২০০ উড়ন্ত শিয়ালের দলটিকে একসঙ্গে পাওয়া গেছে দিনাজপুরের আলতাদীঘিতে। এগুলো আসলে বাদুড়। মুখ শিয়ালের মতো। একসঙ্গে এত উড়ন্ত শিয়াল বাংলাদেশে আছে, কেউ জানত না। এর আগে এদের কালেভদ্রে দেখা যেত।
প্রজাপতিটির নাম জঙ্গল গ্লোরি। একে দেখা গেছে বান্দরবানের থানচিতে।
আর সবুজ ব্যাঙ! শুধু সুন্দরবনেই আছে বলে এত দিন ধারণা ছিল। কিন্তু এদের দেখা গেছে সাভার ও পাবনায়।
ইন্টারন্যাশনাল ইউনিয়ন ফর কনজারভেশন অব নেচার (আইইউসিএন) ও বন বিভাগের যৌথ চেষ্টায় এসব প্রাণীর খোঁজ পাওয়া গেছে। বাংলাদেশের বিপদাপন্ন প্রাণীদের তালিকা হালনাগাদ করার উদ্যোগের অংশ হিসেবে প্রাণীদের খোঁজখবরে নেমেছে সরকারি ও আন্তর্জাতিক সংস্থা দুটি। গতকাল সোমবার রাজধানীর স্পেকট্রা কনভেনশন সেন্টারে আয়োজিত এক কর্মশালায় দেশে নতুনভাবে দেখা পাওয়া হরেক রকমের প্রাণীদের পরিচয় করিয়ে দেওয়া হয়।
দেশের এক হাজার ৭০০ প্রাণীর অবস্থা যাচাই করতেই আইইউসিএন দুই বছরব্যাপী একটি প্রকল্প শুরু করেছে। গতকাল ২৩৯টি প্রাণী কোন অবস্থায় আছে, তার প্রাথমিক ফলাফল তুলে ধরা হয়। এর আগে সর্বশেষ ২০০০ সালে এক হাজার প্রাণীর ওপরে একটি মূল্যায়ন পরিচালিত হয়েছিল। তবে সেখানে স্তন্যপায়ী, সরীসৃপ, উভচর, মাছ ও পাখি—এই পাঁচটি বর্গে ভাগ করে মূল্যায়নটি করা হয়েছিল। এবার নতুন করে যুক্ত করা হয়েছে প্রজাপতি ও চিংড়িবর্গের প্রাণীদের।
ওই সাতটি বর্গের প্রাণীদের মূল্যায়নের দায়িত্বে থাকা প্রধান তত্ত্বাবধায়কেরা এ বিষয়ে প্রাথমিক তথ্য-উপাত্ত তুলে ধরেন। প্রধান বন সংরক্ষক ইউনুস আলী, বন বিভাগের বন্য প্রাণী ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগের প্রধান তপন কুমার দে, আইইউসিএন বাংলাদেশের দেশীয় প্রতিনিধি ইশতিয়াক উদ্দিন আহমেদসহ দেশের খ্যাতনামা বন্য প্রাণী বিশেষজ্ঞরা প্রাথমিক মূল্যায়নের ওপরে মতামত তুলে ধরেন।
উড়ন্ত শিয়াল বাদুড়: এদের আদি বসতি ছিল অস্ট্রেলিয়ায়। বাংলাদেশ এদের কালেভদ্রে দেখা গেছে। কোথাও একটি বা কোথায় দুটি। কিন্তু একসঙ্গে কলোনি বা বসতি করে এরা দিনাজপুরের আলতাদীঘিতে বাস করে—এ খবর প্রাণীবিজ্ঞানীরা এত দিন জানতেন না। গত বছর দিনাজপুরে এই আশ্চর্য ধরনের প্রাণীটির দেখা পাওয়া গেছে। এদের মুখটি শিয়ালের মতো। দুটি হাত দেখতে অনেকটা পাখার মতো। এরা মূলত গাছেই থাকে। নদীর পরিষ্কার পানি আর ফলমূল এদের খাদ্য। এদের প্রধান শত্রু কীটনাশক ও সার। এরা যেখানে থাকে, সেখানকার পানি ও প্রকৃতি অপেক্ষাকৃত কম দূষিত বলে ধরে নেওয়া হয়।
জঙ্গল গ্লোরি প্রজাপতি: রেড ডেটা লিস্ট প্রকল্পের গবেষণায় বান্দরবানের থানচিতে দেখা গেছে এক নতুন ধরনের প্রজাপতি। এদের পাখায় রয়েছে এক অদ্ভুত ধরনের রেখা। সূর্যের আলো ওই পাখায় পড়লে সেখান থেকে নীলাভ আলোর বিচ্ছুরণ দেখা যায়। শুকনো পাতায় বসত গড়া এই প্রজাপতির নাম তাই জঙ্গল গ্লোরি।
চীন, জাপান ও কোরিয়া যৌথভাবে ২০০৯ সালে একটি সৌরবিদ্যুৎ উৎপাদন সেল উদ্ভাবন করেছে। অন্য সেলের তুলনায় এই সেল থেকে ১০ গুণ বেশি আলো পাওয়া যায়। ওই সৌরসেল তৈরি করা হয়েছিল এই জঙ্গল গ্লোরি প্রজাপতির পাখার নকশাকে অনুসরণ করে। এসব তথ্য জানিয়ে রেড ডেটা লিস্টের প্রজাপতিবর্গের দলনেতা মনোয়ার হোসেন জানান, ১৩২ বছর আগে দুই ব্রিটিশ সেনা কর্মকর্তা মার্শাল জেফ ও লিওনেল ডি নিসেভিলির লেখা এক প্রতিবেদনে সিলেট জেলায় এই বিশেষ ধরনের প্রজাপতিটির কথা উল্লেখ ছিল।
মনোয়ার হোসেন জানান, দেশে এ পর্যন্ত ৩০১ প্রজাতির প্রজাপতি দেখা গেছে। এর মধ্যে এই প্রকল্পের আওতায় যে ৫৮টি প্রজাতির ওপর মূল্যায়ন হয়েছে, তার মধ্যে ২৯টি বিপদাপন্ন অবস্থায় আছে। ঘাস, বৃক্ষ ও লতাগুল্ম নিঃশেষ হওয়ায় এরা বসতি হারিয়ে ফেলছে।
বিপন্ন পরিযায়ী পাখি: একটির নাম নর্দম্যান সবুজ পা। আরেকটি লালস্যালা পাখি। প্রথমটিকে উপমহাদেশে সর্বশেষ দেখা গিয়েছিল পাকিস্তানে। দ্বিতীয়বার দেখা গেল বাংলাদেশের সোনাদিয়া ও নিঝুম দ্বীপে। দেশে প্রথমবারের মতো দেখা গেছে কালো ইগল, সিলেন্ডারবিল ও রেড ফালারোপ জাতের চিল। পাখি পর্যবেক্ষণ দলটির প্রধান ইনাম আল হক বলেন, ‘বসতি হারিয়ে আমাদের অনেক পাখি বিপন্ন হতে চলেছে। এদের বাঁচানোর উদ্যোগের অংশ হিসেবেই এই তালিকা করা হচ্ছে।’