গত এপ্রিল মাসে দিল্লির একটি লাইভ কনসার্টে হাজারো দর্শকের সামনে চিকিৎসক শ্রীকান্তের গালে চড় মেরে হইচই ফেলে দেন অসংযত আচরণের জন্য কুখ্যাতি পাওয়া বলিউডের প্লেব্যাক গায়ক মিকা সিং। তাঁর বিরুদ্ধে ভারতীয় দণ্ডবিধির ৩৪১/৩৪ এবং ৩২৩ ধারায় মামলা নথিভুক্ত করে দিল্লি পুলিশ। ওই মামলায় গতকাল ১১ জুন গ্রেপ্তার করা হয় মিকাকে। তবে জেলের চারদেয়ালের ভেতর ঢুকতে হয়নি প্রভাবশালী এ সংগীত তারকাকে। ২০ হাজার রুপি মুচলেকার বিনিময়ে জামিন পেয়েছেন তিনি।
দিল্লির ইন্দ্রপুরী থানার একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার উদ্ধৃতি দিয়ে পিটিআই জানিয়েছে, আমবেদকার হাসপাতালের চিকিৎসক শ্রীকান্তকে চড় মারার সঙ্গে সংশ্লিষ্টতার জন্য মিকা সিংকে নোটিশ পাঠিয়ে ইন্দ্রপুরী থানায় ডেকে আনা হয়। তিনি থানায় এলে তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদের পর গ্রেপ্তার করা হয়। মিকার বিরুদ্ধে জামিনযোগ্য ধারায় মামলা হওয়ায় তাঁকে জামিন দেওয়া হয়েছে।
এ প্রসঙ্গে মিকার আইনজীবী সঞ্জয় ভাটনগর বলেন, ‘তদন্তের জন্য আমাদের ডেকে পাঠানো হয়েছিল।’ মিকা যে ধরনের অপরাধ করেছেন তা জামিনযোগ্য বলেও মন্তব্য করেন সঞ্জয় ভাটনগর।
দিল্লির পুসা ইনস্টিটিউট মেলা গ্রাউন্ডে গত ১১ এপ্রিল কনসার্টের আয়োজন করে দিল্লি অপথালমোলজিক্যাল সোসাইটি। সন্ধ্যার দিকে গান গাইতে মঞ্চে ওঠেন মিকা সিং। মঞ্চ পরিবেশনার একপর্যায়ে তিনি দর্শকসারি থেকে কয়েকজনকে মঞ্চে ডেকে নেন। তাঁদের মধ্যে চিকিৎসক শ্রীকান্তও ছিলেন।
মঞ্চে শ্রীকান্তের সঙ্গে বাগ্বিতণ্ডার একপর্যায়ে তাঁর ওপর প্রচণ্ড চটে গিয়ে চড় মারার হুমকি দেন মিকা। একটু পরেই শ্রীকান্তের গালে কষে চড় মেরে বসেন। এরপর ধাক্কা দিয়ে দুজন দেহরক্ষীর হাতে তুলে দেন। চড় খেয়ে শ্রীকান্তের বাম কানের ভেতর আঘাত লাগায় তাঁকে হাসপাতালেও ভর্তি হতে হয়। ওই ঘটনায় মিকার বিরুদ্ধে ভারতীয় দণ্ডবিধির ৩৪১/৩৪ এবং ৩২৩ ধারায় মামলা দায়ের করা হয়।
ঘটনার পরপরই মিকার চড় মারার ভিডিও কয়েকটি ওয়েবসাইটে ফাঁস হওয়ার পর অন্তর্জালে রীতিমতো তোলপাড় শুরু হয়। এর পরিপ্রেক্ষিতে চড় মারার পক্ষে সাফাই গেয়ে একটি বিবৃতিও প্রকাশ করেন ৩৮ বছর বয়সী মিকা। কাকতালীয় বিষয় হলো, ১০ জুন ছিল মিকার ৩৮তম জন্মদিন। ঘটা করে জন্মদিন পালনের একদিন পরই গ্রেপ্তার করা হয় তাঁকে।
গত এপ্রিল মাসে মামলা হওয়ার দুই মাস পেরিয়ে গেলেও মিকার বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেয়নি পুলিশ। সম্প্রতি মালয়েশিয়ায় আইফা অনুষ্ঠানেও যোগ দিতে গিয়েছিলেন মিকা। দেরিতে হলেও পুলিশ মিকাকে গ্রেপ্তার করলেও তিনি জামিন পাওয়ায় লোকদেখানোর জন্য তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল কি না, তা নিয়ে সংশয় থেকেই যাচ্ছে।
আদিত্য পাঞ্চোলি, সুরজ পাঞ্চোলি, সালমান খানসহ আরও অনেক তারকাই প্রভাব খাটিয়ে জেলের চারদেয়ালে বন্দী হওয়ার হাত থেকে রক্ষা পেয়েছেন। জামিন নিয়ে বহাল তবিয়তেই সময় পার করছেন। ইচ্ছেমতো দেশ-বিদেশেও ঘুরে বেড়াচ্ছেন। অবশ্য এ ক্ষেত্রে ব্যতিক্রম ‘খলনায়ক’ তারকা সঞ্জয় দত্ত। অস্ত্র মামলায় সাজা পাওয়ায় পুনের ইয়েরাওয়াড়া কারাগারে বন্দী আছেন তিনি। তবে তিনি একাধিকবার প্যারোলে মুক্তি পাওয়ায় সমালোচনার ঝড় উঠেছে বলিউডে। তাই বলা যায়, আইন সবার জন্য সমান হলেও বলিউডের তারকাদের ক্ষেত্রে তা খাটে কি না, বিষয়টি নিয়ে প্রশ্ন উঠতেই পারে।