সরকারি ব্যাংকগুলোর মূলধন সংকট চরমে পৌঁছেছে। রাষ্ট্রীয় কোষাগার থেকে ব্যাংকগুলোর জন্য যে টাকা বরাদ্দ আছে তার পুরোটা দিলেও সেই সংকট কাটবে না। চলতি অর্থবছরে রাষ্ট্র মালিকানাধীন ব্যাংকগুলোর জন্য পাঁচ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ আছে। এর মধ্যে দেড় হাজার কোটি টাকা দুটি ব্যাংককে দিয়ে দেওয়া হয়েছে। রয়েছে সাড়ে ৩ হাজার কোটি টাকা। অথচ সর্বশেষ হিসাবে (৩১ ডিসেম্বর, ২০১৪) চার ব্যাংকের মূলধন ঘাটতি দাঁড়িয়েছে প্রায় ১০ হাজার কোটি টাকা। বিষয়টি নিয়ে উদ্বেগে রয়েছে অর্থ মন্ত্রণালয়ও। এ অবস্থায় গত বুধবার সংশ্লিষ্ট ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালকদের (এমডি) সঙ্গে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের একটি বৈঠক হয়েছে বলেও জানা গেছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানায়, সরকারি ব্যাংকগুলোর মূলধন ঘাটতি আশঙ্কাজনকভাবে বাড়ছে। আর এর কারণ হিসেবে বলা হচ্ছে অনিয়ম ও দুর্নীতি। সরকার থেকে সংশ্লিষ্ট ব্যাংকগুলোর নির্বাহীদের এ ব্যাপারে সতর্ক করে দেওয়া হয়েছে। বলা হয়েছে, ব্যবস্থাপনাগত দক্ষতা না বাড়াতে পারলে বছর বছর সরকারি কোষাগার থেকে টাকা দিয়ে ব্যাংকগুলোকে বাঁচানো যাবে না। গত ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত ব্যাংকগুলোর যে তথ্য পাওয়া গেছে সেখানে সবচেয়ে বেশি মূলধন ঘাটতি রয়েছে বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকের। এই ব্যাংকের ঘাটতির পরিমাণ প্রায় সাড়ে ৬ হাজার কোটি টাকা। এরপর রয়েছে বেসিক ব্যাংক যার মূলধন ঘাটতি ২ হাজার ২০০ কোটি টাকা। রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংকের (রাকাব) ঘাটতির পরিমাণ প্রায় ৯০০ কোটি টাকা। এ ছাড়া সোনালী ব্যাংকের প্রায় ৪০০ কোটি টাকা মূলধন ঘাটতি রয়েছে। ঘাটতি মেটাতে এরই মধ্যে ব্যাংকগুলোর নির্বাহীরা টাকা চেয়ে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগে দেন-দরবার করছে। গত ১০ মার্চ মূলধন বাবদ টাকা চেয়ে ব্যাংকিং সচিব ড. এম আসলাম আলমের কাছে চিঠি লিখেছেন রাকাবের এমডি মনজুর আহমদ। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের এক কর্মকর্তা জানান, মূলধন ঘাটতি মেটাতে গত অর্থবছরে দুই ধাপে সরকারি ব্যাংকগুলোকে চার হাজার ৪০৯ কোটি টাকা দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে রাষ্ট্রায়ত্ত চার ব্যাংকেই গেছে চার হাজার ১০০ কোটি টাকা। বরাদ্দকৃত অর্থ থেকে সোনালী ব্যাংক ১ হাজার ৯৯৫ কোটি টাকা, জনতা ব্যাংক ৮১৪ কোটি টাকা, অগ্রণী ব্যাংক ১ হাজার ৮১ কোটি টাকা এবং রূপালী ব্যাংক ২১০ কোটি টাকা পেয়েছে। চলতি অর্থবছরের বাজেটে সরকারি ব্যাংকগুলোর জন্য ৫ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে। তার মধ্যে দেড় হাজার কোটি টাকা সোনালী ও বেসিক ব্যাংকের ঘাটতি পূরণে এরই মধ্যে দিয়ে দেওয়া হয়েছে। এ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. সালেহ উদ্দিন আহমেদ ব্যাংকগুলোর এ অবস্থার জন্য দুর্নীতি ও অনিয়মকে দায়ী করেন। তিনি স্বদেশ নিউজ ২৪ ডট কমকে বলেন, রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকের পাশাপাশি এখন বিশেষায়িত ব্যাংকগুলোতেও দুর্নীতি, অনিয়ম বেড়েছে। বিকেবি ও রাকাব এ দুটি ব্যাংক মূলত কৃষি ঋণ দিয়ে থাকে। তাদের এত বেশি ঘাটতি হওয়ার কোনো কারণ নেই। এই দুই কৃষি ব্যাংক প্রকৃত কৃষকদের ঋণ না দিয়ে ভুয়া হিসাবের বিপরীতে ২০ থেকে ৫০ কোটি টাকা ঋণ দিয়েছে। এগুলো মন্দ ঋণ হিসেবে শ্রেণিকৃত হয়েছে। এক লাখ কৃষক ঋণ নিলেও হয়তো ৫০ কোটি টাকা খেলাপি হয় না। তাদের মূলধন ঘাটতি যেভাবে বেড়েছে এটা খুবই আশঙ্কাজনক। আর যেসব ব্যাংকে ঘাটতি রয়েছে পুরোটাই লুটপাটের কারণে। সরকার যদি নতুন করে টাকা দিয়ে মূলধন বৃদ্ধি করে তাতে লুটপাট উৎসাহিত হবে। তাই ঋণ আদায় করতে হবে। এ জন্য ভালো ব্যাংকার খুঁজে নিয়ে পর্ষদ গঠন করতে হবে পরামর্শ দেন বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক এই গভর্নর