শুরু হয়ে গেছো নতুন বছর। ফেলে আসা বছরে বিজ্ঞানের দুনিয়ায় ঘটেছে চমকপ্রদ নানা ঘটনা৷ তার থেকেই বাছাই করা কিছু ঘটনা তুলে ধরা হলঃ
১.মঙ্গলে উষা, ধূমকেতুতে পা
চলতি বছর বিজ্ঞানের দুনিয়ায় সাফল্যের শিরোনামে মহাকাশবিজ্ঞান, যে দলে সামিল ভারতবর্ষও৷ একাধিক সফল মহাকাশ অভিযান (যেমন ভারতের ‘মঙ্গলযান’, জাপানের ‘হায়াবুসা-২ প্রোব’ বা চাঁদের পরবর্তী চন্দ্রাভিযানের সূচনা) দুনিয়া জুড়ে আলোড়ন ফেললেও বিজ্ঞানীদের মতে সবথেকে বড় সাফল্য এসেছে ইউরোপিয়ান স্পেস এজেন্সির ৬৭পি/চুরুইয়ুমভ-জেরাসিমেঙ্কো ধূমকেতু অভিযান, যা মানব ইতিহাসে প্রথম৷ নভেম্বরে এই অভিযানে রোসেত্তার ল্যান্ডার প্রোব ফিলি পা রাখে ওই ধূমকেতুতে৷ আগামী অগস্টে সূর্যের সবথেকে কাছে আসবে ৬৭পি/চুরুইয়ুমভ৷ বিজ্ঞানীরা মনে করছেন, সেই সময় সূর্য থেকে পাওয়া টাটকা তথ্য বিশ্লেষণ করে সৌরজগতের সৃষ্টি, পৃথিবীতে প্রাণের উন্মেষ ও বিভিন্ন রাসয়ানিক সৃষ্টির অজানা রহস্যে আলোকপাত করা সম্ভব হবে৷
২. নহি যন্ত্র, নহি যন্ত্র
যান্ত্রিক দুনিয়ার দিকে আরও এক কদম এগোনো গেল এই বছর৷ রোবটের ‘আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স’ নিয়ে গবেষণায় অন্য মাত্রা এনে দিলেন একদল মার্কিন বিজ্ঞানী৷ তাঁদের তৈরি মার্কিন মুদ্রার আকারের ইন্টারঅ্যাকটিভ রোবটের মার্চ, বিভিন্ন জ্যামিতিক ফর্মেশন গঠন তাক লাগিয়ে দিয়েছে সবাইকে৷
রোবট-গবেষণায় এ বছরের ব্যতিক্রমী গবেষক ভারতীয় বংশোদ্ভূত রাধিকা নাগপাল৷ রাধিকার নেতৃত্বাধীন দল কয়েক সেন্টিমিটার লম্বা ১০২৪টি তিন-পাওয়ালা রোবটের এক বাহিনী (কিলোবট) তৈরি করেছে, যারা চলন্ত অবস্থায় নিজেদের মধ্যে ইনফ্রারেড রশ্মিতে তথ্য আদানপ্রদান করে অবস্থান পরিবর্তন, দ্বিমাত্রিক ফর্মেশন গঠনের কাজ করতে পারে অনায়াসে৷ তাঁদের পরবর্তী লক্ষ্য ত্রিমাত্রিক ফর্মেশন গঠনে পারদর্শী কিলোবট বানানো, ‘এই সময়’কে জানিয়েছেন রাধিকা৷ তাঁর কথায়, ‘শরীরের মধ্যে থাকা অনেক কোষ মিলে একসঙ্গে কাজ করে কলা, অঙ্গ এবং তন্ত্র গঠন করে৷ আমাদেরও লক্ষ্য এই ধরনের রোবট বানানো, যারা যৌথ ভাবে কাজ করলে অনেক বড় কিছু করতে পারবে৷’
৩. ওড়াউড়িতে হাতেখড়ি
অরণ্যদেবের স্টেগোসরাস বা হালফিলের জুরাসিক পার্কের টির্যানোসরাস রেক্স-এর মতো দৈত্যাকার পূর্বপুরুষ থেকেই হামিং বার্ড বা রাজহাঁসের মতো পাখির বিবর্তন হয়েছে— এই তত্ত্বের স্বপক্ষে আরও জোরদার প্রমাণ মিলল চলতি বছর৷ গত দু’দশকে চিন-সহ একাধিক দেশে মেলা ফসিলকে একত্রিত করে চলতি বছরে হওয়া দুই গবেষণায় পরীক্ষা করা হয় যথাক্রমে ৪২৬ ও ১৫০টি পাখি ও ডাইনোসরের দেহাংশের ৮৫০টি-রও বেশি শারীরিক গঠনগত বৈশিষ্ট্য৷ যেখানে পাকাপাকি প্রমাণ মিলেছে, পুরোদস্তুর পাখি জন্মানোর অনেক আগে থেকেই ডাইনোসরদের শরীরে পালক, ডানার মতো প্রবর্ধক অঙ্গ তৈরি হতে শুরু হয়েছিল৷ পালক তাদের উড়তে না সাহায্য করলেও, পাখির মতোই শরীর গরম রাখতে, শরীরের ভারসাম্য রাখতে সাহায্য করত৷ এ ভাবেই আস্তে আস্তে শরীরের আকৃতি ছোট হতে হতে পাখির সৃষ্টি হয়৷ যারা পরে খাদ্যের সন্ধানে সহজে অন্য স্থানে উড়ে গিয়ে বির্বতনের লড়াইয়ে জিতে যায়৷ আর আস্তে আস্তে বিলুপ্তির পথে চলে যায় টির্যানোসরাস রেক্সের ভাই-বেরাদররা৷ তবে ওড়াউড়ির শুরু যে তাদের হাত ধরেই, এ সত্যিতে সিলমোহর লাগিয়ে দিয়েছেন ইভোলিউশনারি বায়োলজিস্টরা৷
৪. বিধির বাঁধন কাটবে তুমি
বয়সের ভারে ন্যুব্জ হয়ে কর্মক্ষমতা হারিয়ে ফেলার অবশ্যম্ভাবী ভবিতব্য রোখার জাদুকাঠি কি তবে আবিষ্কার করে ফেললেন বিজ্ঞানীরা? মানুষের উপর ক্লিনিক্যাল টেস্টিং শুরু হয়েছে সবে৷ যার ফল জানা যাবে আগামী বছর৷
চলতি বছরে ল্যাবরেটরিতে ইঁদুরের উপর হওয়া এক পরীক্ষায় মিলেছে আশাতীত তথ্য৷ চলতি দশকের গোড়ায় হওয়া এক গবেষণায় দেখা গিয়েছিল, তুলনায় কমবয়সি ইঁদুরের শরীর থেকে রক্ত ট্রান্সফিউশন করে বয়স্ক ইঁদুরের দেহে ঢুকিয়ে দেওয়ার পর বয়স্ক শরীরের স্টেমসেলগুলি শরীরের ক্ষয়পূরণ ও পেশি উত্পাদনে আগের থেকে তুলনায় অধিক ক্রিয়াশীল হতে পারছে৷
কোন ‘জাদুতে’ তা সম্ভব হচ্ছে তা এখনও জানা যায়নি৷ তবে ২০১৪-এ হওয়া এক গবেষণায় দেখা গিয়েছে একেবারে বন্ধ করে দেওয়া সম্ভব না হলেও আরও দীর্ঘায়িত, আরও প্রলম্বিত করা গিয়েছে শরীরের বার্ধক্যের থাবা৷ একদল গবেষক দেখিয়েছেন, অল্পবয়সী ইঁদুরের রক্তে থাকা ‘জিডিএফ১১’ বয়স্ক ইঁদুরের দেহে হৃদপিন্ডের কার্যক্ষমতা প্রশংসনীয় ভাবে বাড়িয়ে তোলে৷ পাশাপাশি, বয়স্ক দেহে পেশীর নমনীয়তা এবং মস্তিষ্কে নিউরোনের বৃদ্ধিও বাড়িয়ে তোলে ‘জিডিএফ১১’৷ আর একদল গবেষক তাঁদের গবেষণাপত্রে দেখিয়েছেন কী ভাবে অল্পবয়সী ইঁদুরের রক্ত বা কলাকোষ-হীন রক্তপ্লাজমাও বয়স্ক দেহে স্মৃতিশক্তি বাড়াতে সাহায্য করে৷
ইঁদুরের পর এখন ১৮জন অ্যালঝাইমার্স রোগীর উপর শুরু হয়েছে মানুষের উপর হওয়া প্রথম ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল৷ যাদের অল্পবয়সীদের শরীর থেকে নেওয়া রক্ত-প্লাজমার ইঞ্জেকশন দেওয়া হচ্ছে নিয়মিত৷ ফলাফল জানা যাবে আগামী বছর শেষদিকে৷ এখন তাই অপেক্ষা, কালের চাকা থামানোর রহস্য কি তবে আয়ত্ত করে ফেলল মানুষ?
৫. মানবিক কম্পিউটার
সত্তর বছর আগে প্রথম বিজ্ঞানী হিসেবে হাঙ্গেরিজাত বিজ্ঞানী জাঁ ভন নিউম্যান কল্পনা করেছিলেন এমন এক আধুনিক কম্পিউটারের যাতে পৃথক পৃথক মেমোরি, প্রসেসিং এবং কন্ট্রোল ইউনিট থাকবে৷ তার পরে অনেকটা পথ পেরিয়ে এসেছে বিজ্ঞান৷ ২০১৪-এ অনেকটা নিউম্যানের পথে হেঁটেই পরবর্তী প্রজন্মের এক কম্পিউটারের পরিকল্পনা প্রকাশ করলেন আইবিএম সংস্থার ইঞ্জিনিয়ারেরা, যেখানে ব্যবহৃত হবে বিশেষ ভাবে প্রস্তুত ‘নিউরোমর্ফিক’ চিপ, যা তথ্য প্রসেস করবে অনেকটা মানব-মস্তিষ্কের কার্যপ্রণালী মেনে৷ এই চিপের নাম দেওয়া হয়েছে ‘ট্রুনর্থ’ চিপ৷
মানব-মস্তিষ্কে ১০০ বিলিয়ন কোষ (১ বিলিয়ন= ১০০ কোটি) পরস্পরের সঙ্গে ১০০ ট্রিলিয়ন (১ ট্রিলিয়ন= ১০০০ কোটি ) সাইন্যাপস পথে সংযোগ রক্ষা করে শারীরবৃত্তীয় কাজে সমন্বয়সাধন করে থাকে৷ সেখানে, ‘ট্রুনর্থ’ আপাতত কাজ করবে ৫.৪ বিলিয়ন ট্রানসিস্টর ও ২৫৬ মিলিয়ন যান্ত্রিক ‘সাইন্যাপস’ পথে৷ যে ক্ষমতাকে পরবর্তীকালে আরও বাড়ানোর পরিকল্পনা করছেন বিজ্ঞানীরা৷ সেক্ষেত্রে একাধিক ‘ট্রুনর্থ’কে জুড়ে আরও জটিল নেটওয়ার্ক বানানোর পরিকল্পনা রয়েছে তাঁদের, যার দ্বারা রিয়েল টাইম ডেটা প্রসেসিং, মেশিন ভিসন এবং এনভায়রনমেন্টাল মনিটরিংয়ের কাজে আরও গতি, আরও সুক্ষ্মতা আনা সম্ভব হবে৷
৬. বাড়ল জিনের বংশপরিচয়
জেনেটিক অ্যালফাবেটে ঠাঁই পেল নতুন দুই সদস্য৷ এ যাবত্কাল ‘এ’ (অ্যাডেনিন), ‘টি’ (থায়ামিন), ‘সি’ (সাইটোসিন) ও ‘জি’ (গুয়ানিন)— এই চার প্রকার নিউক্লিওটাইডের জেনেটিক কোডেই আটকে ছিল প্রাণের সব স্পন্দন৷ চলতি বছরে ক্যালিফোর্নিয়ার একদল বিজ্ঞানী নতুন মাত্রা এনে দিয়েছেন সিন্থেটিক বায়োলজি গবেষণায়৷ ল্যাবরেটরিতে তাঁরা জন্ম দিয়েছেন এমন এক ইশ্চেরেশিয়া কোলি ব্যাকটিরিয়ার, যার জেনেটিক কোডে (ডিএনএ-তে) ঢুকিয়ে দেওয়া সম্ভব হয়েছে ‘এক্স’ ও ‘ওয়াই’ নামে নতুন দু’টি রাসায়নিক, যার অস্তিত্ব নেই প্রাকৃতিক ডিএনএ-তে৷ এ যাবত্ ডিএনএ-র মধ্যে নিউক্লিওটাইডের ‘এ-টি’, ‘সি-জি’ বাদে বেস-পেয়ার বাদে নতুন নতুন ফর্মেশন বানানো সম্ভব হলেও, তা সম্ভব হয়েছিল শুধু ল্যাবরেটরিতে৷ জীবিত প্রাণীদেহে এ ধরনের সাফল্য এটাই প্রথম৷ আপাতত এই নতুন দুই সদস্যকে কোনও কাজে লাগানো শুরু হয়নি৷ তবে বিজ্ঞানীরা মনে করছেন, সিন্থেটিক বায়োলজি তথা জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের এই সাফল্য, পরবর্তী দিনে নতুন-নতুন ওষুধ এবং ফুড সাপ্লিমেন্ট ডিজাইনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিতে পারে৷
প্রায় একই রকম ভাবে সিন্থেটিক বায়োলজি-র আর এক যুগান্তকারী গবেষণায় বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন ‘ইস্ট’-এর দেহে প্রথম কৃত্রিম ক্রোমোজোমের সফল প্রতিস্থাপনের কথা৷ যে গবেষণা পরবর্তীকালে উন্নততর বায়ো-ফুয়েল তৈরির পাশাপাশি প্রতিষেধক (ভ্যাকসিন) গঠনেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিতে পারে৷
৭.যখন পড়বে না মোর পায়ের চিহ্ন
ফের ‘জেগে’ উঠল নিয়ানডার্থাল ম্যান৷ এই বছরে সম্পূর্ণ মানব জিনোমের ম্যাপিং করে বিজ্ঞানীরা লিপিবদ্ধ করেছেন নিয়ানডার্থাল ম্যানের সম্পর্কে অজানা নানা তথ্য৷ বিজ্ঞানীদের কাছে থাকা হোমো স্যাপিয়েন্স গোত্রের প্রাচীনতম দুই পূর্বসূরির (৪৫ হাজার বছর আগে দক্ষিণ-পশ্চিম সাইবেরিয়ায় বসবাসকারী এবং ৩৬ হাজার বছর আগে পশ্চিম রাশিয়ায় বসবাসকারী হোমো স্যাপিয়েন্স) জিনোমের ম্যাপিং করে জানা গিয়েছে, কী ভাবে হোমো নিয়ানডার্থালেনসিস এবং আদি হোমো স্যাপিয়েন্সের মধ্যে যৌন সম্পর্ক স্থাপনের মাধ্যমে পরবর্তী প্রজন্মের সৃষ্টি হয়েছে৷ এই সন্ধানে নেমে জানা গিয়েছে, অধুনা নাম না জানা একাধিক মনুষ্যপ্রজাতির নামও৷
এ বছর ইউরোপের একাধিক অঞ্চলে রেডিয়োকার্বন ডেটিংয়ের মাধ্যমে জানা গিয়েছে, আরও অজানা তথ্য৷ আগে যা মনে করা হত, তারও কয়েক গুণ বেশি, কয়েক হাজার বছর ধরে বিশ্বের কিছু অঞ্চলে একই সঙ্গে বেঁচে ছিল হোমো নিয়ানডার্থালেনসিস এবং হোমো স্যাপিয়েন্সের আদি প্রজাতি৷
৮. মধুমেহ-র দাওয়াই
মানব স্টেম সেল গবেষণায় নতুন দিগন্ত মিলল এই বছর৷ ডায়াবিটিস দমনে স্টেম সেলের সাহায্যে অগ্ন্যাশয়ের বিটা কোষ তৈরিতে চেষ্টা চলছিল গত এক দশক ধরেই৷ বিটা কোষ ক্ষতিগ্রস্ত হলে ইনসুলিন ক্ষরণ ব্যাহত হয়, যার জেরে টাইপ-১ ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হয় মানুষ৷ এই বছর দু’দল গবেষক তাঁদের গবেষণাপত্র প্রকাশ করে দেখিয়েছেন, কোন পথে এগোলে মানব স্টেম সেল থেকে বিটা কোষের মতো কোষ পরীক্ষাগারে তৈরি করা যায়৷
প্রথম উপায়ে মানব স্টেম সেল এবং মানব দেহত্বকের প্লুরিপোটেন্ট স্টেম সেল থেকে জটিল পদ্ধতিতে ৭ সপ্তাহের কাছাকাছি সময়ে ইনসুলিন তৈরিতে সক্ষম দেহকোষ তৈরি করা সম্ভব হচ্ছে৷ এই পদ্ধতিতে ৫০০ মিলির কাঁচের বোতলে ২০ কোটি বিটা কোষের মতো কোষ তৈরি করা সম্ভব হচ্ছে৷ আর দ্বিতীয় পদ্ধতিতে ৬ সপ্তাহে প্রতি দু’টি স্টেম সেল থেকে একটি বিটা কোষের সমতুল কোষ সৃষ্টি করা সম্ভব হবে৷ এই আবিষ্কারের ফলে জোড়া সুবিধা পাচ্ছেন বিজ্ঞানীরা৷ প্রথমত, এই কৃত্রিম বিটা কোষের সাহায্যে ল্যাবরেটরিতে ডায়াবিটিসের বাড়বাড়ন্ত ও প্রকোপ খুঁটিয়ে নজরে রাখতে পারছেন গবেষকেরা৷ অন্যদিকে, সুস্থ-স্বাভাবিক বিটা কোষের সঙ্গে এই কৃত্রিম বিটা কোষের কার্যকারিতার তুলনামূলক পরীক্ষা করাও সম্ভব হচ্ছে৷
৯. সকলি শোভন, সকলি বিমল
মস্তিষ্ক হল ধরাধামের সব থেকে জটিল যন্ত্র, যার অধিকাংশ কার্য-কারণের রহস্য এখনও জানতে পারেননি বিজ্ঞানীরা৷ স্মৃতিশক্তি নিয়ে বিগত কয়েক বছর ধরেই গবেষণা চালাচ্ছেন একাধিক দেশের গবেষক৷ হীরক রাজার দেশের ‘মস্তিষ্ক প্রক্ষালন যন্ত্র’ আবিষ্কার না করেও গত বছর ইঁদুরের মাথা থেকে ইচ্ছামতো স্মৃতি মুছে দেওয়া বা ভুল ঘটনার স্মৃতি ঢুকিয়ে দেওয়ার কারিগরী আবিষ্কার করে ফেলেছিলেন বিজ্ঞানীরা৷ ২০১৪ সালে আরও এক ধাপ এগিয়েছে সেই প্রক্রিয়া৷ অপ্টোজেনেটিক্স পদ্ধতিতে লেসার বিমের সাহায্যে ইঁদুরের মস্তিষ্কের কোনও স্মৃতির অনুভূতিগত বৈশিষ্ট্য (ভালো-মন্দ) পাল্টাপাল্টিও করে দিতে সক্ষম হয়েছেন বিজ্ঞানীরা৷ যেমন পুরুষ ইঁদুরের মস্তিষ্কে কোনও ঘরে গিয়ে শক খাওয়ার স্মৃতিকে সরিয়ে দিয়ে তাঁরা বসিয়ে দিচ্ছেন, ওই নির্দিষ্ট ঘরে ‘বন্ধুত্বপূর্ণ’ মহিলা ইঁদুরকে খুঁজে পাওয়ার অনুভূতি৷ যা পরবর্তী কালে তাকে ওই ঘরে যাওয়াতে উদ্দীপিত করছে৷ মনে করা হচ্ছে, এই পদ্ধতিতে আরও সাফল্য এলে তা মানুষের উপর ক্লিনিক্যালি প্রয়োগ করা সম্ভব হবে৷ আর সেক্ষেত্রে ‘ডিপ্রেশন’, ‘অ্যাঙ্গজাইটি’-র মতো শব্দগুলোকে পাকাপাকি ভাবে ডিকশনারিতে পাঠিয়ে দেওয়া সম্ভব হবে অদূর ভবিষ্যতে৷
১০. পুরানো সেই দিনের কথা
চলতি বছরে নজরকাড়া সাফল্য পেয়েছেন জীবাশ্মবিদরাও৷ এই বছরেই আবিষ্কৃত হয়েছে দু’টি দৈত্যাকৃতি তৃণভোজী ডাইনোসরের দেহাংশ৷ আর্জেন্তিনায় আবিষ্কৃত টাইটানোসর-এর আকৃতি দেখে মনে করা হচ্ছে এ যাবত্ খোঁজ পাওয়া ডাইনোসরের মধ্যে এর আকৃতি বৃহত্তম৷ অপর ডাইনোসর ড্রেডনটাস স্কারনি-ও আয়তনে খুব একটা পিছিয়ে থাকবে না টাইটানোসরের থেকে৷ সাইবেরিয়ার এক নদীর তীরে প্রান্ত একটি হাড় থেকে ৪৫ হাজার বছর আগের মানুষের সম্পূর্ণ জিনোম (এক্সোম) ডি-কোডিং করা হয়েছে এই বছরেই৷ বিজ্ঞানের উন্নতির সঙ্গে সঙ্গে ২০১৪ সালেই সম্পূর্ণ মানব জিনোম সিক্যুয়েন্সিং-এর খরচ নামানো সম্ভব হয়েছে ১০০০ ডলারের নীচে, যাকে ঐতিহাসিক সাফল্য বলে বর্ণনা করেছেন একাধিক বিজ্ঞানী৷
লেখক:- মো: আবুল বাশার (ইমন)