কটিয়াদী, কিশোরগঞ্জ থেকে সুবল চন্দ্র দাস।
কিশোরগঞ্জের ১৩টি থানায় বিভিন্ন মামলায় সঠিক সময়ে চিকিৎসা সনদপত্র (মেডিকেল সার্টিফিকেট) না পাওয়ায় মামলা নিষ্পত্তি হচ্ছে না। সার্টিফিকেটের কারণে অনেক মামলার অভিযোগপত্রসহ চূড়ান্ত প্রতিবেদনও পুলিশ আদালতে দাখিল করতে পারছে না। এতে দীর্ঘদিন ধরে অসংখ্য মামলা ঝুলে আছে। ফলে মামলার বাদী-বিবাদীসহ বিচারপ্রার্থীরা চরম ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন। জেলা আইন-শৃঙ্খলা কমিটির একাধিক সভায় দ্রুত চিকিৎসা সনদপত্র প্রদানের জন্য সিভিল সার্জনের দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলেও কোনো কাজ হচ্ছে না বলে মামলার সঙ্গে জড়িত ভুক্তভোগীরা জানান। পুলিশ ও আদালত সূত্রে জানা গেছে, নির্যাতন, মারামারি, অপমৃত্যুসহ যেসব ঘটনা হাসপাতাল পর্যন্ত গড়ায়, সেসব ঘটনায় দায়ের করা মামলার নিষ্পত্তির জন্য অন্যতম বিষয় হলো চিকিৎসা সনদপত্র। মামলার সঙ্গে হাসপাতালের চিকিৎসা বা ময়নাতদন্তের সম্পর্ক থাকলে মামলা নিষ্পত্তির জন্য পুলিশি তদন্তের পাশাপাশি চিকিৎসা সনদও প্রয়োজন হয়। কিন্তু কিশোরগঞ্জের ২৫০ শয্যার হাসপাতালে চিকিৎসা সনদের জন্য থানার তদন্ত কর্মকর্তাদের পক্ষ থেকে চাহিদাপত্র (রিকুইজিশন) দেওয়ার পরও মাসের পর মাস সার্টিফিকেট সরবরাহ করা হচ্ছে না। ফলে অসংখ্য মামলা নিষ্পত্তি ঝুলে আছে। কিশোরগঞ্জ সদর থানার মডেল থানা সূত্রে জানা গেছে, থানার বিভিন্ন তদন্ত কর্মকর্তার হাতে তিন মাস ধরে অন্তত ১৩০টি মামলা আছে, যেগুলোর চিকিৎসা সনদপত্রের জন্য হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের কাছে রিকুইজিশন দেওয়ার পরও এখন পর্যন্ত সনদপত্র পাওয়া যাচ্ছে না। ৪৭(৭)১৩, ৩১(৬)১৩, ১৫(৫)১৪, ২৪ (৫)১৪ নম্বরের কয়েকটি মামলার উদাহরণ দিয়ে তদন্তকারী কর্মকর্তারা জানান, মারামারি, ধর্ষণ, দুর্ঘটনা, আত্মহত্যাসহ চিকিৎসা সনদপত্র প্রয়োজন, এমন শতাধিক মামলা রিকুইজিশন দেওয়ার পরও সনদপত্র পাওয়া যাচ্ছে না। ফলে মামলাগুলোর আদালতে অভিযোগপত্র ও তদন্ত করতে বাধাগ্রস্ত হতে হচ্ছে। হোসেনপুর থানা জানায়, চিকিৎসা সনদপত্রের ওপর নির্ভর করে কোনো মামলার অভিযোগপত্র (চার্জশিট) দেওয়া হবে আর কোনো মামলার চূড়ান্ত প্রতিবেদন দেওয়া হবে। তদন্ত কর্মকর্তারা মামলার তদন্ত কাজ সম্পন্ন করে বসে আছেন অথচ চিকিৎসা সনদপত্রের জন্য তারা পরবর্তী পদক্ষেপ নিতে পারছেন না। কিশোরগঞ্জের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার লিটন কুমার সাহা জানান, অধিকাংশ খুন, মারামারি, আত্মহত্যা, দুর্ঘটনা, ধর্ষণ মামলায় চিকিৎসা সনদপত্র সঠিক সময়ে না পাওয়ায় বাদীপক্ষ মামলার ব্যাপারে হতাশ হয়ে পড়েন। অপরদিকে ডাক্তারী সনদপত্র না পেয়ে তদন্তকারী অফিসাররাও মাসের পর মাস মামলার তদন্ত দীর্ঘায়ীত করছে। মামলার বাদী ও বিবাদী পক্ষের লোকজনের অভিযোগে আরও জানা যায়, হাসপাতাল থেকে রিকুইজিশন অনুযায়ী চিকিৎসা সনদপত্র সরবরাহ করা হবে। অথচ কোনো কোনো ক্ষেত্রে হাসপাতালের কিছু অসৎ কর্মকর্তা-কর্মচারী চিকিৎসা সনদপত্র অসৎ উদ্দেশ্যে তাদের সঙ্গে দেখা করার জন্য বাদী এবং বিবাদী পক্ষকে খবর দেয়। বাড়তি টাকা না দিলে হাসপাতাল থেকে সনদ পত্র নিতে পারছে না ভূক্তভোগীরা। হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা মোহাম্মদ আলী অভিযোগ অস্বীকার করে জানান, সার্বিক বিষয়টি তার জানা নেই। তবে, তিনি খোঁজ নিয়ে দ্রুত চিকিৎসা সনদপত্র দেওয়ার ব্যবস্থা নিবেন বলে আশ্বাস দেন।