মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের রাজধানী ওয়াশিংটন ডিসিতে আফ্রিকা মহাদেশের নেতারা আগস্টের ৪ থেকে ৬ তারিখ পর্যন্ত ইউএস—আফ্রিকা লিডারস সামিটে মিলিত হন। এই প্রথম এ ধরনের একটি সম্মেলন অনুষ্ঠিত হলো। ২০১৩ সালের গ্রীষ্মে মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার আফ্রিকা মহাদেশ সফরের সময় যুক্তরাষ্ট্র-আফ্রিকা দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক জোরদারের লক্ষ্যে এমন একটি সম্মেলন আয়োজনের কথা উঠেছিল। আফ্রিকা এখন দুনিয়ার অন্যতম গতিশীল ও বর্ধনশীল অঞ্চল। এই সম্মেলনের ফলে যুক্তরাষ্ট্র ও আফ্রিকার সম্পর্কের উন্নয়ন ঘটবে বলে অংশীজনেরা আশা করছেন। এই সেম্মলনকে কেন্দ্র করে এই লেখা লিখেছেন আফ্রিকার তিন দেশ রুয়ান্ডা, কেনিয়া ও উগান্ডার প্রেসিডেন্ট।
আমাদের একটি স্বপ্ন আছে, একুশ শতক হবে ‘আফ্রিকার শতক’। স্বপ্নটির জোর অনেক বেশি, এর মধ্যে একধরনের মত্ততাও রয়েছে। এই স্বপ্ন ক্রমেই বাস্তবেও পরিণত হচ্ছে। আফ্রিকার কর্তারা ৪ থেকে ৬ আগস্ট পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটন ডিসিতে প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার আতিথ্যে যুক্তরাষ্ট্র-আফ্রিকা নেতৃত্ব সম্মেলনে জড়ো হয়েছেন। তাঁরা এখানে এ মহাদেশের উন্নতির ভিত্তি ও সীমাবদ্ধতা নিয়ে আলোচনা করেন।
দারিদ্র্য ও নানা রকম দ্বন্দ্ব-সংঘাতের কারণে আমাদের মহাদেশটি বারবার খবরের শিরোনাম হয়েছে। কিন্তু আফ্রিকা এখন শুধু অধিক স্থিতিশীলই নয়, দুনিয়ার অন্য অনেক জায়গার চেয়েই এর অনেক দেশেরই অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি এখন অনেক বেশি। এমনকি পৃথিবীর মধ্যেও তা সর্বোচ্চ। গত এক দশকে এ মহাদেশের বহু মানুষ মধ্যবিত্তের খাতায় নাম লিখিয়েছে। আমাদের নগরগুলো বর্ধনশীল অবস্থায় রয়েছে। আমাদের জনগণের মধ্যে তরুণদের সংখ্যা দুনিয়ার যেকোনো জায়গার চেয়ে বেশি।
কিন্তু এটা মনে করা চলবে না যে এটা আফ্রিকার সময়। বক্তৃতা দেওয়ার সময় অনেক কথাই লোকে বলে। আর মহাদেশটির ইতিবাচক প্রবৃদ্ধির বিষয়টি সত্ত্বেও আফ্রিকার ইতিহাসে যত স্বপ্নভঙ্গের ঘটনা ঘটেছে, দুনিয়ার আর কোথাও সে রকম ঘটেনি।
ফলে সুযোগ গ্রহণের জন্য আফ্রিকার অনেক কিছু করতে হবে। বৈশ্বিক অর্থনীতির সঙ্গে যুক্ত করে আমাদের বৃহত্তর পরিসরে আঞ্চলিক বাজার গড়ে তুলতে হবে, এটাই এখন আমাদের জন্য সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ। আমাদের সামনে আঞ্চলিক সহযোগিতার বেশ কিছু নজির রয়েছে, যেমন: ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন, অ্যাসোসিয়েশন অব সাউথ–ইস্ট এশিয়ান নেশনস (আসিয়ান), নর্থ আমেরিকান ফ্রি ট্রেড এগ্রিমেন্ট প্রভৃতির কল্যাণে সদস্যরাষ্ট্রগুলোর বাণিজ্য-বাধা দূর হয়েছে। তারা একই রকম নিয়ন্ত্রণ নীতিমালা প্রণয়ন করেছে, শ্রমবাজার খুলে দিয়েছে এবং অভিন্ন অবকাঠামো গড়ে তুলতে পেরেছে।
আফ্রিকাতেও আমরা একই লক্ষ্য অর্জনের জন্য নর্দান করিডর ইন্টিগ্রেশন প্রজেক্ট হাতে নিয়েছি। গত ১৮ মাসে কেনিয়া, রুয়ান্ডা ও উগান্ডার সঙ্গে দক্ষিণ সুদান ও অতিসম্প্রতি ইথিওপিয়া যৌথভাবে ১৪টি প্রকল্প হাতে নিয়েছে। এর মাধ্যমে আফ্রিকায় ব্যবসা-বাণিজ্যের অনুকূল পরিবেশ গড়ে তোলা হবে। আশা করি, সে লক্ষ্যে আমরা সফল হব।
ইতিমধ্যে আমরা কিছু সুনির্দিষ্ট পদক্ষেপ গ্রহণ করেছি। আমরা একটি একক টুরিস্ট ভিসা দিয়েছি, যার মাধ্যমে তিনটি দেশই ভ্রমণ করা যাবে। আমদানি-রপ্তানির ক্ষেত্রেও আমরা অভিন্ন নীতিমালা প্রণয়ন করেছি, আমলাতান্ত্রিক জটিলতা রোধ এবং বাণিজ্যের অশুল্ক বাধা দূর করার চেষ্টা করছি। মোম্বাসা থেকে কিগালি এবং কামপালা হয়ে জুবা পর্যন্ত একটি প্রমিত গেজের রেলপথ স্থাপনের নকশা চূড়ান্ত হয়েছে। আমাদের চীনা অংশীদারেরা এর প্রথম পর্বের জন্য অর্থায়ন করতে রাজি হয়েছে।
এসব পদক্ষেপ নিতে আমাদের দীর্ঘদিনের প্রচলিত রীতির বিরুদ্ধে যেতে হয়েছে। দুঃখজনক হলেও সত্য, আফ্রিকার দেশের সীমান্তগুলো একপ্রকার চেকপয়েন্ট হিসেবে কাজ করে। মহাদেশের মধ্যে ব্যবসা-বাণিজ্য, নিরাপত্তা, শ্রম, পরিবেশ প্রভৃতি ইস্যুতে সহযোগিতার চেয়ে এই সীমান্তগুলো এত দিন নজরদারির কাজেই ব্যবহৃত হয়ে এসেছে। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই আফ্রিকার