পায়ে হেঁটে আর কলেজে যাওয়া হবেনা রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় সংলগ্ন ইসলামিয়া কলেজের দ্বাদশ শ্রেণির মেধাবী ছাত্র জনী ইসলামের। মায়ের আদেশে আর কোন দিন পায়ে হেঁটে বাজারে যেতে পারবেনা সে, পারবেনা আর চারজনের মত নিজ পায়ে চলাফেরা করতে।
দুই ভাই একবোনের মধ্যে ছোট জনীকে নিয়ে দেখা বাবা-মায়ের স্বপ্নগুলো আর পূরণ করা হলোনা তার। জনীর সকল স্বপ্নগুলো যেন স্থবির করে দিয়েছে পুলিশের ঘাতক বুলেট।
জনীর পরিবার সূত্রে জানা যায়, ১৮ ফেব্রুয়ারি বিশ্ববিদ্যালয় সংলগ্ন মির্জাপুরে তাদের বাসায় রাত ১১টার সময় পুলিশ এসে জনীকে আটক করে। পরিবারের লোকজন আটক করার কারণ জিজ্ঞেস করলে পুলিশ জানায়- বিনোদপুরে নাশকতার ঘটনায় তাকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য থানায় নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। একথা বলে সাথে সাথে কাপড় দিয়ে তার চোখ বেঁধে গাড়িতে তুলে নিয়ে য়ায়। এর পরে অনেক খোঁজাখুঁজি করেও তার কোন সন্ধান পাওয়া যাচ্ছিলনা।
পরে মতিহার থানায়, ডিবি অফিস, র্যাব অফিসে গিয়ে খোঁজ নিলেও কেউ জনীকে আটকের কথা স্বীকার করেনি।
ঐ দিন রাত তিনটার দিকে পরিবারের কাছে একটা ফোন আসে, ফোনে বলা হয় আপনাদের ছেলে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পড়ে আছে তাকে এসে নিয়ে যান।
খবর পেয়ে পরিবারের লোকজন হাপাতালে গিয়ে দেখে জনী গুলিবিদ্ধ অবস্থায় হাসপাতালের বারান্দায় পড়ে আছে। বাম পায়ে গুলি আর রক্তে লাল হয়ে গেছে হাসপাতালের বারান্দা। চিকিৎসার জন্য জনীকে নিতে গেলে পুলিশ তাৎক্ষণিক হাসপাতালে ভর্তি করতে দেয়নি। ঝাঁঝরা গুলিতে ক্ষত বিক্ষত পা নিয়ে জনী পড়ে থাকে হাসপাতালের বারান্দায়। অনেক চেষ্টার পর বিলম্বে চিকিৎসা দেওয়া হলে দ্বায়িত্বরত চিকিৎসক তাকে ঢাকা পঙ্গু হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার পরামর্শ দেন।
গত ১৯ ফেব্রুয়ারি সন্ধ্যার দিকে পুলিশ হেফাজতে জনীকে ঢাকা পঙ্গু হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। পঙ্গু হাসপাতালে কয়েকদিন চিকিৎসা দেওয়ার পরও কোন উন্নতি হয়নি। গুলিতে ঝাঁঝরা পুরো পায়ে গুলির ছিটাগুলো বিস্তীর্ণ হয়ে যাওয়ায় পচন সৃষ্টি হয়। দিন দিন পায়ের ক্ষত বৃদ্ধি পেতে থাকে। পরে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী ২৪ ফেব্রুয়ারি জনীর বাম পা হাঁটুর নিচ থেকে কেটে ফেলা হয়েছে।
জনীর এক আত্মীয় জানান, ১৮ ফেব্রুয়ারি রাতে জনী ইসলামকে পুলিশ আটক করে অজ্ঞাত স্থানে নিয়ে গিয়ে বাম পায়ে গুলি করে হাসপাতালে রখে যায়। জনীর অবস্থা আশঙ্কাজনক হলে পরে ঢাকায় পঙ্গু হাসপাতালে তার পা হাটু পর্যন্ত কেটে ফেলা হয়। জনীকে রামেক হাসপাতালে বারান্দায় ফেলে রাখা হয়েছিল। পুলিশ আমাদের কাউকেই জনীর কাছে যেতে দেয়নি। এমনকি চিকিৎসককে তাৎক্ষণিক চিকিৎসাও দিতে দেওয়া হয়নি। যদি জনীকে তাৎক্ষণিক চিকিৎসা দেওয়া হত তাহলে জনীর পা কেটে ফেলার প্রয়োজন হতো না। চিকিৎসায় সে সুস্থ হয়ে উঠতো।
জনীর মা রানু বেগম কান্না জড়িত কণ্ঠে বলেন, পুলিশ আমার নিরপরাধ ছেলেটাকে ধরে নিয়ে গেল আর ফেরত দিল পায়ে গুলি করে। আমার ছেলে তো কোন অপরাধ করেনি। তাহলে কেন পুলিশ আমার ছেলেকে গুলি করলো। কি অপরাধ ছিল আমার ছেলের। বিনা অপরাধে আমার ছেলেকে ওরা পঙ্গু করলো আমি এখন কার কাছে বিচার চাইবো, দেশেতো কোন বিচার নেই। আমাদের একমাত্র ভরসা এখন আল্লাহ, আল্লাহ ছাড়া তো আমাদের আর কেউ নেই। আমি আল্লাহর কাছে দুহাত তুলে ফরিয়াদ জানাই আল্লাহ যেন আমার ছেলেকে পঙ্গু পা নিয়ে বেঁচে থাকার দৃঢ় মনোবল দান করে এবং যাদের গুলিতে ও যারা আমার ছেলেকে পঙ্গু করলো তাদের যথাযথ শাস্তি প্রদান করে।
এ বিষয়ে মতিহার থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুর রউফের সাথে যোগায়োগ করা হলে তিনি বলেন, আমরা এ বিষয়ে কিছুই জানিনা।