নাম মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়। তবে এই মন্ত্রণালয়ে শিশুরা অবহেলিত বলে অভিযোগ রয়েছে। তাই বেসরকারি সংগঠনের পক্ষ থেকে দীর্ঘদিন ধরে শিশুদের জন্য আলাদা একটি অধিদপ্তরের দাবি তোলা হচ্ছে। সরকার অবশেষে শিশুবিষয়ক অধিদপ্তর করার প্রক্রিয়া শুরু করেছে।
তবে আলাদা অধিদপ্তর হলেই তা দেশের শিশুদের পরিস্থিতি পাল্টে দেবে এমন না, বরং এতে করে সরকারের খরচ বাড়বে বলেও আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা। তাঁদের অভিমত, অধিদপ্তর হলে শিশুদের চেয়ে কিছু গোষ্ঠী বা ব্যক্তির জীবনমান উন্নত হবে, এটা নিশ্চিত।
মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব তারিক-উল ইসলাম বলেছেন, অধিদপ্তর করার প্রক্রিয়া বেশ এগিয়েছে। মন্ত্রণালয়-সংক্রান্ত সংসদীয় কমিটি, আন্তমন্ত্রণালয় সভাসহ বিভিন্ন জায়গায় অধিদপ্তরের প্রক্রিয়া নিয়ে আলোচনা শেষে প্রস্তাবটি জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে পাঠানোর অপেক্ষায় আছে।
মন্ত্রণালয়ের অধীন শিশু একাডেমিকে শিশুবিষয়ক অধিদপ্তর করা হবে, নাকি একাডেমির পাশাপাশি আলাদাভাবে অধিদপ্তর কাজ করবে—এ বিষয়টি নিয়ে এখন আলোচনা চলছে। সরকারের সংশ্লিষ্ট মহলে এক দলের বক্তব্য, একাডেমির দরকার নেই। অন্য দল বলছে, শিশু একাডেমি ভেঙে অধিদপ্তর করা ঠিক হবে না।
মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়ে নারীদের বিভিন্ন বিষয় দেখার জন্য মহিলাবিষয়ক অধিদপ্তর ও জাতীয় মহিলা সংস্থা আছে। মন্ত্রণালয়ের বাজেটেরও বেশির ভাগ অংশই ব্যয় হচ্ছে নারীদের উন্নয়নে। শিশুদের উন্নয়নে কত বাজেট আছে বা কত খরচ হচ্ছে, সে হিসাবও নেই মন্ত্রণালয়ের কাছে।
অন্যদিকে শিশুদের অধিকার নয়, শুধু বিকাশের বিভিন্ন দিক দেখার জন্য কাজ করছে বাংলাদেশ শিশু একাডেমি। ৬৪ জেলায় একাডেমির কার্যক্রম থাকলেও এখন পর্যন্ত মাত্র ছয়টি উপজেলায় এর কার্যক্রম রয়েছে।
বাংলাদেশ শিশু একাডেমির চেয়ারম্যান সেলিনা হোসেন বলেন, একজন নাপিতের ছেলে ছয় সদস্যের একটি দলের সঙ্গে জাপান ঘুরে এসেছে। সেই ছেলে কিন্তু এমনি এমনি জাপান যেতে পারেনি। সে বিভিন্ন প্রতিযোগিতায় বিজয়ী হয়েই যেতে পেরেছে। অর্থাৎ শিশু একাডেমি তৃণমূল থেকে শিশুদের মেধা বিকাশের কাজটি করছে। গান, নাচ, চলচ্চিত্রসহ শিশুর বিকাশে বিভিন্ন কার্যক্রমের পাশাপাশি একাডেমি পাঁচটি শিশু বিকাশ কেন্দ্রও পরিচালনা করছে। তাই একাডেমিকে শিশুবিষয়ক অধিদপ্তর করা ঠিক হবে না, বরং অধিদপ্তরের অধীনে একাডেমি কাজ করতে পারে। বিভিন্ন পর্যায়ে আলোচনা শেষেই সরকার এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবে।
শিশু অধিদপ্তর বিষয়ে সাবেক মন্ত্রিপরিষদ সচিব আলী ইমাম মজুমদার ভিন্ন মত দিয়েছেন। তিনি বলেন, শিশুদের জন্য আলাদা মন্ত্রণালয় হলে তা বরং দ্বৈততা সৃষ্টি করবে। শ্রম মন্ত্রণালয় থেকে শিশু শ্রমকে আলাদা করা যাবে না। শ্রম-সংক্রান্ত আইন প্রণয়নসহ বিভিন্ন কাজ এ মন্ত্রণালয়কেই করতে হবে। একই কথা শিশুদের শিক্ষার ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য। আলাদা অধিদপ্তর করতে সরকারের খরচ বাড়বে। তার চেয়ে এখন যেসব মন্ত্রণালয় শিশুদের বিষয়গুলো নিয়ে কাজ করছে, সেসব মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের মধ্যে সমন্বয় বাড়ালেই হয়।
মন্ত্রণালয়ে বর্তমানে শিশুদের নিয়ে কাজ বলতে জ্যেষ্ঠ সহকারী সচিবের নেতৃত্বে একটি শিশু শাখা কাজ করছে। তিনি বলেন, শিশুদের শিক্ষার বিষয়টি দেখছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। শ্রমের বিষয়টি দেখছে শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়। অর্থাৎ শিশুদের নিয়ে যেসব কাজ হচ্ছে তা বিভিন্ন জায়গায় ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আছে। মন্ত্রণালয়ের শিশু শাখা নিজস্বভাবে কিছু কর্মসূচি পরিচালনার পাশাপাশি বিভিন্ন মন্ত্রণালয় যেসব কাজ করছে, তা সমন্বয় করার চেষ্টা চালাচ্ছে। বর্তমানে মন্ত্রণালয়ের অধীনে আলাদা একটি অধিদপ্তর হলে শিশু-সংক্রান্ত কাজগুলো এক জায়গা থেকে হবে।