বহুল আলোচিত ও দীর্ঘ দিনের প্রতীক্ষিত স্থল সীমান্ত বিলটি পাশ হওয়ায় মুক্ত জীবনের আশায় আনন্দে ভাসছে ছিটমহলবাসী।
মঙ্গলবার ভারতীয় মন্ত্রীসভায় অনুমোদনের পর বিলটি বুধবার রাজ্যসভায়ও পাশ হয়েছে।
আজ বৃহস্পতিবার বিলটি লোকসভায় পাশ হলে বন্দী জীবনের অবসান ঘটবে দু’দেশের ১৬২ টি ছিটমহলের ৫১ হাজার ৫শ ৮০ জন মানুষের।
এরই মধ্যে মুক্ত জীবনের আশায় আনন্দে উদ্বেলিত হয়েছে ছিটমহলবাসী। ছিটমহলগুলোতে চলছে মিষ্টি বিতরণ, আনন্দ মিছিলসহ নানা আয়োজন।
লোক সভায় বিলটি পাশ হলেই বাংলাদেশের অভ্যন্তরে ভারতের ১১১টি ছিটমহলের ৩৭হাজার ৩শ ৬৯জন মানুষ বাংলাদেশের নাগরিকত্ব এবং ভারতের অভ্যন্তরে বাংলাদেশের ৫১টি ছিটমহলের ১৪ হাজার ২শ ১১ জন মানুষ ভারতীয় নাগরিকত্বের সুবিধা পাবে। বিলটি পাশ ও বাস্তবায়ন হলে বাংলাদেশ পাবে ১১১টি ছিটমহলের ১৭ হাজার ২শ ৫৮ একর জমি এবং ভারত পাবে ৫১টি ছিটমহলের ৭হাজার ১১০ একর জমি।
১৯৭৪ সালে ছিটমহল বিনিময়ে ইন্দিরা-মুজিব চুক্তি বাস্তবায়নের দাবিতে উভয় দেশের ছিটবাসীরা দীর্ঘ দিন ধরে অভিন্ন কর্মসূচি পালন করে। এর ধারাবাহিকতায় ২০১১ সালে ঢাকায় হাসিনা-মনমোহন প্রটোকল স্বাক্ষরিত হয়। ২০১৩ সালে ভারতের কংগ্রেস সরকার ল্যান্ড বাউন্ডারী চুক্তির বিলটি পার্লামেন্টে উত্থাপনের চেষ্টা করলে পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য সরকারের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জীর আপত্তির মুখে বিলটি আলোর মুখ দেখেনি।
নরেন্দ্র মোদি সরকার ক্ষমতায় আসার পর দু’দেশের সম্পর্ক উন্নয়নে ছিট মহল বিনিময়ের কথা ওঠে এতে মমতা ব্যানার্জী রাজী হলে ৪ ডিসেম্বর পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের এক জনসভায় ছিটমহল বাসীদের দুঃখ দুর্দশা লাঘবে ছিট বিনিময়ে সম্মতি জানান।
কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ী উপজেলার দাসিয়ারছড়া ছিটমহলের বাসিন্দা আমেনা জানান, ভারতে ছিট মহলের বিল পাশ হওয়ায় নিজেদেরকে মুক্ত পাখির মতো মনে করছি। আমাদের এখানে স্কুল-কলেজ হলে আমাদের ছেলে-মেয়েরা পড়া-লেখা করতে পারবে।
ফুলবাড়ী উপজেলার অভ্যন্তরে ভারতীয় ছিটমহল দাসিয়ার ছড়ার নবম শ্রেণির ছাত্রী শামছুন নাহার জানায়, ভুয়া নাম ঠিকানা দিয়ে পায়ে হেটে ১০ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে লেখাপড়া করতে হচ্ছে। ছিট বাংলাদেশ হলে আমাদের আর কষ্ট করতে হবে না।
ফুলবাড়ী উপজেলার কালিরহাট ছিটের বাসিন্দা মোজাফফর হোসেন জানান, দীর্ঘ বঞ্চনার পর মৌলিক অধিকারসহ নাগরিকত্বের পরিচয় নিয়ে বেঁচে থাকার আশায় আমরা ছিটবাসীরা উচ্ছ্বসিত। আশা করছি দ্রুত ছিটমহল বিনিময় করে ছিটবাসীর অবরুদ্ধ জীবনের অবসান ঘটবে।
বাংলাদেশ-ভারত ছিট মহল বিনিময় সমন্বয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক গোলাম মোস্তফা জানান, ভারতের মন্ত্রী সভায় অনুমোদনের পর রাজ্যসভায় স্থল সীমান্ত বিলটি পাশ হয়েছে। লোকসভায় বিলটি পাশা হওয়ার পর যত তাড়াতাড়ি সম্ভব তা বাস্তবায়ন হবে।