়াত ও অন্যান্য ইবাদাতের ব্যাপারে যত্নশীল হওয়া বদলে আমরা পুরোটা দিন কেবল ব্যস্ত থাকি রান্নাবান্না, কেনাকাটা এবং খাওয়া-দাওয়া নিয়ে। আমাদের চিন্তা ভাবনার পুরোটা জুড়েই থাকে ‘খাওয়া-দাওয়া।
যার দরূন আমরা রোজা থাকার মাসকে ভোজের মাসে পরিণত করেছি। ইফতারের সময়ে আমাদের টেবিলে পুঞ্জীভূত নানাপদী খাবার, মিষ্টান্ন এবং পানীয়ে পরিপূর্ণ।
পক্ষান্তরে, আমরা রামাদানের মুখ্য উদ্দেশ্য ভুলে যাচ্ছি, আর এভাবে আমাদের লোভ আর প্রবৃত্তির অনুসরণ বাড়তে থাকে। এটাও একধরনের অপচয় এবং সীমালঙ্ঘন।
এ বিষয়ে কুরআনে বর্ণিত আছে, “তোমরা খাও এবং পান করো, এবং কোনো অবস্থাতেই অপচয় করো না, আল্লাহ্ তাআলা কখনোই অপচয়কারীদের পছন্দ করেন না ।”(সূরা আ’রাফঃ৩১)
৩. মাত্রাতিরিক্ত খাওয়া-দাওয়া
কিছুসংখ্যক লোক সেহরীর সময়ে অতিমাত্রায খাদ্য গ্রহণ করে থাকে। কারণ তারা মনে করে সারা দিন ক্ষুধার্ত অনুভব না করার এটাই একমাত্র পথ। আর কিছুসংখ্যক রয়েছেন যারা ইফতারের সময় এমনভাবে খান যাতে সারাদিন না খাওয়ার অভাব একবারেই মিটিয়ে নেয়ার চেষ্টা করেন। এটা সম্পূর্ণরূপে সুন্নাহ্ বিরোধী কাজ।
পরিমিতিবোধ সব কিছুর চাবিকাঠি। রাসূল (সাঃ) বলেছেন, “আদম সন্তান তার উদর ব্যতীত আর কোনো পাত্রই এতো খারাপভাবে পূর্ণ করে না, আদম সন্তানের পৃষ্ঠদেশ সোজা রাখার জন্য এক মুঠো খাবারই যথেষ্ট। যদি তোমাদেরকে উদর পূর্ণ করতেই হয়, এক তৃতীয়াংশ খাবার দ্বারা, এক তৃতীয়াংশ পানি দ্বারা আর অবশিষ্ট এক তৃতীয়াংশ বায়ু দ্বারা পূর্ণ করো।”(তিরমিযী, ইবনে মাজাহ্, আলবানী কর্তৃক সহীহ্কৃত)
অতিরিক্ত খাবার গ্রহণ একজন মানুষকে আবশ্যকীয় অনেক আমল এবং ইবাদাত হতে দূরে সরিয়ে নেয়, তাকে অলস করে তোলে এবং অন্তরকে বধির করে ফেলে।
৪. সারা দিন ঘুমিয়ে কাটানো
আমাদের অনুধাবন করার পূর্বেই এই মাগফিরাত ও মুক্তির মাস শেষ হয়ে যাবে। আমাদেরকে চেষ্টা করা উচিত এই পবিত্র মাসের প্রতিটি মূহুর্ত আল্লাহর ইবাদাতে কাটানোর, যাতে করে আমরা এই মাসের সর্বোচ্চ সওয়াব হাসিল করতে পারি। অনেকে আছেন যারা রমজানের দিনগুলি ঘুমিয়ে, ভিডিও গেমস্ খেলে অতিবাহিত করে, অথবা জঘন্যতম হল টিভি দেখা, ছবি দেখা এমনকি গান শোনা পর্যন্ত। আল্লাহকে মান্য করার চেষ্টা করা হয় তাকে অমান্য করার মাধ্যমে।
৫. রোজা রাখা অথচ খারাপ কাজ বর্জন না করা
অনেকে রোজা রাখে কিন্তু তারা মিথ্যাচার, অভিশাপপ্রদান, মারামারি, গীবত ইত্যাদি বর্জন করে না। তারা রোজা রাখার উদ্দেশ্য কেবলমাত্র পানাহার থেকে বিরত নয়। আল্লাহর প্রতি তাকওয়া(পরহেজগারী) অর্জন অনুধাবন না করে রোজা রাখে। তারা প্রতারণা, চুরি, হারাম চুক্তি সম্পাদন, লটারির টিকেট ক্রয়, মদ বিক্রি, যিনা ইত্যাদিসহ যাবতীয় অননুমোদিত কর্মকান্ড বর্জন করে না।
কুরআনে বর্ণিত আছে, “হে মানুষ, তোমরা যারা ঈমান এনেছো! তোমাদের ওপর সাওম ফরজ করা হয়েছে যেমনটি করা হয়েছিলো তোমাদের পূর্বপুরূষদের ওপর যাতে করে তোমরা তাকওয়া অর্জন করতে পারো।”(সূরা বাকারাঃ১৮৩)
রাসূল (সাঃ) বলেছেনঃ “যে ব্যক্তি মিথ্যা কথা বলা ও এর ওপর আমল করা বর্জন করে না ও মূর্খতা পরিহার করে না, তার পানাহার হতে বিরত থেকে উপবাস করা আল্লাহর নিকট প্রয়োজন নেই।”(বুখারী)
৬. ধূমপান
ধূমপান ইসলামে বর্জনীয়। এটা যাবতীয় ধূমপানের সামগ্রী অন্তভূর্ক্ত করে যেমনঃ সিগার, সিগারেট, পাইপ, শিশা, হুক্কা ইত্যাদি। রমজানেও এই হারামকে পরিহার করতে পারে না অনেকে। এ বিষয়ে আল্লাহ বলেছেন…
তাদের জন্য যাবতীয় পাক জিনিসকে হালাল ও নাপাক জিনিসসমূহকে তাদের ওপর হারাম ঘোষণা কর”(সূরাআ’রাফঃ১৫৭)
এটা শুধু যে ধূমপায়ী তার জন্য ক্ষতিকর- তা নয়, বরং তার আশেপাশে যারা রয়েছে তাদের জন্যও ক্ষতিকর। এটা কারো অর্থ অপচয়ের জন্য একটি মাধ্যমও বটে।
৭. ইচ্ছাকৃতভাবে সেহরী বাদ দেওয়া
রাসূল (সাঃ) বলেছেনঃ “সেহরী খাও, কারণ এটার মধ্যে বরকত রয়েছে।”(বুখারী, মুসলিম)
তাই ইচ্ছাকৃত সেহরী বাদ দেয কোনভাবেই গ্রহনযোগ্য নয়।
৮. ইমসাক এর সময় সেহরী খাওয়া বন্ধ করে দেওয়া
কিছু লোক রয়েছে যারা ফজরের ওয়াক্তের ১০-১৫ মিনিট পূর্বে ইমসাক পালনের জন্য সেহরী খাওয়া বন্ধ করে দেয়। শেখ ইবনে উছাইমিন বলেছেনঃ “এটা বিদ’আত ছাড়া আর কিছু নয় যার কোন ভিত্তি সুন্নাহে নেই। বরং সুন্নাহ হল তার উল্টোটা করা। আল্লাহ প্রত্যুষের আগ পর্যন্ত আমাদেরকে খেতে অনুমতি প্রদান করেছেনঃ “আর আহার কর ও পান কর যতক্ষণ না ফজরের সাদা রেখা কালো রেখা থেকে স্পষ্ট হয়।”(সূরা বাকারাঃ১৮৭)
রাসূল (সাঃ) বলেছেনঃ “তোমরা আহার কর ও পান কর যতক্ষণ না ইবনে উম্মে মাকতুম এর আযানের ধ্বনি শুনতে পাও, কারণ সে প্রত্যূষ না আসা পর্যন্ত আযান দেয় না।”
এই ইমসাক হচ্ছে কিছু সংখ্যক লোকের দ্বারা পালনকৃত আল্লাহর আদেশের অতিরিক্ত কাজ, তাই এটা ভুয়া। এটা ধর্মের নামে এক ধরনের উগ্রপন্থী আচরণ। আর রাসূল (সাঃ) বলেছেনঃ “যারা উগ্রপন্থা অবলম্বন করে তারা ধ্বংস হয়েছে, যারা উগ্রপন্থা অবলম্বন করে তারা ধ্বংস হয়েছে, যারা উগ্রপন্থা অবলম্বন করে তারা ধ্বংস হয়েছে।”(মুসলিম)
৯. ইফতার এবং সেহরির নিয়ত করা
ইফতার এবং সেহরির সময় নিয়ত এর উদ্দ্যেশ্যে মুখ দিয়ে দুআ উচ্চারণ করা শরীয়ত সম্মত নয়। ইফতার এবং সেহরির যে সকল দুআ আমাদের দেশে প্রতি বছর ইসলামিক ক্যালেন্ডারগুলিতে প্রকাশিত হয় সেগুলো বিদআত। ইফতার অথবা সেহরির জন্য নির্দিষ্ট কোন দুআ সহিহ হাদিস এ নেই। এক্ষেত্রে শুধু মনে মনে নিয়ত করলেই ইনশাআল্লাহ হবে।
১০. ইফতারিতে দেরি করা
আমাদের অনেকেই ইফতারের সময় মাগরিবের আযান শেষ হওয়া পর্যন্ত বসে থাকেন, আযান শেষ হলে ইফতারি করেন। সূর্য অস্ত যাবার পর আযান দেওয়ার সাথে সাথে ইফতার করা সুন্নাহ সম্মত। আনাস(রাঃ) বলেন,“রাসুলুল্লাহ(সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এটাই করতেন।(মুসলিম)
১১. মাগরিবের নামাযে দেরি করা
আমরা অনেকেই ইফতারিতে এত বেশি খাবার নিয়ে বসি যে সেগুলো শেষ করতে গিয়ে মাগরিবের জামাআত ধরতে পারিনা। এটা একেবারেই অনুচিত। রাসুল(সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কয়েক টুকরা খেজুর মুখে দিয়ে ইফতার করে অতঃপর মাগরিবের নামাজ এর জন্য চলে যেতেন। নামাজ শেষ করে এসে আমরা ফিরে এসে ইচ্ছা করলে আরও কিছু খেতে পারি।
১২. আমাদের দুআ কবুল হওয়ার সুযোগ ছেড়ে দেওয়া
সিয়াম পালনকারী ব্যক্তির দুআ ইফতারির সময় আল্লাহর নিকট কবুল হয়ে থাকে। রাসুল(সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)বলেন,“তিন ধরনের ব্যক্তির দুআ ফিরিয়ে দেওয়া হয়না- ১)একজন পিতার দুয়া, ২)রোযাদার ব্যক্তির দুয়া, ৩)মুসাফিরের নামাজ”।(বায়হাকি)
আমরা এই সময়ে দুআ না করে বরং খাবার পরিবেশন,কথাবার্তা ইত্যাদি নিয়ে ব্যস্ত থাকি। আমাদের চিন্তা করা উচিৎ কোনটা আমাদের দরকার- খাবার নাকি দুআ কবুল হওয়া ?
১৩. রোযা রাখা অথচ নামাজ না পড়া
সিয়াম পালনকারী কোন ব্যক্তি নামাজ না পরলে তার সিয়াম কবুল হয়না। রাসুল(সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)বলেছেন,“সালাত(নামাজ) হচ্ছে ঈমান এবং কুফর এর পার্থক্যকারী”।(মুসলিম)
তাই শুধু সিয়াম নয়,সালাত(নামাজ) আদায় না করলে কোন ইবাদতই কবুল হয়না।
রাসুল(সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)বলেন,“যে আসরের সালাত আদায় করে না, তার ভাল কাজসমূহ বাতিল হয়ে যায়।”(বুখারি)
১৪. রোযা রাখা অথচ হিজাব না পরা
মুসলিম নারীদের জন্য হিজাব না পরা কবীরা গুনাহ। “ঈমানদার নারীদেরকে বলুন, তারা যেন তাদের দৃষ্টিকে নত রাখে এবং তাদের যৌন অঙ্গের হেফাযত করে। তারা যেন যা সাধারণতঃ প্রকাশমান, তা ছাড়া তাদের সৌন্দর্য প্রদর্শন না করে এবং তারা যেন তাদের মাথার ওড়না বক্ষ দেশে ফেলে রাখে এবং তারা যেন তাদের স্বামী, পিতা, শ্বশুর, পুত্র, স্বামীর পুত্র, ভ্রাতা, ভ্রাতুস্পুত্র, ভগ্নিপুত্র, স্ত্রীলোক অধিকারভুক্ত বাঁদী, যৌনকামনামুক্ত পুরুষ, ও বালক, যারা নারীদের গোপন অঙ্গ সম্পর্কে অজ্ঞ, তাদের ব্যতীত কারো আছে তাদের সৌন্দর্য প্রকাশ না করে, তারা যেন তাদের গোপন সাজ-সজ্জা প্রকাশ করার জন্য জোরে পদচারণা না করে। মুমিনগণ, তোমরা সবাই আল্লাহর সামনে তওবা কর, যাতে তোমরা সফলকাম হও।”(আন-নুরঃ ৩১)
সুতরাং রোযা রাখা অথচ হিজাব না পরা অবশ্যই সিয়াম পালনের পুরস্কার হতে দূরে সরিয়ে দেয় যদিও এটি সিয়াম ভঙ্গ করেনা।
১৫. পরীক্ষা কিংবা কর্মব্যস্ততার জন্য রোযা না রাখা
পরীক্ষা কিংবা কর্মব্যস্ততার কারণে রোযা না রাখা শরীয়ত সম্মত নয়। সকালে পড়ালেখা করতে কষ্ট হলে রাতে করার সময় থাকে। আমাদের মনে রাখা উচিৎ যে পরীক্ষায় ভাল ফলাফল করার চেয়ে আল্লাহকে সন্তুষ্ট করাটাই আমাদের মূল লক্ষ্য।পড়ালেখা করার মধ্যে দিয়েও যদি আমরা সঠিকভাবে যদি আমরা রোযা রাখার মত ফরয কাজগুলো করার চেষ্টা করি, ইনশাআল্লাহ আল্লাহ আমাদের জন্য তা সহজ করে দিবেন এবং আমাদের সাহায্য করবেন।
“আর যে আল্লাহকে ভয় করে, আল্লাহ তার জন্যে নিস্কৃতির পথ করে দেবেন।এবং তাকে তার ধারণাতীত জায়গা থেকে রিযিক দেবেন। যে ব্যক্তি আল্লাহর উপর ভরসা করে তার জন্যে তিনিই যথেষ্ট। আল্লাহ তার কাজ পূর্ণ করবেন। আল্লাহ সবকিছুর জন্যে একটি পরিমাণ স্থির করে রেখেছেন।”(আত-তালাকঃ ২-৩)
১৬. স্বাস্থ্য কমানোর উদ্দ্যেশ্যে রোযা রাখা
স্বাস্থ্য কমানোর জন্য রোযা রাখা উচিত নয়। এটি অন্যতম একটি বড় ভুল যা আমরা করে থাকি। সিয়াম পালন করার একমাত্র উদ্দ্যেশ্য হচ্ছে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন। যদি স্বাস্থ্য কমানোর উদ্দ্যেশ্যে কেউ রোযা রাখে তাহলে তা শিরকের(ছোট শিরক বা শিরকুল আসগার) আকার ধারন করতে পারে।
১৭. তারাবীর নামাযের রাকাআত সংখ্যা নিয়ে মতবিরোধ
তারাবীর নামাযের কোন নির্দিষ্ট সংখ্যক রাকাআত নেই। আট এবং বিশ রাকাআত-এ দুটোই শরীয়ত সম্মত। শেখ ইবনে উথাইমিন বলেন,“এগারো কিংবা তেইশ রাকাআতের কোনটিকে নির্দিষ্ট করে অপরটি বাতিল করা অনুচিত।কারন বিষয়টি অনেক তাৎপর্যপূর্ণ,সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর।”
১৯. নির্দিষ্টভাবে লাইলাতুল ক্দরের ইবাদত করা
আমরা অনেকেই কেবল ২৭ রমযান রাতে লাইলাতুল ক্বাদর পাওয়ার জন্য ইবাদত করে থাকি,কিন্তু অন্যান্য বিজোড় রাতগুলিকে প্রাধান্য দেইনা। অথচ রাসুল(সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)বলেছেন,“রমযানের শেষ দশ রাত্রির বিজোড় রাতগুলিতে লাইলাতুল ক্বাদর তালাশ কর।”(বুখারি ও মুসলিম)
২০. ঈদের প্রস্তুতি নিতে গিয়ে রমযানের শেষাংশ অবহেলায় পালন করা
আমরা অনেকেই ঈদের প্রস্তুতি (নতুন কাপড় কেনা,খাবারের আয়োজন করা, মার্কেটে ঘোরাঘুরি করা) নিতে গিয়ে রমযানের শেষ ১০ দিন অবহেলায় পালন করি (ঠিকমত ঈবাদত না করা এবং লাইলাতুল ক্বাদরের তালাশ না করা)। রাসুল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) রমযানের শেষ ১০ দিন আল্লাহর ইবাদতে খুব বেশি সময় নিমগ্ন থাকতেন, কেনাকাটি করায় ব্যস্ত থাকতেন না। রমযান শুরু হবার আগেই আমাদের কেনাকাটা শেষ করা উচিৎ।
আয়শা (রাঃ) হতে বর্ণিত, “যখন রমযানের শেষ দশক শুরু হতো রাসুল(সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) লুঙ্গি শক্ত করে বাঁধতেন (অর্থাৎ ইবাদতে ব্যস্ত থাকতেন, স্ত্রীদের সাথে অন্তরঙ্গ হওয়া থেকে বিরত থাকতেন), রাত্রি জাগরণ করতেন এবং তার পরিবারকে জাগিয়ে তুলতেন।”(বুখারী,মুসলিম)
২১. ইফতার পার্টির আয়োজন করা
যদিও অপরকে ইফতারি করানোতে সওয়াব আছে এবং এ কাজে উৎসাহ প্রদান করা হয়েছে, তথাপি আমাদের অনেকেই মুখরোচক ইফতার পার্টির আয়োজন করে থাকেন। যেখানে হিজাববিহীন নারীদের আগমন থেকে শুরু করে অশ্লীল নাচ-গান, নারীপুরুষের অবাধ মেলামেশা, তারাবিহ এর নামাজ ছেড়ে দেওয়া- এ সবই হয়ে থাকে যেগুলো সম্পূর্ণভাবে ইসলামে নিষিদ্ধ।
মানবতার মুক্তির লক্ষ্যে ইসলামের আলো ছড়িয়ে দিন। “কেউ হেদায়েতের দিকে আহবান করলে যতজন তার অনুসরণ করবে প্রত্যেকের সমান সওয়াবের অধিকারী সে হবে, তবে যারা অনুসরণ করেছে তাদের সওয়াবে কোনো কমতি হবে না।” [সহীহ্ মুসলিম: ২৬৭৪]