সৌর বিস্তারণ কী?
চৌম্বকশক্তির আকস্মিক নির্গমন, যার মধ্য দিয়ে সৌর পরিমণ্ডল গঠিত হয়েছে
সূর্য ও পৃথিবীর মধ্যবর্তী চৌম্বকক্ষেত্রগুলোর মধ্যে সংঘর্ষ ঘটাতে পারে
পৃথিবীতে যেসব প্রতিক্রিয়া দেখা যেতে পারে
মেরু অঞ্চলে বেতারযোগাযোগ বিপর্যস্ত হতে পারে এবং হালকা তেজষ্ক্রিয় ঝড় দেখা দিতে পারে
সবচেয়ে বড় সৌর বিস্তারণের ফলে কৃত্রিম উপগ্রহগুলো (স্যাটেলাইট) ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে এবং যোগাযোগব্যবস্থা ও বিদ্যুতের ভোল্টেজ নিয়ন্ত্রণে বিঘ্ন ঘটতে পারে
পৃথিবী
চৌম্বকমণ্ডল বা ম্যাগনেটোস্ফিয়ার: সূর্য থেকে নির্গত অধিকাংশ কণার আঘাত থেকে পৃথিবীকে সুরুক্ষিত রাখে
শক্তিশালী একটি সৌরঝড় পৃথিবীর দিকে প্রবাহিত হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল ওশেনিক অ্যান্ড অ্যাটমোস্ফেরিক অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (এনওএএ) এ খবর জানিয়েছে। ওই সৌরঝড়ের প্রভাবে সৃষ্ট তড়িৎ চুম্বকীয় তৎপরতা পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলের উপরিতলে কয়েক ঘণ্টা ধরে অব্যাহত ছিল। ফলে উত্তর গোলার্ধের আকাশে গত মঙ্গলবার মেরুপ্রভা দেখা গেছে।
যুক্তরাষ্ট্রের উত্তরাঞ্চলীয় মিনেসোটা, মনটানা, নর্থ ডাকোটা, সাউথ ডাকোটা, ওয়াশিংটন ও উইসকনসিন অঙ্গরাজ্যের আকাশে উজ্জ্বল সবুজ ও লাল-সাদার মিশ্র রঙের মেরুপ্রভা দেখা যায়। এনওএএর আবহাওয়া পূর্বাভাস কেন্দ্রের পরিচালক টমাস বার্গার বলেন, সূর্য থেকে বেরিয়ে আসা আলোর মেঘপ্রবাহের ঝলকানির ব্যাপারে তাঁরা আগাম ইঙ্গিত পেয়েছেন। চলতি সৌরচক্রে এটি সবচেয়ে শক্তিশালী সৌরঝড় বা ভূচৌম্বকীয় ঝড় হিসেবে গণ্য হচ্ছে।
সৌরঝড়টির প্রভাবে এখন পর্যন্ত কোনো বিপর্যয়ের খবর পাওয়া যায়নি। তবে পৃথিবীর ওপর তড়িৎ চুম্বক তরঙ্গের অবিরাম বর্ষণের প্রভাবে গ্লোবাল পজিশনিং সিস্টেমস (জিপিএস) ও আধুনিক যোগাযোগের অন্যান্য ব্যবস্থা ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে বলে সতর্ক করে দিয়েছে এনওএএ। মেরুপ্রভা সবচেয়ে ভালো দৃশ্যমান হয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের আলাস্কা ও কানাডায় মঙ্গলবার রাতে। এনওএএর হিসাব অনুযায়ী, ভূচৌম্বকীয় ঝড়ের তীব্রতার যে পাঁচটি মাত্রা রয়েছে, সেগুলোর মধ্যে বর্তমান ঝড়টি চতুর্থ (জি ফোর)। পঞ্চমটি সবচেয়ে মারাত্মক বলে বিবেচিত হয়।
সূর্যের আলোকমণ্ডল থেকে গত রোববার দুটি গুরুত্বপূর্ণ বিস্ফোরণ ও উদ্গিরণের ফলে এই ভূচৌম্বকীয় ঝড়ের উৎপত্তি হয়। বার্গার বলেন, দুটি উদ্গিরণ একত্রিত হয়ে প্রবাহিত হয় এবং পৃথিবীর কক্ষপথ ভেদ করেছে। এতে পৃথিবীতে এক আলোর ঝলকানি বয়ে গেলেও সরাসরি কোনো আঘাত পড়েনি। তবে সৌরঝড়টি ক্রমশ শক্তিশালী হয়ে গবেষকদের অনুমানের চেয়েও দ্রুততর গতিতে প্রবাহিত হয়েছে। ফলে অনুমিত সময়ের চেয়ে প্রায় ১৪ থেকে ১৫ ঘণ্টা আগেই মেরুপ্রভা দৃশ্যমান হয়।
জি ফোর মাত্রার সৌরঝড় মোটামুটি স্বাভাবিক বলেই গণ্য হয়। সর্বশেষ জি ফোর সৌরঝড় দেখা গিয়েছিল ২০১৩ সালে। সবচেয়ে উচ্চমাত্রার সৌরঝড় জি ফাইভ অত্যন্ত বিরল। এ ধরনের মহাজাগতিক ঝড় গত এক দশকেরও বেশি সময় ধরে দেখা যায়নি।
এবারের সৌরঝড়ে আন্তর্জাতিক স্পেস স্টেশনে (আইএসএস) অবস্থানকারী নভোচারীরা কোনো রকম ঝুঁকির মধ্যে পড়েননি। মার্কিন মহাকাশ সংস্থা নাসার মুখপাত্র ড্যান হুট এ কথা জানিয়েছেন। সৌরঝড় থেকে সুরক্ষার জন্য পৃথিবীর নিজস্ব চৌম্বক বর্ম থাকলেও পৃথিবীর কক্ষপথের নিচের দিকে অবস্থানকারী স্যাটেলাইটগুলো সাময়িক বিপত্তির মুখোমুখি হতে পারে।