ম্যাচ শুরুর আগের ফটোসেশনে নেইমারের জার্সি নিয়ে পোজ দিয়েছিলো ব্রাজিল। নেইমারকে যে কতোটা মিস করেছে স্কলারির শিষ্যরা তাই যেনো প্রমাণ করতে চেয়েছিলেন ওস্কাররা। ম্যাচেও যে নেইমারের অভাব ডুবাবে তাদের, ছবি তোলার সময় তা কি ভুলেও কল্পনা করতে পেরেছিলেন ব্রাজিলের কেউ? নিশ্চয় না। কল্পনা না করতে পারা পরিণতি বরণ করেই শেষ হয়ে গেছে ব্রাজিলের বিশ্বকাপ। নেইমার ও সিলভাবিহীন ব্রাজিল ভেসে গেছে সাত গোলের বন্যায়। স্বাগতিকের পক্ষে একটুও ছিলো না ভাগ্য। একটুও না। এ দিন যে ভাগ্যদেবী দানের হাত প্রসারিত করেছিলেন জার্মানির দিকে। যারা ফাইনালে উঠে গেছে দুর্দান্ত এক জয়ে।
ম্যাচের মাত্র ১১ মিনিটে প্রথম গোল পায় জার্মানি। প্রথম গোলটি করেন বিশ্বকাপে জার্মানির সর্বোচ্চ গোলদাতা থমাস মুলার। তাকে সহায়তা করেন টনি ক্রুস। জার্মানি দ্বিতীয় গোল পায় ২৩ তম মিনিটে। পরের ৭ মিনিটে আরো তিন গোল দেয় জার্মানি। ২৯ মিনিটের মধ্যেই পাঁচবার কেঁপে উঠে ব্রাজিলের দুর্গ। তখনই মূলত ম্যাচ থেকে ছিটকে পড়ে ব্রাজিল।
ক্লোসার গোলটি আসে ব্রাজিলীয় গোলরক্ষকের ভুলে। তার হাত ফসকে জালে জড়ায় বল। পরের মিনিটে গোল করেন টনি ক্রুস। তাকে সহায়তা করেন ফিলিপ লাম। এক মিনিট পর, ২৬ তম মিনিটে নিজের দ্বিতীয় গোল করেন ক্রুস। এবার তাকে সহায়তা করেন সামি খেদিরা। এর তৃতীয় মিনিটের মাথায় নিজেই গোল করে খেদিরা। তাকে সহায়তা করেছিলেন মেসুত ওজিল। ২৯ মিনিটেই পাঁচটি গোল হজম করার পরই কার্যত শেষ হয়ে যায় ব্রাজিলের বিশ্বকাপ। ৫-০ গোলে এগিয়ে থেকে বিরতিতে যায় জার্মানি।
এ দিন একেবারে অস্তিত্বহীন ছিলো ব্রাজিলের ডিফেন্স। থিয়াগো সিলভার শূন্যতা পূরণ হয়নি একটুও। ডাগআউটে দাঁড়িয়ে শত চিৎকার করেও ডিফেন্সে জমাট ভাব আনতে পারেননি ব্রাজিলের কোচ স্কলারি। তিনি হয়তো দুঃস্বপ্নেও ভাবেননি সিলভা ছাড়া তার ডিফেন্স এতোটাই ভঙ্গুর।
বিরতির পর, ম্যাচের ৫৮ মিনিটে ক্লোসাকে উঠিয়ে আন্দ্রে স্কার্লকে নামান জুয়াকিম লো। পাঁচ গোলে এগিয়ে থাকাটাকেও হয়তো যথেষ্ট মনে হচ্ছিলো না তার! স্কার্ল মাঠে নামার ২১ মিনিটের মধ্যে দুটি গোল করে ব্রাজিলের সব রকম আশাই শেষ করে দেন। বেলো হরিজন্তের গ্যালারিতে তখন কান্নার রোল। ১৯৫০ সালে মারাকানা বিপর্যয় যেনো ভূতের মতো ফিরে এলো এদিন। হাজার হাজার দর্শক প্রায় শব্দ করে কাঁদছিলো। স্পষ্ট দেখা গেছে টিভি স্ক্রিনে।
শেষ মিনিটে একটি গোল শোধ করেন ওস্কার। ততক্ষণে হয়ে গেছে অনেক দেরি। ম্যাচ থেকে ব্রাজিল ছিটকে বহু দূরে। কতোটা দূরে? আকাশ ও পাতালের যতোটুকু ব্যবধান, ম্যাচ থেকে ব্রাজিল তখন তার চেয়েও হাজার গুণ বেশি দূরে।
ব্রাজিলের ইতিহাসে এই হার চিরদিন যন্ত্রণার অন্য নাম হয়ে থাকবে। গত ৯৪ বছরে যে এমন হার দেখেনি ব্রাজিল। ফুটবলের পাওয়ার হাউজ তাদের পাওয়ারের তীব্রতায় কান্নায় ভাসিয়ে দিলো ব্রাজিলকে।