রানা প্লাজা ধসে নিহত ব্যক্তিদের পরিবার ও আহত শ্রমিকদের ক্ষতিপূরণের প্রথম কিস্তির অর্থ ঈদুল ফিতরের আগে দেওয়া হবে। প্রথম দফায় পাবেন ৭০২ জন। ক্ষতিপূরণের জন্য গঠিত আন্তর্জাতিক তহবিল থেকে তাঁদের নিজস্ব ব্যাংক হিসাবে অর্থ চলে যাবে। বাকিদের ঈদের পর ধাপে ধাপে ক্ষতিপূরণ দেওয়া হবে।
রাজধানীতে গতকাল বুধবার অনুষ্ঠিত আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার (আইএলও) নেতৃত্বাধীন রানা প্লাজা অ্যারেঞ্জমেন্ট কো-অর্ডিনেশন কমিটির বৈঠকে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এতে সভাপতিত্ব করেন আইএলওর এ দেশীয় পরিচালক শ্রীনিবাস রেড্ডি।
বৈঠক শেষে সমন্বয় কমিটির সদস্য ও বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব লেবার স্টাডিজের (বিলস) সহকারী নির্বাহী পরিচালক সৈয়দ সুলতান উদ্দিন আহম্মেদ প্রথম আলোকে বলেন, ‘ঈদের আগেই ৭০২ জন আহত শ্রমিক ও নিহত শ্রমিক পরিবারের প্রত্যেক দাবিদারকে তাঁদের প্রাপ্য মোট ক্ষতিপূরণের ৪০ শতাংশ পর্যন্ত দেওয়া হবে। এটি তিন মাসের স্থায়ী আমানত হিসাবে থাকবে। এ সময় তাঁরা টাকা তুলতে পারবেন না, তবে সুদ পাবেন।’
সুলতান উদ্দিন আরও বলেন, ঈদের পর তিন মাসের মধ্যে যাঁরা অর্থ পাবেন তাঁদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে। কীভাবে তাঁরা এই অর্থ খরচ করবেন সে বিষয়েই হবে প্রশিক্ষণ। তিনি বলেন, আহত শ্রমিক ও নিহত শ্রমিক পরিবারের যতজন দাবিদার ‘দাবিনামা’ পূরণ করেছেন তাঁদের প্রত্যেকের ব্যাংক হিসাবে টাকা পাঠিয়ে দেওয়া হবে। একইসঙ্গে একটি চিঠি দিয়ে বিষয়টি অবহিত করা হবে।
নিহত বা আহত শ্রমিকের পরিবার কত টাকা ক্ষতিপূরণ পাবেন এ বিষয়ে অ্যারেঞ্জমেন্ট কমিটির এই সদস্য বলেন, নিহত ব্যক্তিদের পরিবার ১১ থেকে ১২ লাখ টাকা পাবেন। কেউ কেউ আবার ১৪ থেকে ১৫ লাখ টাকাও পেতে পারেন। তবে আহত ব্যক্তিদের বিষয়ে ক্ষতিপূরণের অঙ্কটি এখনো চূড়ান্ত হয়নি।
জানা যায়, গতকালের বৈঠকে অ্যারেঞ্জমেন্ট কমিটির সদস্য হিসেবে শ্রম মন্ত্রণালয়, পোশাক কারখানা মালিকদের সমিতি বিজিএমইএ, বাংলাদেশ এমপ্লয়ার্স ফেডারেশন (বিইএফ), শ্রমিক সংগঠন ইন্ডাস্ট্রিঅল বাংলাদেশ কাউন্সিল, ন্যাশনাল কো-অর্ডিনেশন কমিটি ফর ওয়ার্কার্স এডুকেশন (এনসিসিডব্লিউ) ও ইন্ডাস্ট্রিঅল গ্লোবাল ইউনিয়ন, ব্র্যান্ড প্রাইমার্ক, বেসরকারি সংস্থা ক্লিন ক্লথ ক্যাম্পেইনের একজন করে প্রতিনিধি উপস্থিত ছিলেন।
ক্ষতিপূরণ দেওয়ার প্রক্রিয়ার প্রথম ধাপ হিসেবে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিদের কাছ থেকে গত মার্চে দাবিনামা বা ক্লেইম ফরম পূরণ শুরু করে অ্যারেঞ্জমেন্ট কমিটি। এ জন্য সাভার ক্যান্টনমেন্টে ‘রানা প্লাজা ক্লেইমস অ্যাডমিনিস্ট্রেশন অফিস’ নামে একটি কার্যালয় স্থাপন করে কমিটি। হতাহত ও নিখোঁজ শ্রমিকের স্বজনেরা এখানে গিয়ে ফরম পূরণ করেন। একই সঙ্গে তাৎক্ষণিকভাবে প্রত্যেক উত্তরাধিকারের জন্য আলাদা ব্যাংক হিসাব খুলে দেওয়া হয়। ইতিমধ্যে দুই হাজার ৭৮০ জন হতাহত ব্যক্তির পরিবারের মোট চার হাজার ৫৬০ জন সদস্যের দাবিনামা পূরণ সম্পন্ন হয়েছে। এর মধ্যে আছে ৬৭৩ জন নিহত শ্রমিকের পরিবার। আর আহত এক হাজার ৯৭১।
দেশের পোশাক খাতের সবচেয়ে বড় দুর্ঘটনাটি ঘটে গত বছরের ২৪ এপ্রিল। এদিন সাভারে রানা প্লাজা ধসে পড়ে। এতে এক হাজার ১৩৬ জন পোশাক কারখানা শ্রমিক নিহত হন। আহত হন কয়েকশ শ্রমিক।
এদিকে অ্যারেঞ্জমেন্ট কমিটির গঠিত রানা প্লাজা ডোনারস ট্রাস্ট ফান্ডে গত জানুয়ারি থেকে গত ৪ জুলাই পর্যন্ত এক কোটি ৭৭ লাখ মার্কিন ডলার বা ১৪১ কোটি টাকা জমা পড়েছে। যদিও ক্ষতিপূরণের জন্য প্রয়োজন ৩২০ কোটি টাকা বা চার কোটি ডলার। অন্যদিকে প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ তহবিলে পড়ে আছে ১০৫ কোটি টাকা। এই তহবিল থেকে এখন পর্যন্ত মোট ২২ কোটি টাকা আহত ও নিহত শ্রমিকের পরিবারকে অনুদান দেওয়া হয়েছে।
এদিকে আন্তর্জাতিক তহবিলে নতুন করে অর্থ না জমা পড়ায় ক্ষতিপূরণের পুরো প্রক্রিয়াটি নিয়ে অনিশ্চয়তার সৃষ্টি হয়েছে। এ বিষয়ে জানতে চাইলে অ্যারেঞ্জমেন্ট কমিটির সদস্য ও ইন্ডাস্ট্রিঅল বাংলাদেশ কাউন্সিলের মহাসচিব রায় রমেশচন্দ্র বলেন, আজকের (গতকাল) বৈঠকে সব ব্র্যান্ডকে তহবিলে অর্থ দেওয়ার জন্য চিঠি দেওয়া সিদ্ধান্ত হয়েছে