প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, চলচ্চিত্র ও টেলিভিশন যে কোন সমাজের জন্য শক্তিশালী গণমাধ্যম। এই গণমাধ্যমের সফল ব্যবহারে বিনোদনের পাশাপাশি সমাজ সংস্কারেও ভূমিকা রাখতে হবে। প্রধানমন্ত্রী গতকাল জাতীয় গণমাধ্যম ইনস্টিটিউটে (নিমকো) বাংলাদেশ চলচ্চিত্র ও টেলিভিশন ইনস্টিটিউট এবং এর ১ম কোর্সের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির ভাষণে এ আহ্বান জানান। তিনি বলেন, আজ চলচ্চিত্র ও টেলিভিশনের ইতিহাসে নতুন মাইলফলক সৃষ্টি হলো। চলচ্চিত্র ও টেলিভিশন দেশের কৃষ্টি ও সংস্কৃতি এবং ঐতিহ্যকে বিশ্বের মাঝে ছড়িয়ে দেয়। তথ্য প্রদানের পাশাপাশি সাধারণ মানুষের চিত্তবিনোদনের খোরাক যোগায়। সমাজের অপকর্মগুলোকে চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দেয়। যে কোন ‘মেসেজ’ আধুনিক প্রজন্মের কাছে পৌঁছে দেয়ার জন্যও শক্তিশালী ভূমিকা পালন করে। তাই আমি আশা করবো বাংলাদেশ চলচ্চিত্র ও টেলিভিশন ইনস্টিটিউট তরুণদের মেধা বিকাশে কার্যকর ভূমিকা রাখবে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আরও বলেন, জাতীয় সত্তাকে বিকশিত করার সুযোগ এসেছে স্বাধীনতার মাধ্যমে। বঙ্গবন্ধু শিল্প সাহিত্যের চর্চা করতে পছন্দ করতেন। এর বিকাশেও আগ্রহী ছিলেন। তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধুর হাতে গড়া এফডিসিকে আধুনিক করার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। ডিসেম্বরের মধ্যে এফডিসি সমপূর্ণ ডিজিটাল হয়ে যাবে। তিনি বলেন, বন্ধ হয়ে যাওয়া প্রেক্ষাগৃহকে সচল ও আধুনিক করা দরকার। এ বিষয়ে কিছু কার্যকর পদক্ষেপ নেয়া প্রয়োজন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, বিশ্ব এগিয়ে যাচ্ছে। এর সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে হবে। তিনি বলেন, এ দেশের মানুষ অত্যন্ত মেধাবী। সুযোগ পেলে তারা অনেক কিছুই করতে পারবেন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ চলচ্চিত্র ও টেলিভিশন ইনস্টিটিউট থেকে মেধাবীরা যাতে সঠিক প্রশিক্ষণ পান সেই ব্যবস্থা আমরা গ্রহণ করেছি। এখান থেকে প্রশিক্ষণপ্রাপ্তদের দিয়েই বিশ্বের সঙ্গে প্রতিযোগিতা করে টিকে থাকার মতো মানসম্পন্ন চলচ্চিত্র ও টেলিভিশন অনুষ্ঠান নির্মাণ করতে হবে। কারণ, প্রতিযোগিতা ছাড়া সংস্কৃতির বিকাশ ঘটতে পারে না। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, বর্তমানে ২৭টি টেলিভিশন চালু রয়েছে, ভবিষ্যতে এর সংখ্যা ৪১-এ গিয়ে দাঁড়াবে। তিনি বলেন, আমরা এতগুলো টেলিভিশন ও রেডিও’র অনুমোদন দিয়েছি বিপুল সংখ্যক মানুষের কর্মসংস্থানের লক্ষ্যে। আমাদের লক্ষ্য সফল হয়েছে। তিনি বলেন, সিনেপ্লেক্স নির্মাণের ক্ষেত্রে কর কমানো হয়েছে। ঢাকার বাইরের জন্য আরও কর কমানো হবে। তিনি বলেন, আমরা চলচ্চিত্রে অশ্লীলতা এবং ভিডিও পাইরেসি বন্ধ করার উদ্যোগ নিয়েছি। সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ে দুস্থ শিল্পীদের জন্য একটি তহবিল গঠন করেছি। এশিয়ার সর্ববৃহৎ ফিল্ম আর্কাইভ ভবন নির্মাণ করছি। তিনি বলেন, অধিকার ভোগের পাশাপাশি অধিকার সংরক্ষণও করতে হবে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আশাবাদ ব্যক্ত করে বলেন, সুস্থধারার চলচ্চিত্র ও টেলিভিশন অনুষ্ঠান নির্মাণ প্রশিক্ষণ প্রদানে বাংলাদেশ চলচ্চিত্র ও ফিল্ম ইনস্টিটিউট গর্বিত প্রতিষ্ঠান হিসেবে অগ্রযাত্রা অব্যাহত রাখতে সমর্থ হবে। তথ্য সচিব মরতুজা আহমেদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত বাংলাদেশ চলচ্চিত্র ও টেলিভিশন ইনস্টিটিউটের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু এমপি। স্বাগত বক্তব্য রাখেন ইনস্টিটিউটের প্রধান নির্বাহী ড. মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর হোসেন। উপস্থিত ছিলেন নায়করাজ রাজ্জাক, সৈয়দ হাসান ইমাম, এটিএম শামসুজ্জামান, কবি আসাদ চৌধুরী, নাসিরুদ্দিন ইউসুফ বাচ্চু, সাইফুল ইসলাম চৌধুরী, মতিন রহমান, সোহানুর রহমান সোহান, কাজী হায়াৎ, মুশফিকুর রহমান গুলজার, আবু মুসা দেবু, রেজা লতিফ, মোহাম্মদ হোসেন জেমী, নাদের চৌধুরী, শহীদুল আলম সাচ্চু, ফারজানা ব্রাউনিয়া, ফেরদৌস, পপি, কাজী মারুফসহ চলচ্চিত্র ও টেলিভিশনের বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ। ‘সাংস্কৃতিক অগ্রযাত্রায় নবতরঙ্গ’ স্লোগানকে সামনে রেখে গঠিত বাংলাদেশ চলচ্চিত্র ও টেলিভিশন ইনস্টিটিউটের এক বছর মেয়াদি ডিপ্লোমা কোর্সের কোর্স পরিচালক মসিউদ্দিন শাকের। চলচ্চিত্র নির্মাণ, অভিনয়, ক্যামেরা, সম্পাদনা প্রশিক্ষণ, সংবাদপাঠ প্রশিক্ষণসহ বিভিন্ন বিষয়ে প্রশিক্ষণ দেবেন চলচ্চিত্র ও টেলিভিশনের বিজ্ঞজনেরা। বাংলাদেশ চলচ্চিত্র ও টেলিভিশন ইনস্টিটিউট পরিচালনার জন্য ২২ সদস্যবিশিষ্ট একটি গভর্নিং বডি এবং ১১ সদস্যবিশিষ্ট একাডেমিক কাউন্সিল গঠন করা হয়েছে। বর্তমানে দারুস সালাম এ ডব্লিউ চৌধুরী রোডস্থ জাতীয় গণমাধ্যম ইনস্টিটিউটে (নিমকো) বাংলাদেশ চলচ্চিত্র ও টেলিভিশন ইনস্টিটিউটের কার্যক্রম অস্থায়ীভাবে পরিচালিত হবে। পরে ২০ একর জমিতে একটি স্থায়ী ইনস্টিটিউট নির্মাণ করা হবে।