খুলনা অঞ্চলের ৩৭টি বাণিজ্যিক ব্যাংকে খেলাপি ঋণের পরিমাণ ১,৯৩৭ কোটি টাকা। এর মধ্যে শুধু রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন ৬ ব্যাংকেই খেলাপি ঋণ ১,২১৪ কোটি টাকা। খুলনার বেসিক ব্যাংকের অবস্থা খুবই শোচনীয়। এছাড়া বেসরকারি ব্যাংকের মধ্যে প্রিমিয়ার ও আইসিবি ব্যাংকের খুলনা শাখায় খেলাপি ঋণের হার সব থেকে বেশি। সমপ্রতি বাংলাদেশ ব্যাংকের খুলনা আঞ্চলিক কার্যালয়ের এক প্রতিবেদনে এ চিত্র উঠে এসেছে। প্রতিবেদনে দেখা গেছে, খেলাপি ঋণের কারণে ব্যাংকগুলো উৎপাদনশীল খাতে বিনিয়োগ কমিয়ে দিয়েছে। জানা গেছে, চলতি বছরের ৩০শে জুন পর্যন্ত খুলনা অঞ্চলের রাষ্ট্রায়ত্ত ৬টি ব্যাংকসহ মোট ৩৭টি ব্যাংকের প্রদানকৃত ঋণের পরিমাণ ১৬,৬৯৭ কোটি টাকা। যার ১,৯৩৭ কোটি টাকা খেলাপি ঋণ হিসেবে গণ্য করা হয়েছে। এর মধ্যে শুধু রাষ্ট্রায়ত্ত সোনালী, রূপালী, জনতা, অগ্রণী, বেসিক এবং কৃষি ব্যাংকের খেলাপি ঋণ ১,২১৪ কোটি টাকা। অথচ ২০১৩ সালের ৩০শে জুন পর্যন্ত রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোয় খেলাপি ঋণ ছিল ৯২৪ কোটি টাকা। চলতি বছরের শুরু থেকেই খেলাপি ঋণ বাড়ছে। সূত্র জানায়, সোনালী ব্যাংকের খুলনা অঞ্চলের ২,৮৭৬ কোটি টাকা ঋণের বিপরীতে খেলাপির পরিমাণ ৫২৭ কোটি টাকা, যা মোট ঋণের ১৮%। এ ছাড়া অগ্রণী ব্যাংকের ১,৩৪৪ কোটি টাকার বিপরীতে খেলাপি ঋণ ১৪৬ কোটি, জনতা ব্যাংকের ১,৪৭৯ কোটি টাকার বিপরীতে ১৪৫ কোটি, কৃষি ব্যাংকের ১,৮৫২ কোটি টাকার বিপরীতে ২০৮ কোটি, রূপালী ব্যাংকের ১,৩২৪ কোটি টাকার বিপরীতে খেলাপি ঋণ ১০৫ কোটি এবং বেসিক ব্যাংকের ২৭৭ কোটি টাকা ঋণের বিপরীতে খেলাপি ঋণের পরিমাণ ৮৩ কোটি টাকা। খেলাপি ঋণের ব্যাপারে রাষ্ট্রায়ত্ত ৬টি ব্যাংকের মধ্যে ভাল অবস্থানে রয়েছে রূপালী। তাদের খেলাপি ঋণের হার ৮%। সব থেকে খারাপ অবস্থানে রয়েছে বেসিক ব্যাংক। তাদের খেলাপি ঋণ ২৮.৭৮%। মার্চ মাসে বেসিক ব্যাংকের খেলাপি ঋণ ছিল ৪৮ কোটি। ৩ মাসের ব্যবধানে তা ৮৩ কোটিতে পৌঁছেছে। বেসরকারি ব্যাংকগুলোর মধ্যে প্রিমিয়ার ব্যাংকের খেলাপি ঋণের হার ৭৫%। ব্যাংকটির ১১০ কোটি টাকা ঋণের মধ্যে ৭৮৩ কোটিকেই খেলাপি হিসেবে গণ্য করা হয়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদনে দেখা গেছে, বেসরকারি যমুনা, স্টেট ব্যাংক অব ইন্ডিয়া ও সাউথ বাংলা ব্যাংকের বিনিয়োগের পরিমাণ একেবারেই কম।
অন্যদিকে উত্তরা, এনসিসি ও ইসলামী ব্যাংক বিনিয়োগ ও ঋণ আদায়ে ভাল ব্যাংকের তালিকার প্রথম দিকে অবস্থান করছে। ব্যাংকাররা জানান, গত ডিসেম্বর মাসে বাংলাদেশ ব্যাংকের বিআরপিডিতে রাজনৈতিক বিবেচনায় দু’টি সার্কুলার জারি করা হয়। ১৪ ও ১৫ নম্বর সার্কুলার দু’টিতে ডাউন পেমেন্ট ছাড়াই খেলাপি ঋণ পুনঃতফসিল করতে ব্যাংকগুলোকে নির্দেশ দেয়া হয়। এর আগে পুনঃতফসিল করতে ২০ থেকে ২৫ শতাংশ টাকা পরিশোধ করতে হতো। মূলত এ কারণেই খেলাপি ঋণের পরিমাণ বেড়েছে বলে মন্তব্য করেছেন তারা। বাংলাদেশ ব্যাংকের ব্যাংক পরিদর্শন বিভাগের এক কর্মকর্তা জানান, ঋণ খেলাপি হিসেবে গণ্য হলে প্রথমে তাকে নোটিস দেয়া হয়। নোটিস দেয়ার পরও ঋণ পরিশোধে উদ্যোগী না হলে তাদের বিরুদ্ধে অর্থঋণ আদালতে মামলা করা হয়। একটি মামলার বিচার শেষ হতে ন্যূনতম ৪-৫ বছর সময় লাগে। তিনি জানান, মামলা করেও ঋণ আদায় করা সহজ হয় না। ঋণ নেয়ার সময় জামানত রাখা সম্পদ ঋণের টাকার সমপরিমাণ হয় না। সম্পদ বিক্রি করেও ওই টাকা পাওয়া যায় না। এছাড়া যারা ঋণ খেলাপি হয়, তারা সমাজে প্রভাবশালী। এজন্য মামলা শেষে সম্পদ বিক্রি করার জন্য নিলামে গেলে তারাই আবার বেনামে সম্পদ কিনে নেয়। বাংলাদেশ ব্যাংক খুলনা শাখার মহাব্যবস্থাপক প্রকাশ চন্দ্র ভদ্র বলেন, খেলাপি ঋণের পরিমাণ সিঙ্গেল ডিজিটের মধ্যে রাখতে আমরা সব সময় ব্যাংকগুলোকে পরামর্শ দেই ও মনিটরিং করি। প্রতি তিন মাস অন্তর পরিদর্শন বিভাগের সভায় ঋণ নিয়ে আলোচনা হয়। কয়েকটি ব্যাংক বাদে অন্য ব্যাংকগুলোর খেলাপি ঋণের আদায় ভাল।