রুবেল, বেনাপোল থেকে: বেনাপোল আন্তর্জাতিক কাস্টমস ও ইমিগ্রেশন ভবনে যাত্রী হয়রানীর মহোৎসব চালাচ্ছে কাস্টমস ও পুলিশ সদস্যরা। গত কয়েকদিন যাবত বহিরাগতদের প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে নিজেরাই পাসপোর্ট যাত্রীদের কাছ থেকে নানা অজুহাতে আদায় করছেন শতশত টাকা বলে অভিযোগ উঠেছে। জানা যায়, যোগাযোগ ব্যবস্থা সহজ হওয়ায় এ পথে প্রতিদিন সাড়ে ৩ থেকে ৪ হাজার হাজার পাসপোর্ট যাত্রী ব্যবসা, চিকিৎসা ও ভ্রমনের কাজে যাতায়াত করে। কিন্তু এ পথে ভ্রমনে তাদের হয়রানির শেষ নেই। চেকপোস্ট ইমিগ্রেশন ভবনে ভ্রমন ট্যাক্স কাটতে সোনালী ব্যাংকে ৫শ টাকার রশিদ নিতে বাড়তি ঘুষ দিতে হয় ১০ টাকা। কাস্টমস পার হতে বকশিষের নামে পাসপোর্ট প্রতি ৫০ টাকা আদায় করে কাস্টমস সিপাইরা। পরবর্তীতে ইমিগ্রেশনে প্রাইভেট সার্ভিস পাসপোর্টে ছিল করতে ২শ থেকে ৫শ টাকা, ট্যুরিষ্ট ও মেডিকেল ভিসার যাত্রীদের ৫০ থেকে ১০০ টাকা হারে আদায় করে ইমিগ্রেশন পুলিশ। এছাড়া এসআই রবিউলের কাছে গেলে পাসাপোর্ট প্রতি সীল মারতে তার থাকে অনেক তালবাহানা। তিনি পাসপোর্ট প্রতি ২’শ থেকে ২হাজার টাকাও আদায় করে থাকেন। পরবর্তীতে প্রয়োজনীয় কাজ শেষে পরিবারের জন্য সামান্য কেনাকাটা করে দেশে ফেরার সময় আবারো বেনাপোল চেকপোস্ট কাস্টমস সদস্যরা যাত্রীদের কাছ থেকে মাথা পিছু ২’শ টাকা থেকে শুরু করে ৫’শ টাকা পর্যন্ত আদায় করছে। এসময় কেউ এই অবৈধ টাকা দিতে অপারগতা প্রকাশ করলে বিভিন্ন অযুহাতে তাদের ঘন্টার পর ঘন্টা দাড় করিয়ে রাখা হয়। এদের হাত থেকে রোগী, শিক্ষক, সাংবাদিক, ব্যবসায়ী কেউই রেহায় পায়না বলে জানান ভুক্তভোগী পাসপোর্ট যাত্রীরা। এছাড়া ইমিগ্রেশন ও কাস্টমস কর্তৃপক্ষের নিজস্ব কিছু বহিরাগত দালাল কর্তৃক ট্যাক্স ফাঁকির ঘটনা প্রতিনিয়ত ঘটছে। এরা সহজ সরল যাত্রীদের কাছ থেকে ভ্রমণ করের ৫’শ টাকা নিয়ে তা সরকারের কোষাগারে না দিয়ে গেট পার করে দিচ্ছে। এতে সরকার লাখ লাখ টাকার রাজস্ব আয় থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। এদিকে, মঙ্গলবার সকালে শার্শা উপজেলা চেয়ারম্যানের ১১জন মেহমান ভারতে যাওয়ার সময় কবলে পড়ে ইমিগ্রেশন কর্মকর্তা এসআই রবিউলের। তিনি পাসপোর্ট প্রতি ২’শ টাকা চাঁদা দাবি করলে সাথে থাকা স্থানীয়রা প্রতিবাদ করেন। এসময় এসআই রবিউল বলেন, কারো পরিচয় দিয়ে লাভ নেই। অনেক টাকা খরচ করে বেনাপোল ইমিগ্রেশনে এসেছি। এখানে লাইনে দাড়িয়ে পাসপোর্টে সীল মারলে ৫০ টাকা এবং লাইন ছাড়া সীল মারলে ১’শ টাকা দিতে হবে। পরে সাংবাদিক কিংবা ঢাকা ক্লাবের সদস্য পরিচয় দিয়েও শেষ রক্ষা হয়নি তার কাছ থেকে। বিষয়টি ইমিগ্রেশনের সেকেন্ড অফিসার জাকিরের কাছে জানালে তিনি উপজেলা চেয়ারম্যানের আত্মীয় শুনে পাসপোর্ট গুলিতে সীল মেরে দেন। পাসপোর্ট নং bs MD. ZAHIDBA0338154, ROZI SIDDIKY-BA0338155, MD. REOAN-BA0335921, MST. AYASHA SIDDIKI-BA0336711, RABEYA SULTANA-BB0084665 সহ ১১টি পাসপোর্ট। এদিনের ঘটনার পর বেনাপোল ইমিগ্রেশন কাস্টমসে পাসপোর্ট যাত্রী ছাড়া বহিরাগতদের প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়। পরে কাস্টমস ও পুলিশ সদস্যরা ইচ্ছামত পাসপোর্ট যাত্রীদের কাছ থেকে চাঁদা আদায় করছেন বলে জানাগেছে। এদিকে বহিরাগত পাসপোর্ট দালালসহ স্থানীয়দের ইমিগ্রেশন ভবনে প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করায় ফুসলে উঠেছেন এখানে কর্ম করে জীবিকা নির্বাহ করা স্থানীয়রা। তাদের দাবি আমাদের ঢুকতে নিষেধাজ্ঞা জারি করে তাদের মন মতো ৮জন দালাল নিয়ে পাসপোর্ট যাত্রীদের নাজেহাল করছে কাস্টমস ও পুলিশ সদস্যরা। এই ৮ দালাল যেভাবে বলছে সেভাবেই চলছে ইমিগ্রেশন ও কাস্টমসের কতিপয় সদস্য। এজন্য যেকোন সময়ে এখানে সংঘাত বাঁধতে পারে বলে জানায় সংশ্লিষ্ঠরা। এ বিষয়ে ইমিগ্রেশন ওসি(তদন্ত) মনিরুজ্জামান বলেন, ভিতরে থাকা এরা দালাল না। এরা আমাদের সহযোগি হিসাবে দীর্ঘদিন ধরে কাজ করছে। তাদেরকে আমরা প্রয়োজনে ভারতেসহ দেশের অভ্যন্তরে পাঠাই। তবে তাদেরকে কোন বেতন দেওয়া হয়কিনা জানতে চাইলে তিনি জানান, তাদের বেতন তারা পাসপোর্ট যাত্রীদের কাছ থেকে তৈরি করে নেয়। এজন্য এদেরকে বাড়তি বেতন দেওয়ার প্রয়োজন হয়না।