ওবায়দুল ইসলাম রবি, রাজমাহী প্রতিনিধিঃ
পদ্মার ভয়াবহ ভাঙ্গনে হুমকীর মুখে পড়েছে রাজশাহীর পবা উপজেলার তিন গ্রাম। হঠাৎ করে পাহাড়ি ঢলে পদ্মা উত্তাল হতে শুরু করেছে। স্রোতের তীব্রতায় এরই মধ্যে সোনাইকান্দি, বুলনপুর ও নবগঙ্গায় দেখা দিয়েছে ভাঙ্গন। গত ১ সপ্তাহে ব্যাপক এলাকা ভেঙ্গে গ্রামগুলোর মধ্যে ধেয়ে আসছে। পদ্মাপাড়ের মানুষের মধ্যে আতংক বিরাজ করছে। এভাবে ভাঙ্গতে থাকলে কয়েকদিনের মধ্যেই গ্রাম গুলোর ঘরবাড়ী পদ্মায় বিলিন হয়ে যাওয়ার আশংকা করছে এলাকাবাসী। গতকাল শনিবার পর্যন্ত কোন স্থানীয় সরকার প্রশাসন পরিষদের প্রতিনিধিরা ও স্থানীয় সংসদ সদস্য ভাঙ্গন এলাকা পরিদর্শন করেনি বলে জানা গেছে । তবে পানি উন্নয়ন বোর্ডের পক্ষ থেকে ভাঙ্গন রোধে এ পর্যন্ত কোন পদক্ষেপ নেয়া হয়নি। তবে খুব শিগ্রই পদক্ষেপ নিবেন বলে কতৃপক্ষ জানিয়েছেন।
শনিবার সকালে সরজমিনে গিয়ে দেখা যায়, হঠাৎ করে গত বর্ষা থেকে পদ্মা স্বরুপে ফিরেছে। ভেঙ্গে নিয়ে গেছে অনেক কিছু। দু’পাড়ের অগণিত মানুষ হয়েছে ভিটাছাড়া বাস্তুহারা। ভেঙ্গেছে অনেক স্বপ্ন। ক্ষেতের জমি, ফলের বাগান পদ্মার গর্ভে বিলিন হয়েছে। নদী ভাঙ্গা মানুষ আশ্রয় নিয়েছে রাজশাহী শহরের বিভিন্ন স্থানে। সোনাইকান্দি, বুলনপুর ও নবগঙ্গায় ব্যাপক ভাঙ্গন দেখা দিয়েছে। ইউপি চেয়ারম্যান নজরুল বলেন, সোনাইকান্দি, বুলনপুর ও নবগঙ্গায় ব্যাপক ভাঙ্গন দেখা দিয়েছে। বিশেষ করে এই গ্রামগুলোকে রক্ষা করতে এখনই পদক্ষেপ না নিলে তা অচিরেই হারিয়ে যাবে। পদ্মার ওপারে পাউবো কিছু পদক্ষেপ নিলেও এপারে তেমন কোন যুতসই উদ্যোগই নেইনি। এছাড়াও পদ্মার এপারের থেকে ওপারের অবস্থা আরো খারাপ। গত বর্ষায় পদ্মা নদীর দক্ষিণ সীমান্তের ৬ কিলোমিটার দীর্ঘ এবং ৫০০ মিটার প্রস্থ ভূখ- পদ্মায় হারিয়েছে বাংলাদেশ। ওই ভাঙনে চরমাঝারদিয়ার ও চরখানপুরের মধ্যবর্তী কলাবাগান এলাকার ১৬৪ নম্বর মেইন পিলার থেকে ১৬৫ নম্বর মেইন পিলার পর্যন্ত বাংলাদেশের ভূখ- নদীতে বিলীন হয়ে ভারতীয় সীমানা স্পর্শ করে পদ্মার পানি। এর পর থেকেই পদ্মার ওই অংশে বিএসএফ নিজেদের মালিকানা প্রতিষ্ঠিত করতে তৎপর হয়ে ওঠে। প্রায় ৫ কিলোমিটার দূরে মোহনগঞ্জ থেকে বিএসএফ ক্যাম্প এনে নদীর তীরে স্থাপন করে। সেখানে ক্যাম্প স্থাপন করে সাধারণ মানুষ ও বিজিবি সদস্যদের নদীপথে চলাচলে বাধা দিচ্ছে বিএসএফ। পদ্মার একাংশের মালিকানা হারাতে বসেছে বাংলাদেশ। এবারের বর্ষায় ওই জায়গা ভারতের সীমান্তে গিয়ে ঠেকবে বলে আশঙ্কা করছেন চরবাসীরা। রাজশাহী বিজিবির পক্ষ থেকেও পদ্মার একক মালিকানা ধরে রাখতে নদীভাঙন রোধে এখনই কার্যকর পদক্ষেপ নেয়ার জোর দাবি জানানো হচ্ছে। নইলে ভূখ- হারানোর পাশাপাশি দেশের সীমান্ত নিরাপত্তা হুমকির মধ্যে পড়বে।
এ ব্যাপারে রাজশাহী পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলী হারুন অর রশিদ বলেন, এখনো এপারের ভাঙ্গন এলাকায় কোন কিছু করা হয়নি। তবে জিও ব্যাগ ফেলার টেন্ডার দেয়া আছে। খুব দ্রুত ঠিকাদার জিও ব্যাগ ফেলে ভাঙ্গন রোধের ব্যাবস্থা করবেন বলে আশাবাদ করেন। রাজশাহী পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী সুধাংশু কুমার সরকার জানান, পদ্মার গতি পারিবর্তন হচ্ছে এটা সত্য। পদ্মার ভাঙন এমন পর্যায়ে গিয়ে ঠেকেছে যে আর অল্প জায়গা বাঁকি আছে। ভাঙতে ভাঙতে গিয়ে যদি ভারতের সিমান্তে গিয়ে ঠেকে যায় তাহলে পদ্মার ওপরে ওই অংশে বাংলাদেশ তার একক অধিকার হারাবে বলে আশঙ্কা সংশ্লিষ্টদের। এ বিষয়ে রাজশাহী পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী পরিচালক হারুন অর রশীদ জানান, ১৭৪ কোটি টাকায় সাড়ে ৪ কিলোমিটার নদীর তীর প্রতিরক্ষা কাজের জন্য পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ে প্রকল্প পাঠানো হয়েছে। প্রকল্পটি অনুমোদনের শেষ প্রক্রিয়ায় আছে।