র্যাপিড এ্যাকশান ব্যাটালিয়ন (র্যাব) প্রায় ৪০ হাজার অপরাধীর নাম সম্বলিত একটি ডাটাবেজে তৈরি করেছে। চার বছর ধরে তথ্য সংগ্রহ করার পর র্যাব জঙ্গি, সন্ত্রাসী ও কিলারদের প্রোফাইলভিত্তিক এই ডাটাবেজ তৈরি করেছে। চলতি মাসের শেষের দিকে এটি উদ্বোধন করা হতে পারে।
প্রায় সময়েই দেখা যায় কোন জঙ্গি সদস্য অপরাধ করেই পরিচয় পাল্টে ফেলে। এ কারণে তাদের একাধিক নাম থাকে। তাই বারবার গ্রেফতার হলেও জঙ্গিদের আগের অপকর্মগুলো চাপা পড়ে যায়। ফলে বিচারকদের বিভ্রান্ত করে তারা সহজেই জামিন পেয়ে যায়। শুধু জঙ্গি নয়, পেশাদার কিলার ও দুর্ধর্ষ সন্ত্রাসীদের ক্ষেত্রেও একই অবস্থা। এই অবস্থা থেকে পরিত্রাণের জন্যেই র্যাব চার বছর কাজ করে এই অপরাধী ডাটাবেজ তৈরি করেছে। যার ফলে অপরাধী পূর্বে কখনও অপরাধ করেছিল কিনা তার বিস্তারিত তথ্য জানা যাবে।
র্যাব সূত্রে জানা যায়, কোন সন্ত্রাসী একবার গ্রেফতার হলেই এই ডাটাবেজে তার তথ্য ঢুকে যাবে। এতে তার ছবি, পরিচয়, জাতীয় পরিচয়পত্রের তথ্য ও ফিঙ্গার প্রিন্ট সংরক্ষণ করা হবে। ফলে একজন সন্ত্রাসী বারবার আর অপরাধ করার সুযোগ পাবে না। গ্রেফতার হওয়া মাত্রই এক ক্লিকে সব তথ্য বের হয়ে আসবে। এই সার্ভার আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর সবগুলো ইউনিট ব্যবহারের সুযোগ পাবে বলে জানিয়েছেন র্যাবের অতিরিক্ত মহাপরিচালক কর্নেল জিয়াউল আহসান।
র্যাব বলছে, এই ডাটাবেজ কাজ শুরু করলে শুধু র্যাব নয়, ডিবি, এসবি, সিআইডি এমনকি রাষ্ট্রীয় গোয়েন্দা সংস্থাগুলো এর তথ্য ব্যবহার করতে পারবে। ফলে অপরাধ নিয়ন্ত্রণ অনেকটাই সহজ হয়ে যাবে।
কর্নেল জিয়াউল আহসানে বলেন, তিনি র্যাবের ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের প্রধান থাকার সময় এই কাজ শুরু করেন। দেশের ৬৭টি কারাগারে গিয়ে সন্ত্রাসীদের তথ্য ও ফিঙ্গার প্রিন্ট নিয়েছেন। এর বাইরে যখনই সন্ত্রাসীরা গ্রেফতার হয়েছে তখনই তাদের তথ্য সংরক্ষণ করেছে র্যাব। অন্য সংস্থাগুলোর কাছ থেকে সহযোগিতা নেয়া হয়েছে। ফলে ডাটাবেজটি অনেকটাই তথ্যনির্ভর ও নির্ভুল হয়েছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, গত মঙ্গলবার সন্ধ্যায় র্যাব সদর দফতর পরিদর্শন করেন বাংলাদেশ সফররত ভারতের জাতীয় তদন্ত সংস্থার (এনআইএ) একটি প্রতিনিধি দল। সন্ত্রাসী, কিলার ও জঙ্গিদের নিয়ে র্যাবের এই ডাটাবেজ দেখে মুগ্ধ হন প্রতিনিধি দলের সদস্যরা। এ ধরনের ডাটাবেজ উন্নত দেশগুলো সংরক্ষণ করে থাকে। ভারত, পাকিস্তানসহ আশপাশের দেশগুলোতেও এত শক্তিশালী ডাটাবেজ নেই। এনআইএ’র প্রতিনিধি দলের একজন সদস্য র্যাব কর্মকর্তাদের বলেন, তারাও এই ডাটাবেজের আদলে একটি ডাটাবেজ তৈরি করবেন।
কর্নেল জিয়াউল আহসান আরও বলেন, ‘একজন জঙ্গি নেতাকে গ্রেফতার করতে অনেক সময় ও শ্রম দিতে হয়। কিন্তু গ্রেফতারের কিছুদিন পর তারা জামিনে বের হয়ে গেলে বিপাকে পড়তে হয় আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীকে। তাদের এই জামিনের জন্য আমাদেরও দায় রয়েছে। কারণ আদালতে আমরা ওইসব জঙ্গি নেতার পরিপূর্ণ তথ্য সরবরাহ করতে পারি না। ফলে বিচারকরা তাদের জামিন দিয়ে দেন। গত ৫ জানুয়ারির নির্বাচনের আগে-পরে বেশ কয়েকজন জঙ্গি নেতা জামিনে ছাড়া পেয়েছেন। এখন আবার তাদের ধরতে অভিযান চালানো হচ্ছে। এদের কয়েকজন ভারতে পালিয়ে গেছে। কিন্তু নতুন এই ডাটাবেজের কারণে জঙ্গি বা সন্ত্রাসীদের পক্ষে তথ্য গোপন করে বা আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীকে ফাঁকি দিয়ে জামিন পেয়ে বের হয়ে যাওয়া সম্ভব হবে না।’
তিনি আরো জানান, স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বর্তমানে দেশের বাইরে আছেন। আগামী ২৩ নভেম্বর তিনি দেশে ফেরার পর এই ডাটাবেজের উদ্বোধন করা হবে।