পবিত্র হজসহ কয়েকটি বিষয়ে দেওয়া বক্তব্যের কারণে ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তিমন্ত্রী আবদুল লতিফ সিদ্দিকীকে মন্ত্রিপরিষদ ও দল থেকে বাদ দেওয়া হচ্ছে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গতকাল বৃহস্পতিবার সিলেট ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে যাত্রাবিরতির সময় দলের উপস্থিত নেতাদের এ সিদ্ধান্তের কথা জানিয়েছেন বলে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক মিসবাহউদ্দিন সিরাজ সাংবাদিকদের জানান। তিনি সাংবাদিকদের বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, আপনারা তো ইতিমধ্যেই জেনেছেন, তাঁকে (লতিফ) মন্ত্রিসভায় রাখব না। দলেও রাখব না।’ লন্ডন থেকে ঢাকায় ফেরার পথে গতকাল বৃহস্পতিবার সকালে সিলেটের ওসমানী বিমানবন্দরে যাত্রাবিরতি করেন প্রধানমন্ত্রী। এ সময় আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক মিসবাহউদ্দিন সিরাজ, জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আবদুজ জহির চৌধুরী ও সাবেক মেয়র বদরউদ্দিন আহমদ কামরানসহ কয়েকজন নেতা বিমানবন্দরে উপস্থিত ছিলেন। পরে তাঁরা প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে তাঁদের আলাপের বিষয় সাংবাদিকদের জানান। প্রধানমন্ত্রী গতকাল সকাল ১০টা ৪০ মিনিটে ঢাকায় এসে পৌঁছান।
মিসবাহউদ্দিন সিরাজ সাংবাদিকদের বলেন, নেত্রী (শেখ হাসিনা) তাঁদের কাছে সিলেটের সাংগঠনিক বিষয়ে খোঁজখবর নিয়েছেন। একপর্যায়ে লতিফ সিদ্দিকীর প্রসঙ্গ আসে। তখন প্রধানমন্ত্রী বলেন, তিনি ও তাঁর পরিবারের অনেকেই একাধিকবার পবিত্র হজ পালন করেছেন। লতিফ সিদ্দিকীর কথায় প্রধানমন্ত্রী খুবই মর্মাহত হয়েছেন।
জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে যোগ দিতে প্রধানমন্ত্রী গত ২১ সেপ্টেম্বর যুক্তরাষ্ট্রে যান। নিউইয়র্ক থেকে লন্ডন হয়ে তিনি দেশে ফেরেন। তাঁর সফরসঙ্গীদের মধ্যে মন্ত্রী আবদুল লতিফ সিদ্দিকীও ছিলেন। গত রোববার নিউইয়র্কে টাঙ্গাইল সমিতির সঙ্গে মতবিনিময় অনুষ্ঠানে লতিফ সিদ্দিকী হজ, তাবলিগ জামাত, প্রধানমন্ত্রীর ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয় ও সাংবাদিকদের সম্পর্কে নানা মন্তব্য করেন। তাঁর মন্তব্যে বিভিন্ন মহলে তীব্র প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়।
তবে গতকাল বৃহস্পতিবার পর্যন্ত মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে লতিফ সিদ্দিকীর বিষয়ে কোনো নির্দেশনা যায়নি বলে প্রথম আলোকে জানিয়েছেন মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের একজন কর্মকর্তা।
গতকাল শেরপুরের নালিতাবাড়ীতে এক অনুষ্ঠানে কৃষিমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য মতিয়া চৌধুরী বলেছেন, লতিফ সিদ্দিকী যে বক্তব্য দিয়েছেন, এর দায়দায়িত্ব তাঁর ব্যক্তিগত। ওই বক্তব্যের পর প্রধানমন্ত্রী সঙ্গে সঙ্গে তাঁকে মন্ত্রিসভা থেকে সরিয়ে নিয়েছেন। এ ব্যাপারে তিনি বিন্দুমাত্র দ্বিধা করেননি। তিনি বলেন, এটি রাষ্ট্রপতির এখতিয়ারের বিষয়। রাষ্ট্রপতি হজে আছেন। তিনি দেশে ফিরলে রতিফ সিদ্দিকীর বিষয়ে ব্যবস্থা চূড়ান্ত করবেন।
প্রসঙ্গত, সংবিধান অনুযায়ী কোনো মন্ত্রী রাষ্ট্রপতির কাছে পেশ করার জন্য প্রধানমন্ত্রীর কাছে পদত্যাগপত্র দিলে তাঁর পদ শূন্য হবে। আবার প্রধানমন্ত্রী যেকোনো সময়ে কোনো মন্ত্রীকে পদত্যাগ করতে অনুরোধ করতে পারেন এবং ওই মন্ত্রী অনুরূপ অনুরোধ পালনে অসমর্থ হলে প্রধানমন্ত্রী রাষ্ট্রপতিকে ওই মন্ত্রীর নিয়োগের অবসান করার পরামর্শ দিতে পারেন।
লতিফ সিদ্দিকীর বিষয়ে কোন প্রক্রিয়াটি অনুসরণ করা হবে, তা এখনো স্পষ্ট নয়।
প্রধানমন্ত্রী আজ বিকেল চারটায় তাঁর সরকারি বাসভবন গণভবনে সংবাদ সম্মেলন আহ্বান করেছেন। প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব এ কে এম শামীম চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে প্রধানমন্ত্রীর অংশগ্রহণের বিষয় অবহিত করতে এই সংবাদ সম্মেলন ডাকা হয়েছে। তবে সাংবাদিকেরা চাইলে অন্য বিষয়েও প্রশ্ন করতে পারবেন।
আরও ১১ মামলা: আগের দিন বুধবার লতিফ সিদ্দিকীর বিরুদ্ধে আটটি মামলার পর গতকালও দেশের বিভিন্ন জায়গায় আরও ১১টি মামলা হয়েছে। এ নিয়ে তাঁর বিরুদ্ধে মোট ১৯টি মামলা হলো। গতকাল চট্টগ্রাম ও চাঁদপুরে দুটি করে এবং সিরাজগঞ্জ, জামালপুর, বরগুনার পাথরঘাটা, বরিশাল, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, নোয়াখালী ও ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় একটি করে মামলা হয়েছে। প্রায় সবগুলো মামলায় তাঁর বিরুদ্ধে সমন জারি করা হয়েছে।
জাতীয় প্রেসক্লাবে ঢাকা মহানগর (দক্ষিণ) ছাত্রদল আয়োজিত সমাবেশে ঢাকা মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক মির্জা আব্বাস দাবি করেছেন, লতিফ সিদ্দিকীর বক্তব্যের জন্য আওয়ামী লীগকেও ক্ষমা চাইতে হবে।