মালয়েশিয়া এয়ারলাইন্সের এমএইচ-১৭ ফ্লাইট ট্র্যাজেডির পূর্ব পর্যন্ত রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন ইউক্রেন সঙ্কট যেভাবে মোকাবিলা করছিলেন তা কৌশলগতভাবে অত্যন্ত সফল বলে মনে করা হচ্ছিল রাশিয়ায়। কিন্তু ইউক্রেনের বিদ্রোহীরা ওই ফ্লাইটে ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়ে ২৯৮ প্রাণহানি ঘটানোর পর তার সেই ভাবমূর্তিতে ফাটল ধরতে পারে। এ বিষয়ে কারনেইজ মস্কো সেন্টারের পরিচালক দমিত্রি ট্রেনিন একটি প্রতিবেদন লিখেছেন। তিনি লিখেছেন, ডোনবাস অঞ্চলে জঙ্গিদের অবশ্যই সমর্থন দিয়েছে রাশিয়া। তবে তারা এ অভিযোগ অস্বীকার করেছে। একই সময়ে তারা জার্মানি ও ফ্রান্সের সঙ্গে ইউক্রেন সঙ্কট সমাধানের জন্য কূটনৈতিক তৎপরতা শুরু করে। এতেও রাশিয়ার স্বার্থ রক্ষা হয়েছে। রাশিয়ার সঙ্গে গুরুত্বপূর্ণ অর্থনৈতিক সম্পর্ক রয়েছে ইউরোপীয় ইউনিয়নের অনেক দেশে। ইউরোপীয় ইউনিয়ন রাশিয়ার বিরুদ্ধে আরও নিষেধাজ্ঞা দেয়ার হুমকি দিয়েছে। সে সঙ্গে যুক্ত হয়েছে ওবামা প্রশাসন। তারা রাশিয়ার বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা দেয়ার জন্য কাজ করে। কিন্তু সে চেষ্টা কার্যত ব্যাপকভাবে অকার্যকর হয়েছে। ইউরোপীয় ইউনিয়ন, যুক্তরাষ্ট্র যখন ভ্লাদিমির পুতিনের বিরুদ্ধে এমন পদক্ষেপ নেয়ার পক্ষে তখন ঠিক এর উল্টোটা করছেন ভ্লাদিমির পুতিন। তিনি চীনের সঙ্গে সম্পর্ক বৃদ্ধি করার উদ্যোগ গ্রহণ করেছেন। পাশাপাশি তিনি ব্রিকস দেশগুলো (ব্রাজিল, ভারত, চীন ও দক্ষিণ আফ্রিকা) নৈতিক সমর্থন পেয়েছেন পুতিন। এর মাধ্যমে তিনি লাতিন আমেরিকার দেশগুলোর সঙ্গে নতুন করে পুরনো বন্ধুত্বকে ঝালাই করে নিয়েছেন। এ সবের মাধ্যমে ভ্লাদিমির পুতিনের ভাবমূর্তি যতটুকু বেড়েছিল তা সহসাই পাল্টে গেল এমএইচ১৭ ফ্লাইট বিধ্বস্ত করার ঘটনায়। এ ঘটনায় তাৎক্ষণিকভাবে বিদ্রোহীদের সহায়তা ও অন্যান্য সহায়তা দেয়ার জন্য রাশিয়াকে দায়ী করেছে যুক্তরাষ্ট্র ও তার ঘনিষ্ঠ কিছু মিত্র। এরই মধ্যে পশ্চিমা মূলধারার মিডিয়া রাশিয়াকে একঘরে হিসেবে মূল্যায়ন করা শুরু করেছে। ইউক্রেনের বিদ্রোহীদের অপরাধকে হায়েনার কর্মকাণ্ড বলে বিবেচনা করছে সচেতন মানুষ। অভিযোগ উঠেছে, সেই বিদ্রোহীদের অস্ত্রসহ বিভিন্ন সহায়তা দিচ্ছেন পুতিন। রাশিয়ার বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞার বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের মধ্যে ব্যবধান সংকীর্ণ হয়ে আসছে। এতে মস্কোর আশায় গুড়েবালি হতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে। সম্প্রতি এশিয়ায় পা রাখার চেষ্টা করছে রাশিয়া। তারা এ অঞ্চলে বিভিন্ন দেশের সঙ্গে সম্পর্ক দৃঢ় করার চেষ্টা করছে। কিন্তু বিমান ধ্বংস করার ঘটনায় এশিয়ায় রাশিয়াবিরোধী অনুভূতি তীব্র হতে পারে। এখানে উল্লেখ্য, সম্প্রতি চীনের সঙ্গে ভ্লাদিমির পুতিন ৩০ বছরের গ্যাস চুক্তি স্বাক্ষরিত করেছে। পশ্চিমা দেশ নয়, এমন দেশগুলো পশ্চিমাদের সঙ্গে তাল মেলানোর চেষ্টা করছে। তারা উন্নয়নের পক্ষে পশ্চিমাদের পক্ষ অবলম্বন করে। এতে রাশিয়া ও ভ্লাদিমির পুতিনের ভাবমূর্তিতে চোট লাগতে পারে। রাশিয়ার সঙ্গে ইউক্রেন ইস্যুতে পশ্চিমাদের সঙ্গে সম্পর্কের ভাটাকে কিছু রাশিয়ান মনে করতে পারেন যে, রাশিয়াকে বশে আনতে এটা যুক্তরাষ্ট্রের অঘোষিত নীতি। তবে কম সংখ্যক রাশিয়ান এতে সমর্থন করে। তবে এখনও ভ্লাদিমির পুতিনের জনপ্রিয়তা শতকরা ৮০ ভাগ। তিনি রাশিয়ার স্বার্থকে রক্ষা করছেন, রাশিয়ার স্বার্থে কাজ করছেন- এজন্য তাকে ব্যাপকভাবে স্বীকৃতি দেয়া হয়। তবে এমএইচ১৭ ট্র্যাজেডির পর কিছু প্রশ্নের জন্ম হয়েছে। তার মধ্যে একটি হলো ব্যাপকভাবে বিশ্বাস করা হয, দোনেৎস্ক ও লুহানস্কে স্বঘোষিত প্রজাতন্ত্রের মানুষদের নৈতিক ও রাজনৈতিক সমর্থন দিয়ে যাচ্ছে মস্কো। যদি আন্তর্জাতিক তদন্তকারীরা দেখতে পায় যে দোনবাস বিদ্রোহীদের অত্যন্ত শক্তিশালী অস্ত্র দিয়েছে রাশিয়া তাহলে ক্রেমলিন দায়িত্বজ্ঞানহীন এক রাষ্ট্রনায়কের অধীনে চলছে তা প্রতিষ্ঠা হবে। এ জন্য রাশিয়ান জেনারেল স্টাফ কর্মকর্তারা তাদের দেশের পক্ষে অবস্থান নিয়েছেন এবং তারা এমএইচ১৭ বিমানটি বিধ্বস্ত হওয়ায় ইউক্রেনের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে। রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন এ নিয়ে আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছেন পশ্চিমা ও মালয়েশিয়ার নেতাদের সঙ্গে। তিনি প্রকাশ্যে আন্তর্জাতিক তদন্তকে সমর্থন করেন। তদন্তে যদি রাশিয়ার বিরুদ্ধে তথ্য মেলে তাহলে তাতে ভ্লাদিমির পুতিনের সততা অনেকটাই খর্ব হবে। তিনি বলেছেন, বিমান বিধ্বস্ত হওয়ায় বিদ্রোহীদের কিছু করার ছিল না। উল্টো তিনি আক্রমণাত্মক কথা বলেছেন ইউক্রেনের বিরুদ্ধে। হয়তো পুতিন রাজনৈতিকভাবে টিকে থাকবেন। কিন্তু তার ওপর যে আস্থা মানুষের তা ফিরিয়ে আনতে তাকে আবার কঠোর কাজ করতে হবে।