চুয়াডাঙ্গার আলমডাঙ্গা উপজেলার গ্রামীণ জনপদের ঐতিহ্য কেরোসিন বাতি হারিকেন সবার অজান্তে বিলুপ্ত হতে চলেছে। এক সময়ের গ্রামীণ জনপদে রাতের আলোর একমাত্র অবলম্বন ছিল কেরোসিন বাতি হারিকেন। উপজেলার চরিয়াকোনা গ্রামের সাবেক আলতু মেম্বার বলেন, প্রতিটি বড়িতেই এক বা একাধিক সংখ্যক হারিকেন থাকতো। সন্ধ্যা এলেই সবার আগে মনে পড়তো হারিকেনের কথা। গৃহস্থলির সকল কাজ সেরে বাড়ির বৌ-ঝিরা সন্ধ্যার আগেই হারিকেনের কাঁচ মুছে তাতে কেরোসিন ভরে জ্বালিয়ে দিতো প্রতি ঘরে ঘরে। অন্ধকার হওয়ার পূর্বেই সবার বাড়িতে শোভা পেতো হারিকেনের আলো। ছেলেমেয়েদের পড়াশোনা থেকে শুরু করে রাতের যাবতীয় কাজকর্ম সারা হতো হারিকেনের আলোয়। তাছাড়াও গ্রামের নববিবাহিত মেয়েরা যখন বাপের বাড়ি থেকে শশুরবাড়ি যেতো তখন উপহার হিসাবে বাপের বাড়ি থেকে মেয়েকে অন্যান্য জিনিসের সঙ্গে একটা হারিকেন উপহারেরও প্রচলন ছিলো। এ ছাড়াও খেলাধুলাসহ বিভিন্ন প্রতিযোগিতামুলক অনুষ্ঠানে উপহার হিসাবে হারিকেনের বেশ কদর ছিলো। গ্রামবাংলার মানুষের কাছে হারিকেন বহুল পরিচিত হওয়ায় বিভিন্ন নির্বাচনে নির্বাচনী প্রতিক হিসাবে এখনও হারিকেনের ছবি প্রচলিত আছে। তাই বর্তমানে হারিকেন অনেকটা ফটোফ্রেমে বন্দী। গ্রামবাংলার ঐতিহ্য বাস্তবের সেই কেরোসিনের বাতি হারিকেন আজ আর চোখে পড়ে না। গ্রামের দিকে দু’একটি বাড়িতে হারিকেন দেখা মিললেও সেটি এখন আর জ্বলে না। পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে আছে ঘরের বিভিন্ন অকেজো জিনিসের সাথে। তাই আর কিছুদিন পরই হয়তো হারিকেনের ঠাঁই হবে জাদুঘরে। এখন শহরের সাথে পাল্লা দিয়ে বেশিরভাগ গ্রামের সব খানেই সন্ধ্যা হলেই জ্বলতে থাকে রঙ-বেরঙের বৈদ্যুতিক বাতি। এছাড়াও রয়েছে দেশি-বিদেশি ছোটবড় নামিদামি নানান ডিজাইনের চার্জার লাইট। বিদ্যুৎ চলে গেলে সাথে সাথে এসব জ্বলে ওঠে। এখনও প্রত্যন্ত গ্রামা লের যে সমস্ত জায়গায় বিদ্যুৎ পৌঁছেনি বর্তমানে সেখানেও স্থানীয়ভাবে জেনারেটরের সাহায্যে বৈদ্যুতিক বাতি জ্বালানের ব্যবস্থা করা হচ্ছে। বৈদ্যুতিক আলো ছাড়া মানুষের জীবন এখন কল্পনাতীত। রহিমা বেগমসহ একাধিক বয়স্কা গৃহবধূ বলেন, এখন আর গৃহবধুদের হারিকেনের কাঁচ মুছে হাতে কালি লাগাতে হয়না বা কেরাসিন ঢালতে হাত গন্ধ করতে হয়না। এখন বৈদ্যুতিক লাইটের সুইচ টেপা মাত্রই ঘর ভরে যায় আলোয়। ক’বছর আগেও মানুষ যেখানে রাতে কেরোসিনের বাতি হারিকেনের আলোয় ছেলেমেয়েদের লেখাপড়া, খাওয়া দাওয়া সহ দৈনন্দিন সকল কাজ সারতো। অবসর প্রাপ্ত শিক্ষক আজিজুল হক রেনু মিয়া বলেন, কালের বিবর্তন ও বিজ্ঞানের অগ্রযাত্রায় বিদ্যুৎ সহজলভ্য হওয়ায় বর্তমানে সেখানে বিদ্যুতের আলো ছাড়া মানুষ অন্য কিছু কল্পনাও করতে পারে না। এক সময়ের গ্রামবাংলার জনপ্রিয় ঐতিহ্যবাহী সেই কেরোসিনের বাতি হারিকেন আজ বিলুপ্তর পথে। বর্তমান প্রজন্মের ছেলে মেয়েদের অনেকেই এর নামও জানে না। হয়ত আর কিছুদিন পর এ জিনিসটি ঠাঁই পাবে বিভিন্ন যাদু ঘরে। আর যাদু ঘরে ঠাঁই পাওয়া এ জিনিসটি দেখে পরবর্তী প্রজন্মের ছেলে মেয়েরা বড়দের কাছে জিজ্ঞেস করবে এটা আবার কি জিনিস? কি কাজে লাগে ইত্যাদি।