ম্যাচটি ঘিরে একাকার হয়ে গিয়েছিল সিলেটের মানুষ। রাজনৈতিক ভেদাভেদ ভুলে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে ফুটবলারদের উৎসাহ দিতে মাঠে ছুটে এসেছিলেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত ও সিলেটের মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী। ২৫ হাজার দর্শকের স্থানে খেলা দেখতে মাঠে হাজির হয়েছিলেন দ্বিগুণের মতো দর্শক। কাঠফাটা রোদে কেউ দুপুর ২টায়, কেউবা স্টেডিয়ামের ফটক ভেঙে মাঠে ঢুকেছেন সন্ধ্যা ৬টায়। সবার প্রত্যাশা ছিল, নেপালবধের মধ্য দিয়ে সিলেটকে উৎসবের নগরীতে পরিণত করা। কিন্তু সেটা আর হলো না। উল্টো বাড়তি দর্শকের চাপে একেবারে নাজেহাল মামুনুল-সোহেল রানারা। জয় তো দূরে থাক ০-১ গোলে ম্যাচ হার। ম্যাচের ৮৩ মিনিটে নেপালের হয়ে জয়সূচক একমাত্র গোলটি করেন সুশীল। আর এতেই দুই ম্যাচের সিরিজে সমতা ১-১ নিয়েই দেশে ফিরলেন নেপালিরা।
গতকাল মাঠে ঘাড়ের ওপর দর্শকের উপস্থিতিতে শুরু থেকেই নার্ভাস দেখাচ্ছিল বাংলাদেশের ফুটবলারদের। মাঠের এমন অবস্থার মধ্যে খেলা শুরু হচ্ছে, যেখানে থ্রো করার সুযোগও পাচ্ছিলেন না ফুটবলাররা। এমন পরিস্থিতিতে চলতে থাকা ম্যাচের দুই মিনিটেই সুযোগ পেয়ে যায় নেপাল। রবিন শ্রেষ্ঠার ফ্রি কিকে অসীমের হেড অসাধারণ দক্ষতায় রক্ষা করেন গোলরক্ষক রাসেল আহাম্মেদ লিটন। ১০ মিনিটে জাগজিত শ্রেষ্ঠার কর্নারে ফাঁকায় দাঁড়ানো ভুলানাথ পা ছোঁয়াতে ব্যর্থ হলে বেঁচে যায় স্বাগতিকরা। তবে দর্শকদের তুমুল উৎসাহে আস্তে আস্তে খোলস থেকে বেরুতে শুরু করেন বাংলাদেশের ফুটবলাররা। বিশেষ করে অধিনায়ক মামুনুল ইসলামের কল্যাণে মাঝ মাঠের নিয়ন্ত্রণ কিছুটা দখলে আসে স্বাগতিকদের। তবে মামুনুল-সোহেল রানার প্রচেষ্টার ওপর কাজে লাগাতে পারছিলেন স্থানীয় দুই ফুটবলার তকলিস ও ওয়াহেদ আহাম্মেদ। খুঁজেই পাওয়া যাচ্ছিল না ওই ম্যাচে অসাধারণ খেলা হেমন্ত ভিনসেন্ট বিশ্বাসকে। আর্মি স্টেডিয়ামে ওই দিন মাত্র ৩৫ মিনিট খেলেছিলেন হেমন্ত। তাতেই নিজেকে খুব ভালভাবেই চিনিয়েছেন এই ফরোয়ার্ড। সিফাতও ওই দিন যেমন খেলেছেন তার ধারে-কাছেও যেতে পারেননি গতকাল। দ্বিতীয়ার্ধে নিজেদের খেলার চেয়ে রেফারিদের সিদ্ধান্তের বিরোধিতায় বেশি সময় নষ্ট করে বাংলাদেশ। এ সুযোগে ম্যাচের ৭৮ মিনিটে গোল আদায় করে নেন সুশীল। ১-০ গোলে এগিয়ে যায় নেপাল। যেখান থেকে আর ঘুরে দাঁড়ানো সম্ভব হয়নি। বাংলাদেশের ফুটবলারদের বাজে খেলার কারণ হিসেবে তাদের ম্যাচের চেয়ে এর বাইরে নজর দেয়াকে দায়ী করলেন বাংলাদেশের হেড কোচ লোডউইক ডি ক্রুইফ। তার কথায়, আমার দলের কিছু ফুটবলার ছিল যাদের সময়ই দেখা গেছে কিভাবে ফ্যামেলি সদস্যদের খেলা দেখাবেন, বন্ধু-বান্ধবদের খেলা দেখাবেন। এসব নিয়ে ব্যস্ত দেখা গেছে তাদের। অনেক প্রভাব পড়েছে ম্যাচে। এটা স্বীকার করেছেন অধিনায়ক মামুনুল ইসলামও। তিনি বলেন, দলের দুই গুরুত্বপূর্ণ সদস্য তকলিস ও ওয়াহেদ স্থানীয়। তাই স্থানীয়দের নিয়ে ব্যস্ত থাকতে মনোযোগ কম ছিল। এটার সরাসরি প্রভাব পড়েছে ম্যাচে। এ ছাড়া এ ম্যাচে হারার পেছনে রেফারির ভূমিকা ছিল বলে মনে করেন মামুনুল। তার মতে, এসব ম্যাচে স্থানীয় দল একটু সুবিধা পেয়ে থাকে, যা মোটেও দেননি রেফারি জসিমউদ্দিন। এ ছাড়া বাংলাদেশের একটি সুযোগ অফসাইডের কারণে বাতিল করেছেন রেফারি। ম্যাচ হারার পেছনে এই কারণের পাশাপাশি দর্শকদের চাপকেও একটা কারণ বলে মনে করেন ক্রুইফ। তিনি বলেন, এমন দর্শকের সামনে আমার ফুটবলাররা নিজেদের সেরাটা দিতে পারেননি। এ জন্য দর্শকদের কাছে আমি ক্ষমা চাচ্ছি। তবে এরাই বাংলাদেশের ফুটবলকে পুনঃজাগরণ ঘটাবে বলে আমার বিশ্বাস। সাফের কথা উল্লেখ করে ক্রুইফ বলেন, নেপালের ২৫ হাজার দর্শকের সামনেও ওই দিন বাংলাদেশ দল দাঁড়িয়ে গিয়েছিল। এ অবস্থা থেকে কাটিয়ে ওঠার জন্য বেশি বেশি ম্যাচ আয়োজনের কথা বলেন তিনি। এদিকে নেপালও অবাক হয়েছে বাংলাদেশের এমন দর্শক দেখে। মাঠে দর্শকের উপস্থিতির পরও মোটেও শঙ্কিত ছিলেন না নেপালের আমেরিকান কোচ জ্যাক স্টেফানাস্কি। ম্যাচ শেষে তিনি বলেন, আসলে আমার কাছে দর্শকদের খুব ভদ্র মনে হয়েছে। আমার একবারের জন্যও মনে হয়নি ওরা আমাদের কোন ক্ষতি করতে পারে। এটাকে বাংলাদেশের ফুটবলের জন্য ইতিবাচক হিসেবে দেখছেন এ কোচ।