চট্টগ্রামে গ্যাস সংকট তীব্র আকার ধারণ করেছে। জ্বলছেনা রান্নার চুলা। বন্ধ বিদ্যুৎ কেন্দ্র। সংকটে কয়েক’শ শিল্প কারখানা। হবিগঞ্জের বিবিয়ানা ক্ষেত্র থেকে গ্যাস সরবরাহ বন্ধ থাকায় এ সংকট দেখা দিয়েছে। সোমবার এ সংকট আরও তীব্র আকার ধারণ করেছে।
চট্টগ্রামে গ্যাস সংকটে রড-সিমেন্ট তৈরির মতো বড় কারখানার পাশাপাশি ছোট ছোট ১৬৩টি বিদ্যুৎ কেন্দ্রের উৎপাদন মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে।
চট্টগ্রামের ব্যবসায়ী এবং শিল্পপতিদের বিভিন্ন সংগঠন গ্যাস সরবরাহ বিঘ্নিত হওয়ার খবরে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। অন্তত একশ ভারী ও মাঝারি শিল্প এর ফলে সংকটে পড়বে বলে মনে করা হচ্ছে। বিশেষ করে গ্যাসের ওপর নির্ভরশীল স্টিল এবং রি-রোলিং মিলগুলো, তৈরী পোষাক এবং কাঁচ শিল্পে এর নেতিবাচক প্রভাব পড়বে বলে তারা মনে করছেন।
কর্ণফুলী গ্যাস বিতরণ কোম্পানি(কেজিডিসিএল) হিসাব মতে, চট্টগ্রামে গ্যাসের চাহিদা রয়েছে ৪৮০ মিলিয়ন ঘনফুট। এর বিপরীতে গ্যাস পায় ২৫০ মিলিয়ন ঘনফুট পর্যন্ত। কিন্তু রোববার চট্টগ্রামে গ্যাস সরবরাহ হয়েছে ২২৮ মিলিয়ন ঘনফুট। সোমবার সরবরাহ কমে আসায় এ সংকট আরও তীব্র আকার ধারণ করছে। সোমবার জাতীয় গ্রিড থেকে কেজিডিসিএল গ্যাস পেয়েছে মাত্র ১৮১ মিলিয়ন ঘনফুট।
গ্যাসের অভাবে বন্ধ রয়েছে- রাউজান তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্রের একটি ইউনিট ও শিকলবাহা ১৫০ মেগাওয়াট পিকিং বিদ্যুৎ কেন্দ্র।
কর্ণফুলী গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানির মহাব্যবস্থাপক(ইঞ্জিনিয়ারিং সার্ভিসেস) খন্দকার মতিউর রহমান বলেন,‘জাতীয় গ্রিড থেকে সরবরাহ কমে যাওয়ায় এ সংকট দেখা দিয়েছে। সোমবার ৪৫০ মিলিয়ন ঘনফুট চাহিদার বিপরীতে জাতীয় গ্রিড থেকে কেজিডিসিএল গ্যাস পেয়েছে মাত্র ১৮১ মিলিয়ন ঘনফুট। গ্যাস সংকট নিরসনের জন্য আমরা চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।’
তিনি বলেন,‘বিবিয়ানা ক্ষেত্র থেকে কনডেন্স কিনে নেয় বিপিসি। শুনেছি তারা কনডেন্স নেওয়া বন্ধ করে দিয়েছে। তাই গ্যাসের সঙ্গে কনডেন্স মাত্রাতিরিক্ত হওয়ায় গ্যাস উৎপাদন বন্ধ রাখা হয়েছে।’
বিবিয়ানা ক্ষেত্র জাতীয় গ্রিডে দৈনিক প্রায় সাড়ে চারশ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস সরবরাহ করে বলে জানা গেছে।
এদিকে গ্যাস সংকটের কারণে রোববার থেকে নগরীর বিভিন্ন এলাকায় গ্যাস সরবরাহ বন্ধ রয়েছে। ফলে আবাসিক গ্রাহকরা দূর্ভোগে পড়েছেন।
আশকার দিঘীর পাড় এলাকার গৃহিনী মিনা দাশগুপ্তা বলেন,‘রোববার সকাল থেকে চুলা জ্বালানো যাচ্ছে না। রাত ১১টার দিকে আসলেও সকালে আবার গ্যাস বন্ধ হয়ে যায়। গ্যাস না থাকায় হোটেল থেকে খাবার কিনে এনে খেতে হচ্ছে।’
গ্যাসের চাপ না থাকায় সিএনজি রিফুয়েলিং স্টেশনের সামনে ঘণ্টার পর ঘণ্টা দাড়িয়েও গ্যাস পাচ্ছেন না বলে অভিযোগ করেছেন সিএনজি চালিত গাড়ির চালকরা।
প্রাইভেট কার চালক ফরহাদ বলেন,‘এমনিতে দিনে ছয়ঘণ্টা বন্ধ থাকে। কয়েক ঘণ্টা সিএনজি স্টেশনগুলোর সামনে দাঁড়িয়ে থেকেও সিএনজি না নিয়ে ফিরে আসতে হয়েছে। এখন তেল দিয়ে গাড়ি চালাতে হচ্ছে।’
নগরীতে শিল্পকারখানার মালিকদের নিজস্ব উদ্যোগে প্রতিষ্ঠিত ছোট ছোট ১৬৩ টি ক্যাপটিভ পাওয়ার প্ল্যান্ট, ৬২টি সিএনজি ফিলিং স্টেশন ও ৩ লাখ ৬৯ হাজার ৭০৩ আবাসিক গ্রাহক রয়েছে।