দেশি-বিদেশি বিনিয়োগকারীদের অংশগ্রহণে আন্তর্জাতিক এক বিনিয়োগ সম্মেলন গতকাল বুধবার ঢাকায় অনুষ্ঠিত হয়েছে। রাজধানীর পাঁচ তারকা সোনারগাঁও হোটেলে ‘আন্তর্জাতিক বিনিয়োগকারী ফোরাম, ২০১৪’ শীর্ষক দিনব্যাপী এ সম্মেলনের উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এ সময় তিনি উন্মুক্ত বাজার, বিনিয়োগবান্ধব পরিবেশ, দক্ষ জনশক্তি ও কৌশলগত অবস্থানের সুবিধা নিতে বাংলাদেশে বিদেশি বিনিয়োগকারীদের ব্যবসা সম্প্রসারণের আহ্বান জানান।
বিনিয়োগ বোর্ড আয়োজিত এ সম্মেলনে বাংলাদেশসহ বিশ্বের ২১টি দেশের ২৭৩ জন বিনিয়োগকারী যোগ দিয়েছেন। উদ্বোধন শেষে বিনিয়োগের বিভিন্ন খাতের ওপর চারটি কর্ম অধিবেশন অনুষ্ঠিত হয়। এসব কর্ম অধিবেশনে বিনিয়োগের সম্ভাবনার পাশাপাশি সমস্যাগুলোও চিহ্নিত করা হয়। আলোচনায় অংশ নিয়ে সরকারের মন্ত্রী, আমলা থেকে শুরু করে দেশি-বিদেশি বিনিয়োগকারীরা এসব সম্ভাবনা ও সমস্যার কথা তুলে ধরেন।
উদ্বোধনী বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিনিয়োগের আহ্বান জানিয়ে বলেন, অর্থনৈতিক উন্নয়নের লক্ষ্যে সরাসরি বিদেশি বিনিয়োগ বা এফডিআই আকর্ষণের জন্য পরিবেশ বিনিয়োগবান্ধব ও সহজতর করতে বাংলাদেশ সরকার বদ্ধপরিকর। বিশ্বমন্দা সত্ত্বেও পাঁচ বছর ধরে বাংলাদেশ গড়ে ৬ দশমিক ২ শতাংশ জাতীয় প্রবৃদ্ধি অর্জন করেছে।
প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, ‘আমাদের অনেক প্রতিবেশী নিম্ন আয়ের দেশ থেকে উন্নয়নশীল অর্থনীতির পথে যাত্রা শুরু করেছে। পাশাপাশি বিনিয়োগের জন্য বিভিন্ন দেশকে আঞ্চলিক ও সমন্বিত উৎপাদন প্রক্রিয়ায় অংশগ্রহণের সুযোগ করে দিয়েছে।’
বিনিয়োগ বোর্ডের নির্বাহী চেয়ারম্যান সৈয়দ আবদুস সামাদের সভাপতিত্বে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত, ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন বাংলাদেশ শিল্প ও বণিক সমিতি ফেডারেশনের (এফবিসিসিআই) সভাপতি কাজী আকরাম উদ্দিন আহমেদ, ফ্রান্স বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের (সিসিআইএফবি) সভাপতি ও লাফার্জ সুরমা সিমেন্টের প্রধান নির্বাহী তারেক আহমেদ, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সচিব আবুল কালাম আজাদ প্রমুখ।
এদিকে উদ্বোধনের পর একাধিক কর্ম অধিবেশন অনুষ্ঠিত হয়। এতে অংশগ্রহণকারী দেশি-বিদেশি বেশ কিছু উদ্যোক্তা ও বিনিয়োগকারী তাঁদের নিজেদের অভিজ্ঞতার কথা তুলে ধরেন। কৃষি, হালকা প্রকৌশল, অবকাঠামো খাতসহ বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলে বিনিয়োগ সম্ভাবনার বিভিন্ন দিক তুলে ধরা হয়। সেই সঙ্গে এসব খাতের অভ্যন্তরীণ ও বৈশ্বিক বাজার চাহিদার চিত্রও তুলে ধরেন তাঁরা।
এক কর্ম অধিবেশনে রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) ভাইস চেয়ারম্যান শুভাশীষ বসু বলেন, বিশ্বের ৩৮টি দেশে বাংলাদেশ জিএসপি-সুবিধা পেয়ে থাকে। এ সুবিধাকে কাজে লাগাতে পারেন বিদেশি বিনিয়োগকারীরা। জাহাজ নির্মাণ, খেলনা সামগ্রীসহ রপ্তানিমুখী বিভিন্ন শিল্প খাতে বিদেশি বিনিয়োগের সুযোগ রয়েছে বলে তিনি জানান।
আরেক কর্ম অধিবেশনে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আতিউর রহমান বিদেশি বিনিয়োগকারীদের অবকাঠামো, জ্বালানি ও স্বাস্থ্যসেবা খাতে বিনিয়োগের আহ্বান জানান।
কর্ম অধিবেশনে অংশ নিয়ে ভারতীয় প্রতিষ্ঠান সিইএটি বাংলাদেশের ব্যবস্থাপনা পরিচালক রাজীব কুমার জৈন বলেন, ‘নতুন বিনিয়োগ আনতে হলে ভ্যাট আইনকে যুগোপযোগী করতে হবে।’
ঢাকা চেম্বারের সাবেক সভাপতি ও ব্যবসায়ী নেতা আসিফ ইব্রাহীম কান্ট্রি ব্র্যান্ডিং বিষয়ে জোর দেন।
কৃষি বাণিজ্যের সম্ভাবনা শীর্ষক কর্ম অধিবেশনে এ খাতের সম্ভাবনাময় তিনটি বিনিয়োগ ক্ষেত্রের চিত্র তুলে ধরা হয়। এগুলো হলো খাদ্য প্রক্রিয়াজাতকরণ (চিপসসহ আলুর তৈরি বিভিন্ন সামগ্রী), মাখন ও পনির এবং ধানের কুঁড়া থেকে তৈরি ভোজ্যতেল উৎপাদন।
বোম্বে সুইটসের বিপণন বিভাগের প্রধান ডিডি ঘোষাল বলেন, আলু প্রক্রিয়াজাতকরণের মাধ্যমে বিভিন্ন খাদ্যসামগ্রী তৈরি খাতে বিনিয়োগের এখনই সুবর্ণ সময়। উৎপাদন খরচ কম হওয়ায় অভ্যন্তরীণ বাজারের পাশাপাশি বিদেশে এর একটি বড় বাজার রয়েছে। তবে এ খাতের উন্নয়নে শস্যবিমা–ব্যবস্থা চালু করা প্রয়োজন।
এসিআই লিমিটেডের নির্বাহী পরিচালক এফ এইচ আনসারী বলেন, ধানের কুঁড়া থেকে উৎপাদিত তেলের একটি সম্ভাবনাময় অভ্যন্তরীণ বাজার তৈরি হয়েছে বাংলাদেশে। এখন পর্যন্ত দেশের ভোজ্যতেলের চাহিদা মেটানো হয় আমদানির মাধ্যমে। আমদানি কমিয়ে এখানকার উৎপাদিত তেলের মাধ্যমে অভ্যন্তরীণ চাহিদার অনেকটাই মেটানো যায়।