মস্তিষ্কে স্নায়ুকোষ কমে যাওয়ার কারণে পার্কিনসন্স রোগ হয়ে থাকে। স্নায়ুকোষগুলো ডোপামিন নামের একধরনের জৈব রাসায়নিক পদার্থ উৎপাদন করে, যা মানুষের মন-মেজাজ এবং নড়াচড়া নিয়ন্ত্রণ করে। সুইডেনের ওই গবেষকেরা পার্কিনসন্স রোগের মাত্রা বৃদ্ধি করার জন্য ইঁদুরের মস্তিষ্কের এক পাশের ডোপামিন উৎপাদনকারী স্নায়ুকোষগুলো মেরে ফেলেন। তারপর তাঁরা মানবদেহ থেকে সংগৃহীত আদি বা ভ্রূণ স্টেম সেলকে ডোপামিন উৎপাদনকারী স্নায়ুকোষে রূপান্তর করেন। সেগুলো ইঁদুরের মস্তিষ্কে প্রবেশ করিয়ে (ইনজেক্ট) দেখা যায়, পার্কিনসন্সের প্রভাবে সৃষ্ট ক্ষতিগুলো সারিয়ে তোলা সম্ভব হচ্ছে। তবে যুক্তরাজ্যের পার্কিনসন্স বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মানুষের ওপর এই চিকিৎসাপদ্ধতি প্রয়োগের আগে আরও অনেক পরীক্ষা-নিরীক্ষা ও নিবিড় যাচাই-বাছাই করা প্রয়োজন।
লান্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েবসাইটে গত বৃহস্পতিবার প্রকাশিত এক বিবৃতিতে বলা হয়, স্টেম সেল থেকে তৈরি মস্তিষ্ক-কোষ বিকাশের গবেষণায় একটি বড় অগ্রগতির পরিপ্রেক্ষিতে পার্কিনসন্স রোগে আক্রান্ত মানুষের চিকিৎসায় স্টেম সেল প্রতিস্থাপনের গবেষণার পথ সুগম হয়েছে।
স্টেম সেল থেকে তৈরি স্নায়ুকোষ এখন পর্যন্ত মানুষের চিকিৎসায় প্রয়োগ করা হয়নি। তবে গবেষকেরা বলছেন, তাঁরা ২০১৭ সালের মধ্যে এ-সংক্রান্ত প্রস্তুতি সম্পন্ন করতে পারবেন। লান্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের ডেভেলপমেন্ট অ্যান্ড রিজেনারেটিভ নিউরোবায়োলজি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মালিন পারমার বলেন, পার্কিনসন্স রোগের পরীক্ষামূলক চিকিৎসায় স্টেম সেল প্রয়োগের ব্যাপারে অগ্রসর হওয়ার সুযোগ তৈরি হয়েছে।
পার্কিনসন্স রোগের চিকিৎসায় সীমিতসংখ্যক রোগীর ওপর যে চিকিৎসাপদ্ধতি প্রয়োগ করা হয়েছে, তাতে মস্তিষ্ককে রোগমুক্ত করার লক্ষ্যে একাধিকবার অপসারিত ভ্রূণ কোষ থেকে টিস্যু সংগ্রহ করা হয়। পরীক্ষামূলক একাধিক চিকিৎসায় মিশ্র ফলাফল পাওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে সেগুলো বর্জন করা হয়। তবে ওই রোগীদের এক-তৃতীয়াংশের মস্তিষ্কের ভ্রূণ কোষগুলো ২৫ বছর পর্যন্ত সক্রিয় ছিল।
ভ্রূণের স্টেম সেল ব্যবহার করার ব্যাপারে বাড়তি আগ্রহের কারণ হচ্ছে, প্রতিস্থাপনের জন্য এগুলো গবেষণাগারে ব্যাপকহারে উৎপাদন করা যায়। এ ছাড়া স্টেম সেলের উৎস হিসেবে এগুলো ব্যবহার করলে নৈতিকতা লঙ্ঘনের অভিযোগটাও পরিপূর্ণ কোষ ব্যবহারের তুলনায় কম আনা হয়। তবে যুক্তরাজ্যের গবেষকেরা মনে করেন, মানুষের চিকিৎসায় স্টেম সেল ব্যবহারের জন্য আরও দীর্ঘ পথ পাড়ি দিতে হবে।
দাতব্য প্রতিষ্ঠান পার্কিনসন্স ইউকের গবেষণা ও উন্নয়ন বিভাগের পরিচালক আর্থার রোচ বলেন, সুইডেনের ওই গবেষণাটি গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, এটি ভবিষ্যতে পার্কিনসন্স রোগের চিকিৎসায় স্টেম সেল ব্যবহারের ধরন কেমন হতে পারে, সে ব্যাপারে ইঙ্গিত দেয়।
যুক্তরাষ্ট্রের মাইকেল স্টার্ন পার্কিনসন্স রিসার্চ ফাউন্ডেশন জানায়, গড়ে ৬০ বছর বয়সী ব্যক্তিদের মধ্যে পার্কিনসন্স রোগ দেখা দিতে পারে। তবে ১০ শতাংশ রোগীর মধ্যে ৪০ বছর বয়সেই রোগটির উপসর্গ পাওয়া যেতে পারে। যুক্তরাষ্ট্রে প্রায় ৫০ হাজার মানুষের মধ্যে পার্কিনসন্স রোগ শনাক্ত করা হয়েছে।
সূত্র: বিবিসি ও রিয়া নভোস্তি।