দায়িত্ব পেয়েই বিপাকে পড়েছেন সিলেট জেলা ছাত্রদলের সভাপতি সাঈদ আহমদ। গতকাল সন্ধ্যায় আরও ৭ নেতাকর্মীসহ পুলিশের হাতে আটক হন তিনি। এর আগে দুপুর থেকে বিকাল পর্যন্ত তিনি ৩ ঘণ্টা অসন্তুষ্ট নেতাকর্মীদের হাতে অবরুদ্ধ ছিলেন। মাত্র আগের দিনই সিলেট জেলা ছাত্রদলের সভাপতির দায়িত্ব পেয়েছিলেন সাঈদ আহমদ।
জানা গেছে, গতকাল সন্ধ্যার দিকে নগরীর ইলেকট্রিক সাপ্লাই এলাকা থেকে উপশহরস্থ বাসায় ফিরছিলেন ছাত্রদলের নবগঠিত কমিটির সভাপতি সাঈদ আহমদ। পথে তাকে আটক করে বিমানবন্দর থানা পুলিশ। পুলিশ বলছে নিরাপত্তার স্বার্থেই তাকে আটক করা হয়েছে। এর আগে জুমার নামাজ শেষে নগরীর হাউজিং এস্টেট মসজিদে জুমার নামাজ আদায় শেষে মহানগর বিএনপির সাবেক আহবায়ক ও বিএনপির কেন্দ্রীয় সদস্য ডা. শাহরিয়ার হোসেন চৌধুরীর হাউজিং এস্টেটস্থ বাসায় তার সাথে দেখা করতে গেলে পদবঞ্চিত ও নাখোশ নেতাকর্মীদের রোষানলে পড়েন ছাত্রদলের নতুন সভাপতি। সাঈদ আহমদ ডা. শাহরিয়ারের বাসায় আছেন, এমন খবর পেয়ে সেখানে জড়ো হন জেলা ছাত্রদলের সাবেক সাধারণ সম্পাদক সাফেক মাহবুব, শাকিল মুর্শেদ, সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক মাহবুবুল হক চৌধুরী, মহানগর ছাত্রদলের সাবেক সমাজ সেবাবিষয়ক সম্পাদক রেজাউল করিম নাচনসহ অর্ধশতাধিক নেতাকর্মী। তারা ডা. শাহরিয়ারের বাসা ঘেরাও করে রাখেন। এসময় তারা সাঈদ আহমদকে বাসা থেকে বের করে দিতে ডা. শাহরিয়ারকে অনুরোধ করেন। কিন্তু তিনি রাজি হননি। এ সময় ডা. শাহরিয়ারের স্ত্রী বিক্ষুব্ধ নেতাকর্মীদের বাসার সামনে থেকে চলে যাওয়ার জন্য অনুরোধ করেন। তাতে কান না দিয়ে ঘেরাওকারীরা বাসার সামনের সড়ক অবরোধ করে স্লোগান দিতে থাকে। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে এসে বাসার সামনে থাকা ছাত্রদল নেতাকর্মীদের সরিয়ে দেয়। পরে বিক্ষুব্ধ নেতাকর্মীরা হাউজিং এস্টেট রাস্তার মুখে এসে অবস্থান নেন।
পুলিশ ছাত্রদলের বিদ্রোহী নেতাকর্মীদের সরিয়ে দেয়ার পর মোটরসাইকেলযোগে সাপ্লাই গ্রুপের বেশ কয়েকজন নেতাকর্মী ডা. শাহরিয়ারের বাসায় আসেন। এ সময় স্থানীয় ওয়ার্ড কাউন্সিলর ও মহানগর বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক রেজাউল হাসান কয়েস লোদীর হস্তক্ষেপে ছাত্রদল জেলা কমিটির সভাপতি সাঈদ আহমদকে পীর মহল্লার রাস্তা দিয়ে সাপ্লাই রোডে বিদ্যুৎ অফিসে নিয়ে যাওয়া হয়। এ খবর ছাত্রদলের বিদ্রোহী নেতাকর্মীদের কাছে পৌঁছুলে তারা হাউজিং এস্টেটের রাস্তার মুখ ছেড়ে সাপ্লাইয়ে পৌঁছেন। এসময় সাপ্লাই গ্রুপের নেতাকর্মীদের সাথে বিদ্রোহী নেতাকর্মীদের সংঘর্ষ বাধে। এ সময় দুই পক্ষেপ ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া ও ককটেলের বিস্ফোরণ ঘটে। সংঘর্ষে অন্তত ১০ জন আহত হন। পুলিশ ঘটনাস্থলে এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে দুই রাউন্ড ফাঁকা গুলি ও টিয়ারশেল নিক্ষেপ করে।
বিমানবন্দর থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জানান শাহ জামাল জানান, দুপুরে নিজ দলের নেতাকর্মীদের হাতেই অবরুদ্ধ ছিলেন ছাত্রদলের সভাপতি সাঈদ আহমদ। পুলিশ তাকে উদ্ধার করে দেওয়ার পর বিকেলে ইলেকট্রিক সাপ্লাই এলাকায় দু’পক্ষে আবার সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে চেষ্টা করলে পুলিশের সাথে সংঘর্ষ বাঁধে। এ সময় পুলিশ দুই রাউন্ড ফাঁকা গুলি ও টিয়ারশেল নিক্ষেপ করে। পরে নিরাপত্তার স্বার্থে সন্ধ্যায় ছাত্রদল সভাপতিসহ ৮ জনকে আটক করা হয়েছে। তারা এখন কতোয়ালি থানায় রয়েছেন।
নবগঠিত জেলা ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক রাহাত চৌধুরী মুন্না বলেন, যারা ছাত্রদলের কমিটিতে স্থান পায়নি পদবঞ্চিত হয়েছে এরাই কেন্দ্রকে অসম্মান করে অস্থিরতার সৃষ্টি করতে চাইছে। তিনি বলেন, কেন্দ্রের সঙ্গে আলাপ করে পদক্ষেপ নেয়া হবে।
মহানগর ছাত্রদলের সাবেক সমাজসেবা বিষয়ক সম্পাদক রেজাউল করিম নাচন বলেন, নেতাকর্মীদের মতামত না নিয়েই একটি পকেট কমিটি চাপিয়ে দেয়া হয়েছে। ছাত্রদলের ত্যাগী ও পরীক্ষিত নেতাকর্মীদের বাদ দিয়ে ছাত্রশিবির থেকে আসা অনেককেই এ কমিটিতে স্থান দেয়া হয়েছে। ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা এ কমিটি মেনে নেবে না। এদের প্রতিরোধ করা হবে। তিনি জানান, কমিটিতে স্থান পাওয়া অনেকেও অস্বস্তিতে আছেন, শিগগিরই তারা পদত্যাগ করবেন।