ভোলার উপকূলীয় নদী ও বঙ্গোপসাগরের মোহনায় ট্রলার ডুবির ঘটনা বেড়েই চলছে। এতে একদিকে যেমন প্রান যাচ্ছে জেলেদের অন্যদিকে নিখোঁজদের সন্ধ্যান মিলছে না।
পরিবারের একমাত্র উপার্জক্ষম ব্যাক্তির মৃত্যুতে জেলে পরিবারগুলো অসহায় দিনাপিত করলেও অনেক ক্ষেত্রে সরকারী সাহায্য সহযোগীতাও মিলছে না তাদের ভাগ্যে।
দুর্যোগ বিষয়ে জেলেদের প্রশিক্ষন ব্যবস্থা না থাকা ও ঝড়ের পূবাভাস না পাওয়ার ফলে গত ৪ বছরে নদী ও সাগর মোহনায় উপকূলের উপর দিয়ে বয়ে যাওয়া প্রায় ১২টি ঝড়ে মাছ শিকারে গিয়ে ট্রলার ডুবির ঘটনায় নিহত হয়েছে ভোলার ৫৮জন। এসব ঘটনায় নিখোঁজ রয়েছে অন্তত ২০ জেলে। যাদের সন্ধ্যান মেলেনি, তাদের অপেক্ষায় আজো পথচেয়ে আছেন পরিবারের সদস্যরা। তবে তারা জীবিত নাকি মৃত রয়েছেন তাও জানেনা নিখোঁজদের পরিবার। এভাবে উপকূলের জলসীমায় আর কত জেলের প্রান যাবে এ প্রশ্ন জেলে পরিবারগুলোর।
নিহত জেলের মধ্যে মনপুরা উপজেলায় ৩৭জন, তজুমদ্দিন উপজেলায় ৬জন, দৌলতখান উপজেলায় ২জন, চরফ্যাশন উপজেলায় ১২জন ও লালামোহন উপজেলায় ১জন রয়েছে। অন্যদিকে নিখোঁজ জেলেদের মধ্যে দৌলতখান উপজেলায় ১১জন ও চরফ্যাশন উপজেলায় ৯ জেলে। এছাড়াও আহত হয়েছে অন্তত অর্ধশতাধিক জেলে।
এছাড়াও সমুদ্র উপকূলে ২০১১ সাল থেকে ৮ এপ্রিল ১৩ পর্যন্ত এক প্রতিবেদনে আরো ৩২ জেলের নিহত হওয়ার তালিকা প্রকাশ করেছে বেসরকারী উন্নয়ন সংস্থা কোস্টগার্ড।
সংস্থার সমন্বয়কারী মিজানুর রহমান জানান, চট্রগ্রামসহ উপকূলী বেশ কিছু এলাকায় জলদস্যুসহ বিভিন্ন দুর্ঘটনায় শিকার হয়ে ৩২ জেলে নিহত হন। নদীতে জলদস্যুতা রোধসহ জেলেদের বিভিণœ দাবী আদায়ের লক্ষ্যে আমরা মানববন্ধনসহ বিভিণœ কর্মসূচী পালন করে আসছি। এ প্রক্রিয়া অব্যাহত রয়েছে।
জেলা মৎস্য অফিস সুত্রে জানা গেছে, ২০১১ সাল থেকে চলতি বছরের ১১ ফেব্রুয়ারী পর্যান্ত জেলায় মোট ৫৮ জেলে নিহত হয়েছে। ১২টির বেশী ঘূর্নিঝড়ে এ মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে। এসব দুর্ঘটনার মধ্যে উল্লেখযোগ্য ২০১২ সালের অক্টোবর মাসে মনপুরা উপজেলায় ৩০ জেলে ও ২০১৩ সালে আরো ৭ জেলে নিহত হন। ২০০৩ সাল থেকে ১৪ সাল পর্যন্ত বিভিন্ন সময়ে চরফ্যাশন উপজেলায় নিহত হন ১২ জেলে। সর্বশেষ ২০১৫ সালে ৩১ জানুয়ারী তজুমদ্দিনের মেঘনায় আরো ৬ জেলে নিহত হন।
তবে নিহত পরিবারের সদস্যরা সরকারী সাহায্য সহযোগীতা পেলেও নিখোঁজ পরিবারগুলো এখনও অর্থ পায়নি। প্রয়োজনীয় কাগজপত্র দাখিল করতে বিলম্ব ও জটিলতা থাকায় সরকারী অনুদান তাদের ভাগ্যে জুটেনি বলে জানা গেছে।
চরফ্যাশন উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো: আসাদুজ্জামান জানান, নিহতদের পরিবারকে সরকারী অর্থ দেয়া হয়েছে। নিখোঁজ আরো ৬জন জেলে পরিবারের পক্ষ থেকে আবেদন করা হয়েছে। নিখোঁজ পরিবার মৃত্যু সদন, ভোটার আইডি কার্ড, ওয়ারিস সার্টিফিকেট জটিলতা থাকায় তাদের অর্থ দেয়া সম্ভব হয়নি। তবে খুব শিগ্রই তারা সরকারী অর্থ পাবেন।
এ ব্যাপারে ভোলা জেলা মৎস্য কর্মকর্তা প্রীতিষ কুমার মল্লিক বলেন, আমরা মাঝে মধ্যে জেলেদের নিয়ে উদ্ভদ্বকরন সভা করা হয়, ওই সব সভায় জেলেদের সতর্ক হতে বলা হয়। কিন্তু তার পরেও মাঝে মধ্যে কিছু সংখ্যক জেলে ঝড় উপেক্ষা করেই নদীতে মাছ শিকারে যায়। নিহত জেলেদের মৎস্য মন্ত্রনালয় থেকে সরকারীভাবে অর্থ দেয়া হচ্ছে।
ভোলার অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক সুব্রত কুমার সিকদার বলেন, নদীতে মাছ শিকারে যাওয়া যেসব নৌকা বা ট্রলার দুর্ঘটনায় শিকার হয়, ওইসব ট্রলারের মাঝি-মাল্লাদের লাশ পাওয়া গেলে তাদের মৃত বলে গন্য করা হয়। ওইসব নিহত জেলে পরিবারকে সরকারী অনুদান প্রদান করা হয়।