মেয়েদের বিয়ের ন্যূনতম বয়স না কমাতে বাংলাদেশ সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে নিউ ইয়র্ক ভিত্তিক আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠন হিউম্যান রাইটস ওয়াচ (এইচআরডব্লিউ)। এক বিবৃতিতে সংগঠনের
নারী অধিকার বিষয়ক পরিচালক লিইজ গার্নথোলটজ বলেন, মেয়েদের বিয়ের বয়স যদি ১৬ বছর করা হয় তাহলে সেটা হবে ভুল পথে ভয়াবহ এক পদক্ষেপ। এমনিতেই বাংলাদেশে বাল্যবিবাহের হার অনেক বেশি। তাই নতুন আইনে মেয়েদের বিয়ের সর্বনিম্ন বয়স নির্ধারণ করা উচিত ১৮ বছর। ২০১৪ সালের জুলাইয়ে লন্ডনে কন্যাসন্তানবিষয়ক সম্মেলনে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দেয়া প্রতিশ্রুতির কথা এক বিবৃতিতে তুলে ধরে এইচআরডব্লিউ। সম্মেলনে বাল্যবিবাহ প্রতিরোধে বিভিন্ন পদক্ষেপ নেয়া ও ২০৪১ সালের মধ্যে বাল্যবিবাহ বন্ধের প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করেন প্রধানমন্ত্রী। ২০১৫ সালের আগে বাল্যবিবাহ ইস্যুতে জাতীয় পর্যায়ে কর্মপরিকল্পনা নেয়ার ব্যাপারেও প্রতিশ্রুতিবদ্ধ সরকার। একই সঙ্গে সামাজিক রীতিনীতিতে ইতিবাচক পরিবর্তন আনার মাধ্যমে সামাজিক মানদণ্ড সমুন্নত রাখতে এবং বাল্যবিবাহ রোধে সুশীল সমাজকে সম্পৃক্ত করার বিষয়ে নানা পদক্ষেপ নেয়ার জন্য অঙ্গীকারবদ্ধ ছিল সরকার। মেয়েদের বিয়ের বয়স কমানোর আইন সংশোধন করা হলে তা হবে বাল্যবিবাহ কমাতে সরকারের দেয়া প্রতিশ্রুতির বিপরীত অবস্থান। ইউনিসেফের মতে, বিশ্বে বাল্যবিবাহের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ দ্বিতীয় সর্বোচ্চ দেশ। এক্ষেত্রে নাইজার রয়েছে এক নম্বরে। নারীর বিয়ের সর্বনিম্ন বয়স ১৮ বছর হওয়া সত্ত্বেও বাংলাদেশে বর্তমানে ২০ থেকে ৪৯ বছর বয়সী নারীর শতকরা প্রায় ৭৪ ভাগেরই বিয়ে হয়েছে ওই বয়সের আগেই। লিঙ্গ বৈষম্য কমানোর জন্য আন্তর্জাতিক আইনে নারী ও পুরুষের বিয়ের উপযুক্ত বয়স একই এবং তা আন্তর্জাতিক মানদণ্ডে সর্বনিম্ন ১৮ বছর। বাংলাদেশ ১৯৯০ সালে শিশু অধিকার বিষয়ক দ্য কনভেনশন অন দ্য রাইটস অব দ্য চাইল্ড স্বাক্ষর করে বাংলাদেশ। এর অধীনে বিয়ের সর্বনিম্ন বয়স ১৮ বছর। ২০০৯ সালে জাতিসংঘের কমিটি অন দ্য রাইটস অব দ্য চাইল্ড দৃঢ়তার সঙ্গে সুপারিশ করে যে, যে কোন ব্যক্তির বয়স ১৮ বছরের কম হলে তাকে শিশু হিসেবে বিবেচনা করতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে হবে বাংলাদেশকে। বাংলাদেশে ২০১৩ সালে নতুন শিশু অধিকার বিষয়ক আইন পাস হয়েছে। ওই আইনে মেয়ে ও ছেলে শিশুর বয়স ১৮ বছর হলে তাকে পূর্ণ বয়স্ক হিসেবে ধরার কথা বলা হয়। ১৮ বছরের নিচের কোন মেয়ে অথবা ২১ বছরের কম কোন ছেলের বিয়ে, বিয়েতে সুবিধা করে দেয়াকে ফৌজদারি অপরাধ হিসেবে আখ্যায়িত করা হয় ১৯২৯ সালের চাইল্ড ম্যারেজ রেসট্রেইন্ট অ্যাক্টে। হিউম্যান রাইটস ওয়াচ বলেছে, সেই আইনের প্রয়োগ দেখা যায় না বললেই চলে। এ আইনের অনেক ধারা এখন পুরনো। এর অধীনে বাল্যবিয়ে বা বিয়েতে সুযোগ করে দেয়ার শাস্তি মাত্র এক হাজার টাকা জরিমানা। ওই বিবৃতিতে আইন সংশোধনের ক্ষেত্রে যেসব বিষয় গুরুত্ব দিতে হবে সে বিষয়ে কিছু সুপারিশ তুলে ধরে হিউম্যান রাইটস ওয়াচ। এক. আদালত বাল্যবিয়ে প্রতিরোধে ব্যবস্থা নিতে ও শাস্তি দিতে পারবে। বাল্যবিয়ের বেলায় সামাজিক প্রতিরোধ থাকতে হবে। যেসব মেয়ে বাল্যবিয়ের শিকার হচ্ছে তাকে সহায়তা দিতে হবে। দুই. নিশ্চিত হতে হবে যে, বিয়েতে রাজি পাত্র-পাত্রী পূর্ণ বয়স্ক। তিন. বিবাহ সম্পর্কিত ধর্ষণকে অন্য রকম ধর্ষণের মতো অপরাধ হিসেবে দেখা হয় না বাংলাদেশের আইনে। বিয়ের পরেও জোর করে শারীরিক সম্পর্ক স্থাপনকেও ধর্ষণ হিসেবে ধরতে হবে। এ জন্য ধর্ষণের মতো শাস্তি প্রাপ্য। চার. যেসব কর্মকর্তা আইন লঙ্ঘন করবে তাদের শাস্তি দিতে হবে।