রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে উপাচার্যের দপ্তরে ঢুকে ভারপ্রাপ্ত প্রধান প্রকৌশলী সিরাজুম মুনীরকে মারধর করেছেন বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা। এ ছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই কর্মচারীকেও তাঁরা মারধর করেছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
আজ বৃহস্পতিবার বেলা দুইটার দিকে এ ঘটনা ঘটে। তবে কী কারণে এই মারধরের ঘটনা ঘটেছে, তা নিয়ে পরস্পরবিরোধী বক্তব্য পাওয়া গেছে।
আহত প্রকৌশলী সিরাজুম মুনীর রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল থেকে প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়েছেন। মারধরের শিকার অপর দুই কর্মচারী হলেন প্রকৌশল দপ্তরের অফিস সহকারী সুমন ও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ভবনের গেটম্যান আবুল কাশেম।
প্রকৌশল দপ্তর সূত্রে জানা গেছে, আজ ভারপ্রাপ্ত প্রধান প্রকৌশলীর সঙ্গে দেখা করার জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসন ভবন-২-এর প্রকৌশল দপ্তরে যান ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা। সেখানে প্রধান প্রকৌশলীকে না পেয়ে ওই দপ্তরে থাকা সুমন নামের এক কর্মচারীকে তাঁরা মারধর করেন। পরে প্রধান প্রকৌশলী উপাচার্যের দপ্তরে গেছেন জানতে পেরে তাঁরা প্রশাসন ভবন-১-এ উপাচার্যের দপ্তরে গিয়ে সিরাজুম মুনীরকে মারধর করেন।
প্রত্যক্ষদর্শী ও উপাচার্যের দপ্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, আজ দুপুরে প্রকৌশলী সিরাজুম মুনীর দেখা করার জন্য উপাচার্য মুহম্মদ মিজানউদ্দিনের দপ্তরে যান। তিনি অপেক্ষমাণ কক্ষে অপেক্ষা করার সময় বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক এস এম তৌহিদ আল হোসেন, সহসভাপতি তন্ময়ানন্দ অভি, কর্মী মামুনসহ ৮ থেকে ১০ জন নেতা-কর্মী উপাচার্যের দপ্তরে যান। সেখানে তাঁরা সিরাজুম মুনীরের সঙ্গে বাগ্বিতণ্ডায় জড়িয়ে পড়েন। একপর্যায়ে তাঁরা সিরাজুম মুনীরকে মারধর করে মেঝেতে ফেলে দিয়ে চলে যান। এ সময় প্রশাসন ভবনের প্রধান ফটকে তালা লাগানো দেখে গেটম্যান কাশেমকেও মারধর করে তালা খুলে বেরিয়ে যান। পরে উপাচার্যের দপ্তরে থাকা কর্মকর্তা-কর্মচারীরা সিরাজুম মুনীরকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যান। সেখানে তাঁকে প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হয়। তাঁর কপাল ও পিঠে জখম হয়েছে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন অতিরিক্ত উপপ্রধান প্রকৌশলী দাবি করেন, ‘৩১ আগস্ট ঢাকার সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে আয়োজিত ছাত্রলীগের সমাবেশের নাম করে প্রধান প্রকৌশলীর কাছে নেতা-কর্মীরা মোটা অঙ্কের চাঁদা দাবি করেছে বলে শুনেছি। আজ দুপুরে ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক প্রধান প্রকৌশলীর সঙ্গে দেখা করতে চাইলে তিনি দেখা করেননি। এর জের ধরেই তাঁকে মারধর করা হতে পারে।’
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে এস এম তৌহিদ আল হোসেন বলেন, ‘আমরা উপাচার্য স্যারের সঙ্গে দেখা করার জন্য তাঁর দপ্তরে যাই। তিনি ব্যস্ত থাকায় আমরা সেখানে অপেক্ষা করছিলাম। সেখানে নেতা-কর্মীরা দলীয় আলোচনা শুরু করলে ভারপ্রাপ্ত প্রধান প্রকৌশলী বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে বাজে মন্তব্য করেন, যা সেখানে উপস্থিত নেতা-কর্মীরা সহ্য করতে পারেনি। তাই ধাক্কাধাক্কি হয়। পরে উপাচার্য, সহ-উপাচার্য স্যাররা সেখানে আসলে আমি নেতা-কর্মীদের বুঝিয়ে সেখান থেকে সরিয়ে নিয়ে আসি।’
চাঁদা চাওয়ার অভিযোগ অস্বীকার করে তৌহিদ বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু সম্পর্কে বাজে মন্তব্য করায় প্রধান প্রকৌশলীর অপসারণ দাবি করে আগামীকাল (শুক্রবার) আমরা উপাচার্যের কাছে স্মারকলিপি প্রদান কর্মসূচি গ্রহণ করেছি।’
যোগাযোগ করা হলে ভারপ্রাপ্ত প্রধান প্রকৌশলী সিরাজুম মুনীর এই ঘটনা নিয়ে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি। তবে বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে বাজে মন্তব্য করেছেন কি না, জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘বাজে মন্তব্য করার প্রশ্নই আসে না।’
বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য মুহম্মদ মিজানউদ্দিন জানান, ‘ঘটনাটি খতিয়ে দেখা হচ্ছে। জড়িতদের বিরুদ্ধে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।’