২০০৯ সালে সাতসমুদ্র তেরো নদী পেরিয়ে মেক্সিকোতে সোয়াইন ফ্লু ছড়িয়ে পড়লে শঙ্কার ছায়া ঘনিয়েছিল বাংলাদেশের মানুষের মনেও।
কয়েক মাসের মধ্যে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা মহামারীর আকারে সোয়াইন ফ্লু ছড়িয়ে পড়ার ঘোষণা দেয় এবং এ রোগের জন্য দায়ী ভাইরাস এইচ১এন১ এর প্রথম সংক্রমণ ধরার পড়ার পর বাংলাদেশেও আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে।
আতঙ্কিত মানুষ সে সময় পরীক্ষার জন্য দলে দলে হাসপাতালে ছোটে। আনুমানিক ১০ হাজার ঘটনার মধ্যে অন্তত আটজন এ রোগে মারা যান।
কিন্তু এবার ভারতে সোয়াইন ফ্লু ছড়ানোর পর অন্তত ১২০০ মানুষের মৃত্যু হলেও কয়েকটি টেলিভিশনের শিরোনাম হওয়া ছাড়া এ নিয়ে খুব একটা আলোচনা নেই বাংলাদেশে।
এমনকি রোগ নির্ণয় ও নিয়ন্ত্রণের দায়িত্বে থাকা কর্তৃপক্ষও এ রোগ নিয়ে কথা বলা শুরু করেছেন গণমাধ্যম থেকে খোঁজখবর করার পর।
রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের (আইইডিসিআর) পরিচালক অধ্যাপক মাহমুদুর রহমান বলেন, “আমরা পরিস্থিতি নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করছি।
“আমাদের এখানে এখন ইনফ্লুয়েঞ্জার মৌসুম নয়। তবে প্রতিবেশী দেশে যখন ভাইরাস ছড়ায়, তখন এ বিষয়ে আগে থেকে কিছু বলা চলে না।”
২০০৯ সালের মহামারীর পর সোয়াইন ফ্লু বাংলাদেশে ইনফ্লুয়েঞ্জা বি ও এইচ৩ এর মতোই মৌসুমী ইনফ্লুয়েঞ্জায় পরিণত হয়।
বাংলাদেশে এখন এক ভ্যাকসিনে ওই তিন ভাইরাসের প্রতিষেধক পাওয়া যায়। এর অর্থ হলো- একটি প্রতিষেধক নিলেই গর্ভবতী নারী, অনিয়ন্ত্রিত ডায়াবেটিস ও ক্যান্সারের মতো ঝুঁকিপূর্ণ রোগীরা উচ্চ মাত্রার সংক্রামক এই ভাইরাস থেকে নিরাপদ থাকতে পারেন।
সাধারণত স্বাস্থ্যবান মানুষে দেহে সংক্রমিত হলে এ ভাইরাস নিজে থেকেই নিয়ন্ত্রণে চলে আসে। সংক্রমিতদের মধ্যে খুব কম মানুষকেই হাসপাতালে নেওয়ার প্রয়োজন হয় বলে মাহমুদুর রহমান জানান।
তিনি বলেন, “আমরা সব সময় আতঙ্ক ছড়ানোর বিপক্ষে। বরং আমরা রোগ ও এর প্রতিরোধ সম্পর্কে জানার পরামর্শ দেই।”
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ইনফ্লুয়েঞ্জা বিশেষজ্ঞ কমিটির এই সদস্য বলেন, ভারতে যে রাজ্যগুলোতে সবচেয়ে বেশি সংক্রমণের ঘটনা ঘটেছে, সেগুলো বাংলাদেশের সীমানা থেকে অনেক দূরে। উত্তর প্রদেশ, গুজরাট ও রাজস্থানেই এ ভাইরাসের প্রকোপ বেশি দেখা দিয়েছে।
বাংলাদেশের সীমানা সংলগ্ন পশ্চিমবঙ্গে সংক্রমণের যেসব ঘটনা ঘটছে তার বেশিরভাগই ওই রাজ্যগুলো থেকে আসা।
মাহমুদুর রহমান বলেন, “সন্দেহ নেই, আমাদেরও সতর্ক হতে হবে। তবে এখনই উদ্বিগ্ন হওয়ার মতো কিছু হয়নি।”
তিনি জানান, ইনফ্লুয়েঞ্জা দেশ ও অঞ্চলভেদে ভিন্ন ভিন্ন সময়ে ছড়ায়। ভারত ও বাংলাদেশেও মৌসুমী ইনফ্লুয়েঞ্জা এক সময়ে ছড়ায় না।
শীতের সময় জ্বর ও কাশিসহ বিভিন্ন ধরনের অসুস্থতা দেখা যায়। এ কারণে বাংলাদেশে ওই সময়ে ইনফ্লুয়েঞ্জা ছড়ায় বলে একটি ধারণা প্রচলিত আছে।
তবে আইইডিসিআর বলছে, বাংলাদেশে এই সময় শুরু হয় এপ্রিলে এবং শেষ হয় সেপ্টেম্বরে; জুলাই ও অগাস্টে এর প্রকোপ বাড়ে।
ভারতে সোয়াইন ফ্লু দেখা দিলেও গত তিন মাসে বাংলাদেশে ইনফ্লুয়েঞ্জার কোনো ঘটনা ধরা পড়েনি বলে মাহমুদুর রহমান জানান।
বাংলাদেশে সর্বশেষ সোয়াইন ফ্লু ধরা পড়ে ২০১৩ সালের এপ্রিলে।
আইইডিসিআরের পরিচালক বলেন, সোয়াইন ফ্লু প্রতিরোধে পর্যাপ্ত ওষুধ সরকারের কাছে মজুদ রয়েছে। এছাড়া স্বাস্থ্যকর্মীদের ব্যক্তিগত রোগ প্রতিরোধের জন্যও সরঞ্জাম মজুদ রয়েছে।
এছাড়া ইনফ্লুয়েঞ্জা, মার্স করোনা ভাইরাস ও ইবোলা মোকাবেলায় গত বছর ছয় হাজার চিকিৎসক ও চার হাজার নার্সকে প্রশিক্ষণ দিয়েছে সরকার।
“তাই আমরা বলতে পারি, তেমন কোনো পরিস্থিতি এলে তা মোকাবেলায় আমরা প্রস্তুত আছি।”
জ্বর, নাক দিয়ে সর্দি ঝরা, গলা ব্যথা ও কাশির সঙ্গে শ্বাসকষ্ট সোয়াইন ফ্লুর অন্যতম উপসর্গ।
ভারত থেকে ফেরার সাত থেকে ১০ দিনের মধ্যে কারো এসব উপসর্গ দেখা দিলে চিকিৎসকের কাছে যাওয়ার পরামর্শ দেন মাহমুদুর রহমান।
আর যে কোনো ফ্লু প্রতিরোধে ব্যক্তিগত পরিচ্ছন্নতা, বিশেষ করে সাবান দিয়ে হাত ধোয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়ে থাকে।
ভারতের সংক্রমণ পরিস্থিতির কারণে চলতি বছর এখন পর্যন্ত বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা কোনো দেশকে বন্দরে সোয়াইন ফ্লু পরীক্ষার ব্যবস্থা নিতে বলেনি।