দীর্ঘ প্রায় ২০ মাস পর টাঙ্গাইলের প্রভাবশালী আওয়ামী লীগ নেতা ও বিশিষ্ট মুক্তিযোদ্ধা ফারুক আহমেদ চাঞ্চল্যকর হত্যাকাণ্ডের রহস্য উদঘাটন করেছে পুলিশ। তদন্তের একপর্যায়ে গ্রেফতার হওয়া আনিসুল ইসলাম রাজা ঘটনার সাথে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করে আদালতে জবানবন্দী দেন। হত্যাকাণ্ডে টাঙ্গাইলের প্রভাবশালী একটি পরিবারের দুই সন্তানসহ অন্তত সাতজন জড়িত মর্মে রাজা তার জবানবন্দীতে উল্লেখ করেছেন বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে। এই দু’জনের একজন টাঙ্গাইল-৩ (ঘাটাইল) আসনের সংসদ সদস্য আমানুর রহমান খান রানা ও অপরজন তার কনিষ্ঠ সহোদর কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সহসভাপতি সানিয়াত খান বাপ্পা। টাঙ্গাইল জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক পদে প্রার্থী হতে চেয়েছিলেন ত্যাগী নেতা ফারুক আহমেদ। এটাই তার জন্য কাল হয়ে দাঁড়ায়।
গত ১১ আগস্ট রাজাকে গোয়েন্দা পুলিশ গ্রেফতার করে। তিন দফায় ১৫ দিন রিমান্ডের পর গত ২৭ আগস্ট তিনি আদালতে জবানবন্দী দেন। তার জবানবন্দীর মধ্য দিয়ে চাঞ্চল্যকর এই হত্যা মামলার রহস্য উদঘাটন হয়েছে বলে পুলিশ সূত্র জানিয়েছে।
মামলায় জড়িত থাকার অভিযোগে মোহাম্মদ আলী নামে আরেকজনকে পুলিশ ২৪ আগস্ট গ্রেফতার করে। ১০ দিনের রিমান্ডে নিয়ে তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। মোহাম্মদ আলী শহরের দণি কলেজপাড়া এলাকার বাসিন্দা। আনিসুল ইসলাম রাজাও একই এলাকার।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, টাঙ্গাইলের অতিরিক্ত চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট শাহাদত হোসেনের কাছে দেয়া জবানবন্দীতে রাজা জানিয়েছেন, সংসদ সদস্য আমানুর রহমান খান রানা ঘটনার দিন রাতে রাজাকে দায়িত্ব দেন ফারুক আহমেদকে আওয়ামী লীগ অফিস থেকে কলেজপাড়া এলাকায় তার গ্লোবাল ট্রেনিং সেন্টারে ডেকে নেয়ার জন্য। আওয়ামী লীগ অফিসে যাওয়ার সময় পথেই রাজার সাথে ফারুক আহমেদের দেখা হয়। রাজা তখন নিজের রিকশা ছেড়ে দিয়ে ফারুক আহমেদের রিকশায় ওঠেন এবং তাকে গ্লোবাল ট্রেনিং সেন্টারে নিয়ে যান। সেখানে যাওয়ার পর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক প্রার্থী হওয়া নিয়ে উপস্থিত প্রভাবশালীদের সাথে ফারুক আহমেদের কথা হয়। তাদের একজন ফারুক আহমেদকে জানান, সাধারণ সম্পাদক পদে মেয়র প্রার্থী হবেন। সানিয়াত খান বাপ্পা ফারুক আহমেদকে এ পদে প্রার্থী হওয়া থেকে বিরত থাকার অনুরোধ করেন। ফারুক আহমেদ এ বিষয়ে রাজি হননি। কথাবার্তার একপর্যায়ে ফারুক আহমেদ ওই ট্রেনিং সেন্টারের অফিসক থেকে বের হওয়ার সাথে সাথে পেছন থেকে তাকে গুলি করা হয়। পরে অন্যরা ফারুক আহমেদের মুখ চেপে ধরেন। তার মৃত্যু নিশ্চিত হওয়ার পর প্রভাবশালী নেতার নির্দেশে সেখানে রক্ত মুছে ফেলা হয়। পরে একটি অটোরিকশায় লাশ বসিয়ে রাজাসহ দু’জন দুই পাশে বসেন এবং ফারুক আহমেদের বাসার কাছে তাকে ফেলে রেখে আসেন।
এ ব্যাপারে টাঙ্গাইলের পুলিশ সুপার সালেহ মোহাম্মদ তানভীরের সাথে যোগাযোগ করা হলে তদন্তের স্বার্থে তিনি কোনো কথা বলতে রাজি হননি।