‘ক্লাবের চেয়েও বিশেষ কিছু’—এই আপ্ত বাক্যকে বুকে ধারণ করেই বার্সেলোনা ক্লাবের পথচলা। হ্যাঁ, বার্সেলোনা তো কেবল একটা ফুটবল ক্লাবই নয়, বরং একটি বিশেষ রাজনৈতিক প্লাটফর্মও। কাতালানিয়ার জাতীয়তাবাদী আন্দোলনের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত বার্সেলোনা স্বাধীন কাতালান ভূমির সমর্থকও। কাতালানরা এখন প্রস্তুত হচ্ছে স্বাধীন আবাসভূমি প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে গণভোটে ভোটাধিকার প্রয়োগের। এখন প্রশ্ন হচ্ছে, স্বাধীন কাতালান রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠিত হলে ফুটবল ক্লাব হিসেবে বার্সেলোনার কী হবে! বিশ্বের অন্যতম জনপ্রিয় এই ক্লাবটি কি স্প্যানিশ লিগে খেলতে পারবে? বার্সেলোনা না থাকলে স্প্যানিশ লিগের কী হবে? আর স্প্যানিশ লিগে না খেলতে পারলে ক্লাব হিসেবে বার্সেলোনাই বা কীভাবে ধরে রাখবে আজকের শানশওকত!
কাতালানিয়ার গণভোট যত এগিয়ে আসছে, ফুটবল বিশ্বে এই প্রশ্নগুলো উঠছে তত বেশি করে। অনেকেই আশঙ্কা করছেন, সত্যিই যদি স্বাধীন কাতালানিয়া প্রতিষ্ঠিত হয়ে যায়, তাহলে তো স্প্যানিশ ফুটবলই সবচেয়ে বেশি ক্ষতির সম্মুখীন হবে। কারণ, বার্সেলোনা, সে যতই কাতালানিয়ার সমর্থক হোক না কেন, তাদের ছাড়া কি স্প্যানিশ লিগ কল্পনা করা যায়? রিয়াল মাদ্রিদ-বার্সেলোনার দ্বৈরথ যেখানে থাকবে না, সেই লিগের প্রতি সাধারণ দর্শকদের আগ্রহই বা থাকবে কেন?
স্প্যানিশ লা লিগার সভাপতি হাভিয়ের তেবেস সোজাই জানিয়ে দিয়েছেন, কাতালানিয়া স্বাধীন হয়ে গেলে লা লিগায় কোনোমতেই খেলতে পারবে না বার্সেলোনা। বার্সাকে যদি লিগে খেলাতেই হয়, তাহলে অবশ্যই স্প্যানিশ পার্লামেন্টে এ-সংক্রান্ত আইন সংস্কার করতে হবে।
তেবেস আইনের কথা বললেও তিনিও কোনো মতেই ব্যাপারটা মেনে নিতে পারছেন না। তিনিও বলেছেন, বার্সেলোনা ছাড়া স্প্যানিশ লিগ কল্পনাও করা যায় না। রিয়াল মাদ্রিদ-বার্সেলোনার প্রতিদ্বন্দ্বিতা না থাকলে এই লিগের বাণিজ্যিক পরিস্থিতি কী দাঁড়াবে, সেটা ভেবেও শঙ্কিত এই তেবেস।
বার্সেলোনা ক্লাবের জনপ্রিয়তা এখন আর কোনোভাবেই কাতালানিয়া সমাজে আবদ্ধ হয়ে নেই। স্পেনের বিভিন্ন প্রান্তে অ-কাতালান জনগোষ্ঠীর মধ্যেই রয়েছে এই ক্লাবের বিপুল জনপ্রিয়তা। তাই গণভোট নিয়ে শঙ্কা আর বার্সার মতো ক্লাবকে হারিয়ে ফেলার আতঙ্ক এখন তাড়িয়ে বেড়াচ্ছে গোটা স্পেনকেই। বার্সেলোনার খেলোয়াড়দের ছাড়া স্প্যানিশ জাতীয় দলও যে খর্বশক্তির দলে পরিণত হবে, এ কথা তো না বললেও চলে।
বার্সেলোনা ক্লাবের সাবেক সভাপতি হুয়ান লাপোর্তা সম্প্রতি বার্সেলোনা সমর্থকদের স্বাধীন কাতালান রাষ্ট্র গঠনের লক্ষ্যে গণভোটে অংশ নেওয়ার উদাত্ত আহ্বান জানিয়েছেন। লাপোর্তার এই আহ্বান অবশ্য ক্ষুব্ধ করেছে বার্সেলোনার অনেক অ-কাতালান সমর্থককে। স্পেনের একটা বড় অংশ, যারা ঐক্যবদ্ধ রাষ্ট্রের পক্ষে, তাদের চোখে লাপোর্তার এই আহ্বান এক ধরনের হঠকারিতাই।
বার্সেলোনার বর্তমান পরিচালনা পর্ষদ অবশ্য কাতালানিয়া গণভোটের ব্যাপারে ধীরে চলো নীতিই গ্রহণ করেছে। ক্লাবের একজন মুখপাত্র সম্প্রতি জানিয়েছেন, এই গণভোট নিয়ে উদ্ভূত পরিস্থিতিতে ক্লাব অচিরেই নিজেদের অবস্থান পরিষ্কার করবে।
এদিকে বার্সেলোনার দুই মহাতারকা জাভি ও পিকে কিছু দিন আগেই কাতালানিয়া রাষ্ট্রের পক্ষে আয়োজিত এক রাজনৈতিক সমাবেশে যোগ দিয়ে হইচই ফেলে দিয়েছেন। স্পেন জাতীয় দলের দুই গুরুত্বপূর্ণ সদস্য অবশ্য এ ব্যাপারে করেছেন ধোঁয়াটে মন্তব্য। জাভি বলেছেন, ‘আমি গণভোটের পক্ষে। আমি চাই মানুষ এখানে নিজেদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করুক। প্রত্যেকেরই ভোট দেওয়ার অধিকার আছে। আমি স্বাধীন কাতালান রাষ্ট্রের পক্ষে কি বিপক্ষে, তার চেয়েও বড় ব্যাপার আমি গণভোটের পক্ষে।’
পিকে বলেছেন, ‘স্পেনের প্রতি কমিটমেন্ট নিয়ে ১১ বছর জাতীয় দলে খেলেছি। তবে আমি একজন কাতালান। তাই গণভোটের পক্ষে দাঁড়ানোটা একটু অন্য রকম ব্যাপারই। আমরা গণভোটের পক্ষে কথা বলেছি। মানুষ ভোট দিক। কিন্তু এর সঙ্গে অন্য কিছু গুলিয়ে ফেলাটা বোধ হয় ঠিক নয়।’
জাভি, পিকে গণভোটের পক্ষে দাঁড়ালেও গণভোটে কাতালান রাষ্ট্রের পক্ষে ভোট পড়লে কী হবে, সেটা নিয়ে অবশ্য কোনো কথা বলেননি। সূত্র: রয়টার্স।