অবশেষে শাস্তি কমলো সাকিব আল হাসানের। আগামী ১৫ই সেপ্টেম্বর থেকে তার ঘরোয়া ও জাতীয় দলে তিনি খেলতে পারবেন। আচরণগত কারণে গত ৭ই জুলাই বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি) ছয় মাসের জন্য তাকে সব ধরনের ক্রিকেট থেকে নিষিদ্ধ করে। সেই সঙ্গে আগামী দেড় বছর তিনি বিদেশের কোন টুর্নামেন্ট খেলতেও এনওসি (অনাপত্তিপত্র) পাবেন না বলেই সিদ্ধান্ত নিয়েছিল বিসিবি। তবে এই সিদ্ধান্ত গতকাল বোর্ড সভায় প্রত্যাহার করা হয়নি। এই বিষয়ে বিসিবি’র সভা শেষে বোর্ড সভাপতি নাজমুল হাসান পাপন বলেন, ‘আমাদের বোর্ড সভায় অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়েছে। এর মধ্যে সাকিব আল হাসানের বিষয়টি অন্যতম। আমরা সাকিব আল হাসানকে ছয় মাসের জন্য সব ধরনের ক্রিকেট থেকে নিষিদ্ধ করেছিলাম। আপনারা জানেন যে, এর আগেও তাকে আমরা তিন ম্যাচের জন্য সাসপেন্ড করেছিলাম। তখন বাংলাদেশের সামনে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এশিয়া কাপ ছিল। সবার দাবি ছিল যেন তার শাস্তি কমিয়ে যেন আফগানিস্তানের বিপক্ষে ম্যাচে ফিরিয়ে আনা হোক। কিন্তু তখন আমরা তা করিনি। তবে এবার তার শাস্তি ঘোষণার পর আমাদের কাছে মনে হয়েছে যে, তার মধ্যে বেশ কিছু পরিবর্তন হয়েছে। এছাড়াও তিনি বোর্ডের কাছে আপিল করে চিঠিও দিয়েছে। আমাদের কাছে সেই চিঠির ভাষাটিও বেশ গুরুত্বপূর্ণ মনে হয়েছে। যদিও আমরা মাঠে ফেরা পর্যন্ত বলতে পারবো না যে, সে কতটা পরিবর্তন হয়েছে। তবে সব দিক বিবেচনা করে তার শাস্তির মেয়াদ কমিয়ে আগামী ১৫ই সেপ্টেম্বর পর্যন্ত করা হয়েছে। এরপর থেকে সে এশিয়ান গেমস ও জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ঘরোয়া সিরিজে খেলতে পারবে। তবে তার এনওসি দেয়ার বিপক্ষে যে সিদ্ধান্ত ছিল তা বহাল থাকবে। এবং তাকে আমরা আগামী দিনগুলোতেও পর্যবেক্ষণ করবো। বলা চলে প্রায় ৪ মাস শাস্তি কমানো হয়েছে তার।
গতকাল বিসিবি’র কার্যনির্বাহী কমিটির সভা শুরু হয় দুপুর ২টা বাজে। সভাশেষে সন্ধ্যা ৭টায় বিসিবি সভাপতি বোর্ডের গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্তগুলো সংবাদ মাধ্যমের সামনে তুলে ধরেন। সাবিক আল হাসানের শাস্তি কমানোর সিদ্ধান্তের পর তিনি আসন্ন ঢাকা প্রিমিয়ার লীগে পুলের ক্রিকেটার হিসেবে অংশ নিতে পারবেন কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে নাজমুল হাসান বলেন, আমরা তাকে পুলের ক্রিকেটার হিসেবেই রেখেছি। তবে যেহেতু পুলের দলবদল হয়ে গেছে তাই আমরা তিনি কিভাবে দলবদলে অংশ নিবেন সেই বিষয় নিয়ে সিসিডিএম বাইলজ দেখে দুই-একদিনের মধ্যে সিদ্ধান্ত নেবে। তবে দলের বর্তমান বাজে পারফরমেন্সের কারণে সাকিব আল হাসানের শাস্তি কমানোর বিষয়টি বিবেচনায় নেয়া হয়েছে কিনা- এমন প্রশ্নের জবাবে নাজমুল হাসান পাপন সোজাসাপটা জবাবে বলেন, না।
মূলত ওয়েস্ট ইন্ডিজে সিপিএল খেলতে বিসিবি’র এনওসি ছাড়া চলে যাওয়া এবং আগে তার ঘটানো বেশ কিছু অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনার জের হিসেবে এই শাস্তি দেয় বিসিবি। এর মধ্যে অন্যতম নতুন প্রধান কোচ চন্দ্রিকা হাথুরুসিংহের সঙ্গে খারাপ ব্যবহার, বাংলাদেশের টেস্ট ও ওয়ানডে খেলতে না চাওয়া ও ভারত সফর চলাকালে ড্রেসিং রুম ছেড়ে বের হয়ে যাওয়া অন্যতম। সাকিব আল হাসান এ বছরই আরও একটি ঘটনা ঘটিয়ে বিপুল ভাবে সমালোচিত হয়েছিলেন। শ্রীলঙ্কা সফর চলাকালে তিনি ড্রেসিং রুমে বসে টিভি ক্যামেরার সামনে অশ্লীল অঙ্গভঙ্গি করেন। আর তার সেই আচরণে বিসিবি তাকে তিন ম্যাচের জন্য সাসপেন্ড করেছিল। সাকিব আল হাসানের শাস্তি কমানো নিয়ে পক্ষে-বিপক্ষে নানা মতামত থাকলেও এর মধ্যে বোর্ড সভাপতি নাজমুল হাসান পাপন তার শাস্তি কমানো হতে পারে এমন ইঙ্গিত দিয়েছিলেন। শেষ পর্যন্ত সাকিব আল হাসানের শাস্তি কমানোর বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয়া হয় গতকাল। তবে তার শাস্তি থেকে মুক্ত হতে আরও প্রায় তিন সপ্তাহ অপেক্ষা করতে হবে।