সিলেটের কুমারগাঁওয়ে কিশোর রাজনকে পিটিয়ে হত্যায় জড়িত এমন চারজনকে শনাক্ত করা গেছে। পেটানোর সময় এই চারজনই উপস্থিত ছিল।
রাজনকে নির্যাতনের সময় ধারণ করা ভিডিও দেখে এই চারজনকে শনাক্ত করা হয়েছে। এদের সবার পরিচয় পাওয়া গেছে। এই সংবাদ প্রকাশের সময় তাদের পরিচয় পাওয়া যায়নি। পরবর্তীতে কুমারগাঁও এলাকায় সাঁটানো এক পোস্টার থেকে হত্যাকারীদের পরিচয় পাওয়া গেছে।
ছবিতে ক্রমানুসারে রয়েছে কামরুল, ময়না, দুলাল ও পাবেল। তাদের ফাঁসির দাবিতে এলাকায় পোস্টার সাঁটানো হয়েছে এবং মানববন্ধন করা হয়েছে। এই চারজনকে শনাক্ত করা ছাড়াও আরো চার জনের ফাঁসি দাবি করেছে এলাকাবাসী। তারা হচ্ছেন- মুহিত, আলী, শামীম ও ইউসুফ।
রাজনকে হত্যার দায়ে চার জনের বিরুদ্ধে থানায় মামলা হয়েছে। আসামিরা হচ্ছেন- মুহিত ও তার ভাই কামরুল ইসলাম (২৪), তাদের সহযোগী আলী হায়দার ওরফে আলী (৩৪) ও চৌকিদার ময়না মিয়া ওরফে বড় ময়না (৪৫)। এদের মধ্যে মুহিত আটক এবং অন্যরার পলাতক রয়েছেন।
জালালাবাদ থানার ওসি আক্তার হোসেন বলেন, নির্যাতনের ওই ভিডিওর কথা তিনি শুনেছেন। ভিডিও দেখেছেন- এমন কয়েকজনের সঙ্গে কথাও বলেছেন। ঘটনার সঙ্গে মামলার চার আসামিই সম্পৃক্ত বলে ধারণা করা হচ্ছে। পুরো ঘটনার ব্যাপারে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য মুহিতকে সাত দিনের রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদের আবেদন করা হয়েছে।
এদিকে হত্যাকারীদের গ্রেফতার ও ফাঁসির দাবিতে মানববন্ধন করেছেন এলাকাবাসী। রাজনদের বাসার সামনে এক মানববন্ধনে শতাধিক নারী পুরুষ ও শিশু অংশ নিয়ে খুনিদের ফাঁসি দাবি করে। এলাকায় হত্যাকারীদের বিচারের দাবিতে পোস্টারও লাগানো হয়েছে। এসব পোস্টার নিয়ে মানববন্ধনে অংশ নেন এলাকাবাসী।
নিহত রাজন কুমারগাঁও বাসস্টেশন সংলগ্ন সিলেট সদর উপজেলার কান্দিগাঁও ইউনিয়নের বাদে আলী গ্রামের মাইক্রোবাস চালক শেখ আজিজুর রহমানের ছেলে। দুই ভাইয়ের মধ্যে রাজন বড়। অনন্তপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে চতুর্থ শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশোনা করা রাজন সবজি বিক্রি করত। আর সবজি বিক্রির টাকা দিয়েই চলতো রাজনের পরিবারের খরচ।
গত বুধবার ভোরে সে সবজি বিক্রি করতে বাড়ি থেকে বের হয়। শহরতলীর কুমারগাঁও এলাকায় আসার পর চোর সন্দেহে তাকে আটক করে কয়েকজন। কুমারগাঁও বাসস্ট্যান্ড এলাকা সংলগ্ন স্থানে তাকে একটি খুঁটির সঙ্গে হাত-পা বেঁধে টানা আধাঘণ্টা ধরে মারধর করে তারা। এরপর হাত-পা খুলে দিলে একটু হাঁটিয়ে আবারও বেঁধে নির্যাতন চালানো হয়। রাজনকে রড দিয়ে যে মারছে, সে কামরুল ইসলাম। তিনি সৌদি আরবে থাকেন। কিছুদিন আগে তিনি দেশে আসেন। কামরুল শেখপাড়া গ্রামের মৃত আব্দুল মালিকের ছেলে।
নির্যাতনের এক পর্যায়ে মারা যায় রাজন। রাজন মারা গেছে বুঝতে পেরে তার লাশ গুমের চেষ্টা চালায় তারা। লাশ গুমের চেষ্টাকালে মুহিত আলম নামে একজনকে স্থানীয় জনতা আটক করে পুলিশে দেয়। পুলিশ ওইদিন দুপরের দিকে রাজনের লাশ উদ্ধার করে।
গত বুধবার সিলেট সদর উপজেলার কুমারগাঁওয়ে দোকানের খুঁটির সাথে বেঁধে প্রায় দেড় ঘণ্টা নির্যাতন করে হত্যা করা হয় কিশোর শেখ সামিউল আলম রাজনকে। বাঁধা অবস্থায় পানির জন্য বেশ কয়েকবার আর্তনাদ করেও রাজনকে পানি দেয়নি নির্যাতনকারীরা। পানি চাইলেও নির্যাতনকারীরা তাকে উল্টো বলে ‘পানি নাই ঘাম খা’। কয়েকজন মিলে উল্লাসের সাথে কিশোর রাজনের উপর চালায় অমানবিক নির্যাতন। এসময় নির্যাতনের ভিডিও চিত্র ধারণ করে তাদের একজন।
নির্যাতনকারীদের একজন সেই ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছেড়ে দেন। শনিবার রাতে ভিডিওটি ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়লে এলাকায় আলোড়ন সৃষ্টি হয়। স্থানীয় একটি গণমাধ্যমে সংবাদটি ভিডিওসহ প্রকাশ করার পর বিষয়টি সবার নজরে আসে।