বলুন তো এবারের বিশ্বকাপে সবচেয়ে বেশি রান করেছেন কে? ব্যাপারটা একটু ভাবাবে বটে। ক্রিস গেইলের ২১৫ রানের অতিমানবীয় ইনিংস, কুমার সাঙ্গাকারার পর পর দুটি ম্যাচে দুটি শতক, হাশিম আমলা কিংবা লাহিরু থিরিমান্নের ঝোড়ো ইনিংসগুলো একটু ধন্দে ফেলে দেবে। তবে উত্তরটা চমকে দেবে অনেক নিয়মিত ক্রিকেট অনুসারীদেরও। এবারের বিশ্বকাপের সবেচেয়ে বেশি রান যাঁর ঝুলিতে, সেই ক্রিকেটারটিকে অনেকেই চেনেন না। কিন্তু নিজেকে চেনানোর জন্য বিশ্বকাপের চেয়ে ভালো মঞ্চ আর কী হতে পারে! আর সেই মঞ্চটাই বেছে নিয়েছেন শাইমান আনোয়ার।
শাইমান আনোয়ার? অনেকেই নিশ্চয়ই ভ্রুকুটি করছেন। অবাক করার মতো হলেও চারটি ম্যাচে তার মোট সংগ্রহ ২৭০ রান। একটি শতক এবং দুটো অর্ধশত রানের ইনিংসে সাজানো তাঁর এ পর্যন্ত বিশ্বকাপ–যাত্রা। পাকিস্তানের বিপক্ষে ম্যাচে ৬২ রানের ইনিংস খেলার পথে দুইয়ে নামিয়ে দিলেন ২৬৮ রান করা কুমার সাঙ্গাকারাকে। বিশ্বকাপ মানেই তারার আসর। আর সে আসরে নামীদামি সব তারকাকে পেছনে ফেলে রানের এভারেস্ট চূড়ায় পা রাখা, নিজেকে নিয়ে গর্ব করতেই পারেন শাইমান।
অথচ নিজ দেশ আরব আমিরাতে ক্রিকেট খেলারই সময় পান না পাকিস্তানি বংশোদ্ভূত এই ডানহাতি ব্যাটসম্যান। তিনি কাজ করেন দুবাইয়ের একটি শিপিং প্রতিষ্ঠানে। শুধু সাপ্তাহিক ছুটির দিনগুলোতে অনুশীলনের সুযোগ পান। এত প্রতিকূলতার মধ্যেও বিশ্বকাপ আসরে একের পর এক কীর্তি গড়ে চলেছেন। গ্যাবায় ৬ নম্বরে নেমে আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে খেলেছেন ৮৩ বলে ১০৬ রানের দুর্দান্ত এক ইনিংস। সংযুক্ত আরব আমিরাতের পক্ষে বিশ্বকাপে এই প্রথম ব্যাটসম্যান হিসেবে পেয়েছেন সেঞ্চুরির দেখা। জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে করেছিলেন ৬৭। আজ পাকিস্তানের বিপক্ষে আরেকটি ফিফটি। ছোট দলে খেলেন বলেই যে মাথা নুইয়ে ব্যাট করেন, তা কিন্তু নয়। বরং তাঁর উন্নত শিরে ব্যাট চালানোর কথা বলে দিচ্ছে বিশ্বকাপে তাঁর স্ট্রাইক রেট ১০০!
পাকিস্তানের শিয়ালকোটে জন্ম নেওয়া শাইমান অন্ধ ভক্ত ছিলেন ভারতের রাহুল দ্রাবিড়ের। তবে দ্রুতই আপন স্বকীয়তায় নিজেকে মেলে ধরা শুরু করেন। মারকুটে ব্যাটসম্যান হিসেবে দ্রুতই সুনাম ছড়িয়ে পড়ে তাঁর। নিয়মিত খেলা শুরু করেন পাকিস্তানের ঘরোয়া ক্রিকেটে। তবে ২০০৭ সালে দুবাইয়ের ক্লাব ক্রিকেটে খেলার আহ্বান পেয়ে পাততাড়ি গুটিয়ে চলে আসেন দুবাই। খেলার পাশাপাশি চাকরি শুরু করেন। এরপর ২০০৯ সালে ডাক পেলেন সংযুক্ত আরব আমিরাত দলে। এরপর আর পিছে ফিরে তাকাতে হয়নি। তুলে মারতে ভালোবাসেন শাইমান। আরব আমিরাতের ঘরোয়া লিগে শাইমান পরিচিত ‘ছক্কা শাইমান’ হিসেবে।
সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহকদের তালিকায় শাইমান আনোয়ারের পরেই আছেন সাঙ্গাকারা। সাঙ্গার সংগ্রহ চার ম্যাচে ২৬৮। ২৫৮ রান নিয়ে তৃতীয় স্থানটিতে এবারের বিশ্বকাপের একমাত্র দ্বিশতকের মালিক ক্রিস গেইল। চতুর্থ ও পঞ্চম অবস্থানে আছেন হাশিম আমলা ও লাহিরু থিরিমান্নে। আমলার সংগ্রহ ২৫৭, থিরিমান্নের ২৫৬।