রেকর্ডের দিক দিয়ে ভরপুর ব্রাজিল বিশ্বকাপ

ঢাকা: আর্জেন্টিনাকে ১-০ গোলে হারিয়ে চতুর্থবারের মতো শিরোপা ঘরে তুলল জার্মানি। অতিরিক্ত সময়ের ১১৩ মিনিটে গোল করে জার্মানিকে শিরোপা এনে দেন মারিও গোৎজে। এক মাসের বেশি সময় ধরে চলতে থাকা এই বিশ্বকাপ জন্ম দিয়েছে নানা ঘটনার, সৃষ্টি করেছে নতুন নতুন রেকর্ড ও আলোচনা-সমালোচনা। বিশ্বকাপ শেষ হলেও এক নজরে ব্রাজিল বিশ্বকাপের ‘এ টু জেট’ পর্ব আকারে বাংলানিউজের পাঠকদের জন্য তুলে ধরা হচ্ছে।

প্রাণীর ভবিষ্যত বানী:
১২ জুন বিশ্বকাপ শুরু হওয়ার আগেই ভবিষ্যৎ নিয়ে চিন্তা করতে থাকে সবাই। কে জিতবে এবারের বিশ্বকাপ। গত বিশ্বকাপে স্পেনের চ্যাম্পিয়ন হওয়ার ভবিষ্যৎ বাণী করে বিখ্যাত হয়েছিল অক্টোপাস পল। এবার পান্ডা ও হাতির পর ভবিষ্যৎ বাণী নিয়ে হাজির শামুক ‘জিকো’। প্রথমে অনেকগুলো কাগজের উপর বিভিন্ন দেশের নাম লিখে গোল বৃত্ত তৈরি কর হরা হয়। হাতির বৈশিষ্ট্য ছিল, দু’টি গোল পোস্ট থাকবে এবং সেখানে দু’টি দলের পতাকা থাকবে। হাতি যে দলটিতে গোল দিবে সে দল জিতবে। এই হাতিটি জার্মানি থেকে নিয়ে আমেরিকায় রাখা হয়েছিল। চীন থেকে নেয়া হয়েছিল পান্ডা। দু’টি গাছে দু’ দেশের পতাকা থাকবে। পান্ডা যে গাছে উঠবে সে দলটি জিতবে। তবে পল যেভাবে আলোড়ন ফেলেছিল এ বিশ্বকাপে কেউ তেমনটি করতে পারেনি। 

৩৩ দেশের রেফারি:
৩২টি দেশ নিয়ে বিশ্বকাপের ২০তম আসরে সর্বমোট ৬৪টি খেলা অনুষ্ঠিত হয়। বিশ্বের বিভিন্ন জোন থেকে রেফারিদের নিয়োগ দিয়েছিল ফিফা। এর মধ্যে ইউরোপ জোন থেকে সর্বাধিক ১০ জন রেফারির দায়িত্ব পালন করেন। আফ্রিকা জোন থেকে ৫ জন, এশিয়া জোন থেকে ৫ জন, উত্তর-মধ্য আমেরিকা এবং ক্যারিবীয় জোন থেকে ৫ জন, ভূ-মধ্যসাগরীয় জোন থেকে ২ জন এবং দক্ষিণ আমেরিকা থেকে ৬ জন এ দায়িত্ব পালন করেন। বিশ্বকাপের এবারের আসরে সবচেয়ে কম বয়সী রেফারি হিসেবে মেক্সিকো-ক্যামেরুন ম্যাচের দায়িত্ব পালন করেছেন উইলমার রোল্দান। ৩৪ বছর বয়সী কলম্বিয়ার এ রেফারি জন্মগ্রহণ করেন ১৯৮০ সালের ২৪ জানুয়ারি। মাত্র ১৪ বছর বয়সে রেফারি হিসেবে দায়িত্ব পালন শুরু করেন রোল্দান। অনেক বিতর্ককে সামনে-পেছনে রেখেই এ মহারণে প্রধান রেফারির দায়িত্ব পালন করেছেন ইতালিয়ান নিকোলা রিজ্জোলি। ২০০৭ সাল থেকে আন্তর্জাতিক ম্যাচ পরিচালনা শুরু করা অভিজ্ঞ এ রেফারির সহকারী হিসেবে ছিলেন স্বদেশী রেনাতো ফাভিরানি ও আন্দ্রে‍য়া স্তেফানি।

বিশ্বকাপ থেকে তারকার বিদায়:
বিশ্বকাপ শুরুর আগেই মিশন থেমে যায় বায়ার্ন মিউনিখের তারকা ফ্রাঙ্ক রিবেরির। ফ্রান্সের তুরুপের তাস ছিলেন রিবেরি। চোটের কারণে বাদ পড়েন তিনি। কোয়ার্টার ফাইনালে কলম্বিয়ার ডিফেন্ডার হুয়ান জুনিগার নির্মম আঘাতে মেরুদণ্ডের কশেরুকায় চির ধরে নেইমারের। আর এ আঘাতেই তার বিশ্বকাপ মিশন শেষ হয়ে যায়। ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী ৬ সপ্তাহ বিশ্রামে থাকতে হবে তাকে। অবশ্য তৃতীয় স্থান নির্ধারনী ম্যাচে সাইড লাইনে বসে ছিলেন নেইমার। বিশ্বকাপে গ্রুপ পর্বের দ্বিতীয় ম্যাচে আর্জেন্টাইন তারকা স্ট্রাইকার সার্জিও আগুয়েরো আঘাত পেয়ে মাঠ ছাড়লেও পরে সেমিফাইনালে মাঠে নামেন। আর কোয়ার্টার ফাইনালে অ্যাঞ্জেল ডি মারিয়াকে হারায় আর্জেন্টাইনরা। পেশিতে চোটের কারণে বিশ্বাকাপ শেষ হয়ে যায় ডি মারিয়ার। 

সেমিফাইনালের রেকর্ড:
ফুটবল বিশ্বকাপের ২০তম সেরা মহড়া সাজিয়েছিল ব্রাজিল। সেমিটা ছিল দু’মহাদেশের লড়াই। ইউরোপ ও ল্যাটিন আমেরিকার মধ্যে। ব্রাজিল-জার্মানি ও নেদারল্যান্ড-আর্জেন্টিনা। অশ্রুজলে সবাইকে কাঁদিয়ে সেমিফাইনালে জার্মানদের দেওয়া গুনে গুনে ৭টি গোল হজম করে নিজেদের মাটিতে আয়োজিত বিশ্বকাপ থেকে বিদায় নিয়েছিল সেলকাওরা। এ ম্যাচে বিশ্বকাপ ইতিহাসে সর্বোচ্চ গোলের মালিক হন মিরোস্লাভ ক্লোসা।

বিশ্বকাপের ২০টি আসরের মধ্যে ১৮টিতেই অংশ নেওয়া জার্মানি সর্বাধিক ২২৪ গোলের রেকর্ড গড়েছে। আগের ২০টি আসরে সর্বাধিক ২২০ গোল নিয়ে রেকর্ড ছিল ব্রাজিলের। এই ম্যাচকে কেন্দ্র করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম টুইটারে ব্রাজিল-জার্মানি ম্যাচ নিয়ে ৩ কোটি ৫৬ লাখ হাজার টুইট করা হয়েছিল।

অপর সেমিফাইনালে নেদারল্যান্ডসকে টাইব্রেকারে ৪-২ গোলে হারিয়ে দুই যুগ পর ফাইনালের দরজায় পা রাখে মেসির আর্জেন্টিনা। এ আসরে মোট ৬৪ ম্যাচে লাল কার্ড পেয়েছেন ১০জন আর হলুদ কার্ড পেয়েছেন ১৮৭ জন। 
 
এ বিশ্বকাপে বেশি গোলের মালিক:
এ বিশ্বকাপে গ্রুপ পর্বে চমক দেখিয়েছে কলম্বিয়া। ব্রাজিলের সঙ্গে কোয়ার্টার ফাইনাল হেরে বিশ্বকাপ থেকে বিদায় নেয় কলম্বিয়া। দেশে ফিরে তারা বিরোচিত সংবর্ধনা পেয়েছে দেশের মানুষের কাছে। কলম্বিয়ার মিডফিল্ডার জেমস রদ্রিগেজ চলতি আসরে ছয় গোল করে এককভাবে শীর্ষে ছিলেন। তার পরে ছিলেন জামার্নির থমাস মুলার। পাঁচ গোল করেন মুলার। এরপর ছিলেন আর্জেন্টিনার লিওনেল মেসি (চার গোল)। সেমিফাইনাল ও ফাইনালে কোন গোল করতে পারেনি বিশ্ব সেরা এই ফুটবলার। সেমি পর্যন্ত মোট গোল হয়েছে ১৬৭টি। সর্বোচ্চ ১৭১টি গোল হয়েছিল ১৯৯৮ সালে ফ্রান্স বিশ্বকাপে।

সুয়ারেজের কামড়:
এ বিশ্বকাপে সবচেয়ে সমালোচিত হয়েছে সুয়ারেজের কামড় কান্ড। চোট কাটিয়ে বিশ্বকাপ খেলতে আসেন লুইস সুয়ারেজ। নকআউট পর্বে ওঠার লড়াইয়ের ম্যাচে ইতালির চিয়েল্লিনির কাঁধে কামড়ে দেন লিভারপুলের স্ট্রাইকার সুয়ারেজ। ফিফা শাস্তি হিসেবে তাকে নয় ম্যাচ নিষিদ্ধ ও চার মাস সব ধরনের ফুটবল সংশ্লিষ্ট কাজ থেকে নির্বাসনে পাঠায়। পাশাপাশি এক লাখ সুইস ফ্রাঁ আর্থিক জরিমানা করে। এর ফলে সুয়ারেজের বিশ্বকাপ মিশন শেষ হয়ে যায়। এর আগেও তিনি চার বার কামড় কান্ড ঘটিয়ে নিষিদ্ধ হয়েছিলেন।World_cup_A_t0_Z_bg_645293771

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *