বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) এক শিক্ষককে লাঞ্ছিত করার ঘটনায় বুয়েট শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদককে আজীবন বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত প্রত্যাহারের দাবি জানিয়েছে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটি। সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার না হলে আন্দোলনের হুমকি দিয়েছে সংগঠনটি। আর বুয়েট শাখা ছাত্রলীগ সাত দিনের মধ্যে ওই শিক্ষকের অপসারণ ও বিচার দাবি করেছে।
গতকাল বুধবার ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সভাপতি এইচ এম বদিউজ্জামান ও সাধারণ সম্পাদক সিদ্দিকী নাজমুল আলম এক যৌথ বিবৃতিতে ওই সিদ্ধান্ত প্রত্যাহারের দাবি জানান।
গত সোমবার রাতে বুয়েটের শৃঙ্খলা পর্ষদের (ডিসিপ্লিনারি বোর্ড) সভায় বুয়েট ছাত্রলীগের সভাপতি শুভ্র জ্যোতি টিকাদার ও সাধারণ সম্পাদক আবু সাঈদকে আজীবন বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এ ছাড়া তড়িৎকৌশল বিভাগের শিক্ষার্থী প্রতীক দত্তকে এক বছরের জন্য, কম্পিউটার বিজ্ঞান ও প্রকৌশল বিভাগের রাতুলকে হল থেকে বহিষ্কার এবং যন্ত্রকৌশল বিভাগের আবু আনাসকে সতর্ক করা হয়।
পুরকৌশল বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক জাহাঙ্গীর আলমকে লাঞ্ছিত করার ঘটনায় তাঁদের এ শাস্তি দেওয়া হয়। তিনি জামায়াত নেতা কামারুজ্জামানের ফাঁসিকে ‘অবিচার’ বলে ফেসবুকে মন্তব্য করেন। এ ব্যাপারে তাঁর বিরুদ্ধে ঢাকার মুখ্য মহানগর হাকিম আদালতে রাষ্ট্রদ্রোহ ও ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাতের অভিযোগে নালিশি মামলা করা হয়েছে।
ছাত্রলীগের দপ্তর সম্পাদক শেখ রাসেল স্বাক্ষরিত বিবৃতিতে বুয়েটের এই সিদ্ধান্তের তীব্র নিন্দা জানিয়ে বলা হয়, এই সিদ্ধান্তের ফলে বুয়েট তার অতীত ঐতিহ্য ও প্রগতিশীল চেতনা হারিয়েছে। এর ফলে মৌলবাদ ও জঙ্গিবাদী গোষ্ঠী আবার মাথাচাড়া দিয়ে উঠবে। অন্যায়ভাবে শিক্ষক সমিতির স্বৈরতান্ত্রিক চাপে ঘাতকদের উসকানিদাতা শিক্ষক জাহাঙ্গীর আলমকে রক্ষা করার জন্য বুয়েট এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
বিবৃতিতে বলা হয়, ‘আমরা এই সিদ্ধান্ত প্রত্যাহারের দাবি জানাচ্ছি। নতুবা বাংলাদেশের সকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে সাধারণ শিক্ষার্থীদের সঙ্গে নিয়ে আমরা এই সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে দুর্বার আন্দোলন গড়ে তুলব।’
শিক্ষকের বিচার দাবি: শিক্ষার্থীদের অন্যায় বহিষ্কার আদেশ প্রত্যাহার এবং শিক্ষক জাহাঙ্গীর আলমের সাত দিনের মধ্যে বিচার দাবিতে মানববন্ধন করেছে বুয়েট ছাত্রলীগ। দুপুরে বুয়েটের প্রশাসনিক ভবনের সামনে সাধারণ শিক্ষার্থীদের ব্যানারে সংগঠনের নেতা-কর্মীরা এই মানববন্ধন করেন। এ সময় ওই শিক্ষকের অপসারণেরও দাবি জানানো হয়। এ জন্য তাঁরা প্রশাসনকে সাত দিনের সময় বেঁধে দেন।
১২ এপ্রিল থেকে চলা শিক্ষক সমিতির কর্মবিরতি প্রত্যাহার হওয়ায় গতকাল থেকে বুয়েটের বিভিন্ন বিভাগে ক্লাস শুরু হয়েছে। ক্যাম্পাসে পুলিশ মোতায়েন ছিল। শিক্ষার্থীদের উপস্থিতিও ছিল প্রায় স্বাভাবিক।