গাইবান্ধা প্রতিনিধি: ‘পড়বি-তো-পর মালির ঘাড়ে পর’। সড়ক ডাকাতি, ছিনতাই, ব্যবসা-প্রতিষ্ঠান ও বসতবাড়ীতে চুরি নয়। অবিশ্বাস্য হলেও সত্যি। পুলিশি কঠোর নিরাপত্তা বেষ্ঠিত দিন-দুপুরে পলাশবাড়ীতে খোদ থানা ভবনে বিভিন্ন মামলার আলামত মালখানা থেকে বাই সাইকেল চুরি করতে এসে তালার লক কাটা যন্ত্রসহ পুলিশের হাতে ধরা পড়েছে সাহসী ডিজিটাল চোর চাকুরীচ্যুত পেশকার সম্ভ্রান্ত পরিবারের দুই সন্তানের জনক মকছুদার রহমান (৫০)। এ ঘটনায় থানা পুলিশের মাঝে তোলপাড়সহ এলাকায় ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে। থানা সূত্রে জানা যায়, গত রোববার সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত বিভিন্ন মামলার বাদী-বিবাদীর তদবিরসহ নানা প্রয়োজনে থানায় আগতদের ব্যাপক সমাগম ঘটে। এ সুযোগে কুড়িগ্রাম জেলার উলিপুর উপজেলার মধ্যপাড়া গ্রামের ‘ঠিকানা ভিলার’ ফরে উদ্দিনের পুত্র মকছুদার চুরি করতে থানা অভ্যন্তরে প্রবেশ করে। পরে থানার বিভিন্ন মামলার আলামতের মালখানা থেকে আধুনিক কাটিং মেশিন দিয়ে একটি বাইসাইকেলের তালা কেটে পালিয়ে যাবার সময় থানা পুলিশ হাতে-নাতে আটক করে। গতকাল সোমবার পুলিশি জিজ্ঞাসাবাদে মকছুদার তার স্বীকারোক্তিতে জানায়, বিপুল অর্থ-বিত্ত বৈভবের মালিক তার ভাই-বোন, পরিবার ও আত্মীয় স্বজনের মুখে চুনকালি ও সমাজের নিকট হেয় করতেই ইচ্ছাকৃত থানায় চুরি করতে এসে পুলিশের হাতে আটক হন। তার ভাই ও বোনরা বিভিন্ন সময় শারীরিক অত্যাচার-নির্যাতন চালিয়ে কৌশলে মকছুদারের পৈত্রিক ভিটা-মাটি কেড়ে নিয়ে তাকে নিঃস্ব করে। মকছুদার জানায় তিনি ১৯৭৫ সালের রাজশাহী গভঃ কলেজ থেকে বিএ পাস করেন। এরপর তিনি সরকারি চাকুরী পেয়ে ১৯৭৭ সাল থেকে ১৯৮৩ সাল পর্যন্ত রংপুর ডিসি অফিসের নাজির ছিলেন। পরবর্তীতে কুড়িগ্রাম জেলার ভুরঙ্গমারী এবং ফুলবাড়ী উপজেলা কোর্ট আদালতে ১৯৮৩ থেকে ১৯৮৯ সাল পর্যন্ত পেশকারের দায়িত্ব পালন করেন। এ সময় সরকারি কোষাগারের ৫ লাখ টাকা আত্মসাতের অভিযোগে চাকুরীচ্যুত হন। কানাডা প্রবাসী ছোট ভাই প্রকৌশলী মতিউর রহমান, ছোট বোন ডাঃ ফিরোজ বেগম রংপুর মেডিকেলে এবং অপর ছোট বোন ফরিদা বেগম দিনাজপুরের উত্তর কালুবাড়ী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা। মকছুদার দাম্পত্য জীবনে ২ সন্তানের মধ্যে পুত্র আরিফুর রহমান তমাল ২০১২ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ইংলিশে অনার্সে অধ্যায়নকালে আকস্মিক দূর্ঘটনায় পানিতে ডুবে মারা যায়। একমাত্র কন্যা মিষ্টি নবম শ্রেণীতে পড়াশুনা করে। থানা অফিসার ইনচার্জ মজিবুর রহমান জানান, থানায় ঘোরা ফেরার কারণে সন্দেহ করা হচ্ছে তিনি সাইকেলটি চুরি করতে এসেছিলেন। মকছুদারের মস্তিস্ক বিকৃতি থাকতে পারে। পুলিশি জিজ্ঞাসাবাদে মকছুদার অসংলগ্ন কথা বলেন। তাকে গতকাল সোমবার বিকেলে গাইবান্ধা কোর্ট হাজতে প্রেরণ করা হয়েছে। পরবর্তীতে তদন্ত সাপেক্ষে প্রকৃত সত্যতা জানা যাবে। মকছুদারের দেয়া নাম ঠিকানাসহ অন্যান্য তথ্যাদির সঠিকতা যাচাইয়ের জন্য উলিপুর থানায় প্রয়োজনীয় কাগজপত্র প্রেরণ করা হয়েছে। উপজেলায় সম্প্রতি চুরি-ছিনতাই-ডাকাতি বৃদ্ধি পেয়েছে বলে এ প্রতিনিধির এক প্রশ্নের জবাবে থানা অফিসার ইনচার্জ বলেন, সকল ধরনের অপরাধ প্রবনতা রোধ কল্পে ইতোমধ্যেই নানামুখী পুলিশি পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে। ছবি সংযুক্ত
গাইবান্ধা প্রতিনিধি
আরিফ উদ্দিন