রাজধানীর কুড়িল বিশ্ব রোড ফ্লাইওভার। যান চলাচলের জন্য এ ফ্লাইওভারটি সম্পূর্ণ ব্যবহৃত হচ্ছে। তবে বাকি রয়েছে এর বেশ কিছু নির্মাণ কাজ। আশেপাশে নির্মাণ কাজ চলার কারণে সুযোগ পেয়ে বসেছেন অবৈধ দখলদাররা। এ সুযোগে ফ্লাইওভারের চারপাশে গড়ে উঠেছে বেশ কিছু অবৈধ স্থাপনা ও ছোট ছোট অসংখ্য দোকান পাট।
কুড়িল ফ্লাইওভারের চারপাশে এ ধরনের অবৈধ স্থাপনা বেড়েই চলেছে।
রাজধানীর কুড়িল বিশ্বরোড ফ্লাইওভার এলাকা সরেজমিনে ঘুরে এ চিত্র দেখা গেছে।
ফ্লাইওভারের সিঁড়ির নিচের জায়গায় দেখা যাচ্ছে একটি লাল রঙের সাইনবোর্ড। সিড়ির নিচের চারপাশে টিন দিয়ে বেড়া তৈরি করে অফিস বানিয়ে দখল করে আছে ‘বাংলাদেশ কাভার্ড ভ্যান ড্রাইভার্স ইউনিয়ন’। অফিসের ভেতরে প্রবেশের পর দেখা যায়, একটি টেবিল এবং তিনটি চেয়ার। এ সংগঠনের প্রধান কার্যালয় তেজঁগাও রেলগেট এলাকায় অবস্থিত।
এ ইউনিয়নের প্রায় ৫শ’ জন সদস্য আছেন বলে জানা যায়। এ সংগঠনের সভাপতি শফিকুল ইসলাম শফিক এবং সাধারণ সম্পাদক ইব্রাহিম খলিল শান্ত। কিন্তু তাদের কাউকে পাওয়া যায়নি।
অবৈধ অফিস স্থাপনের পাশাপাশি ফ্লাইওভারের নিচের জায়গায় সারিবদ্ধভাবে ট্রাক ও কাভার্ড ভ্যান দিয়ে দখল করে থাকতে দেখা গেছে। বর্তমানে জায়গাটি কাভার্ড ভ্যানের স্ট্যান্ড নামেও পরিচিত হয়ে উঠছে।
অবৈধভাবে এখানে কেন ট্রাক পার্কিং করা হচ্ছে- তা জানতে চাইলে ইউনিয়নের বেশ কয়েকজন সদস্য বলেন, আসলে রাজধানীর কোথাও বাস-ট্রাক রাখার জন্য তেমন টার্মিনাল নেই। তাই এখানেই আমরা এ ট্রাক পার্কিং করেছি।
এ ইউনিয়নের একজন সদস্য মো. আনোয়ার বলেন, আমরা এ ফ্লাইওভারের নিচে অস্থায়ীভাবে আমাদের অফিস স্থাপন করেছি। কারণ, অফিস তৈরি করার জন্য আমাদের কোনো জায়গা নেই। তবে ফ্লাইওভারের সমস্ত কাজ শেষ হলে এর আশেপাশেই আমরা আমাদের স্থায়ী অফিস গড়ে তুলতে পারবো।
বিশ্বরোড কুড়িল রেললাইনের পাশে গড়ে উঠেছে বেশ কিছু দোকান পাট। এখানে বাস থেকে যাত্রীদের নামানো হয়।
কুড়িল ফ্লাইওভারের আরেকটি মুখ হাজীপাড়ার পাশে গড়ে উঠেছে ছোট ছোট দোকান পাট। এসব দোকান বসানোর জন্য পুলিশ ও স্থানীয় নেতাদেরকে দিতে হয় মাসোহারা।
রাসেল নামে এক দোকানি বলেন, আমরা গরিব মানুষ। পেটের দায়ে কিছু কাজ কইরা খাই। দোকান বসাইছি বলে পুলিশকেও চাঁদা দিতে হয়। না দিলে দোকান করতে পারবো না।
রাস্তার বিভিন্ন জায়গা উঁচু নিচু ও ভাঙা হওয়ায় যানবাহনগুলো ঝুঁকিমুক্ত ভাবে চলাচল করতে পারছে না বলেও সরেজমিনে দেখা গেছে।
অপরদিকে ফ্লাইওভারের পাশে কুড়িলে দেখা গেছে ময়লার স্তুপ। সম্পূর্ণ রাস্তার অর্ধেক জুড়েই এ ময়লা পড়ে থাকায় সাধারণ জনগণকে পোহাতে হচ্ছে দুর্ভোগ। ময়লা-আবর্জনার কারণে রাস্তায় যানজটের সৃষ্টি হচ্ছে। এতে সিটি কর্পোরেশনের কোনো মাথাব্যথা নেই বলে অভিযোগ করেছেন স্থানীয় বাসিন্দারা।
স্থানীয় বাসিন্দারা অভিযোগ করে বলেন, বেশ কয়েকবার এলাকা থেকে সিটি কর্পোরেশনকে বিষয়টি জানানো হলেও তারা কোনো উদ্যোগ নেয়নি। এলাকার সকল ময়লা এখানে এনে ফেলা হয় বলে প্রচণ্ড দুর্গন্ধের সৃষ্টি হচ্ছে। কিন্তু ময়লার দুর্গন্ধ দূর করতে কোনো পাউডারও দেওয়া হয় না।
রাস্তার একজন পথচারী সোহেল বেপারী বলেন, এ রমজান মাসে রোজা রেখে এখান দিয়ে যেতে অনেক কষ্ট হয়। এ রাস্তা পরিষ্কার রাখার দায়িত্ব সিটি কর্পোরেশনের। কিন্তু তারাই এলাকার সকল ময়লা এখানে ফেলে রাস্তাটাকেই ডাস্টবিন বানিয়ে ফেলেছে।
কুড়িল ফ্লাইওভারের নির্মাণ কাজ এখনো চলছে, কিন্তু থেমে নেই দখলদারেরা। তারা একের পর এক অবৈধ স্থাপনা তৈরি করেই যাচ্ছেন।