২০০৬ সালের ৬ই আগস্ট জিম্বাবুয়ের হারারেতে সাকিব আল হাসান বল করলেন। বলটি পড়েই চিগুম্বুরার ব্যাট ফাঁকি দিয়ে স্টাম্প ভেঙ্গে দিলো। ওয়ানডেতে প্রথম উইকেট। এর পরে ৯টি বছর কেটে গেছে। সাকিব এখন যে কোন দলের ব্যাটসম্যানদের আতঙ্কের নাম। গতকাল চট্টগ্রামে নিজের ১৫৬তম ওয়ানডে খেলতে নেমেছিলেন দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে। এরই মাঝে ২০০৮ সালে ৫০তম, ২০১০ এ ১০০তম ও ২০১১ তে ১৫০তম উইকেট তুলে নেন। একে একে ১৯৮টি উইকেট তুলে নিয়ে অপেক্ষায় ছিলেন আরেকটি মাইলফলক স্পর্শ করার। গতকাল প্রথমে শুরুটা করেছিলেন ফাফ ডু প্লেসিকে দিয়ে। ফ্লাইটেড বলে সুইপ করতে গিয়ে ডু প্লেসি বল আকাশে তুলে দেন। উইকেটের পেছনে তা গ্লাভসবন্দি করেন মুশফিকুর রহিম। ১৯৯তম উইকেট। এরপরই তার অপেক্ষার অবসান হয় হাশিম আমলাকে দিয়ে। বলটি তার ব্যাট ছুঁয়ে মুশফিকের হাতে ধরা পড়ার সঙ্গে দ্বিতীয় বাংলাদেশী হিসেবে সাকিবের ২০০তম উইকেটের মাইলফলক স্পর্শ করেন। এর আগে বাংলাদেশের হয়ে প্রথম ২শ উইকেট নিয়েছেন খুলনার স্পিনার আবদুর রাজ্জাক। তবে তাকে ছাড়িয়ে যেতে সাকিব আল হাসানের প্রয়োজন আরও ৮টি উইকেট।
২শ থেকে ২ উইকেট দূরে থেকে এই ম্যাচ শুরু করেছিলেন মাগুরার সাকিব। এই ম্যাচ শুরুর আগে এমন মাইলফলক ছোঁয়ার দৌড়ে ছিলেন অধিনায়ক মাশরাফি বিন মুর্তজাও। ১৯৮ উইকেট নিয়ে এই ম্যাচ শুরু করেছিলেন বাংলাদেশ অধিনায়ক। কিন্তু মন্থর উইকেটে প্রথম স্পেলে মাত্র ২ ওভার বোলিং করে তিনি সাকিবের হাতে বল তুলে দেন। সুযোগ পেয়ে সাকিবও এক এক করে দুটি উইকেট তুলে নিয়ে নিজেকে আরও সমৃদ্ধ করেন। মাশরাফিও অবশ্য পরে মিলারকে আউট করে ২০০ উইকেট পূর্ণ করেন। তবে সাকিবের ২০০ ছোঁয়ার সুযোগ আরও একটু আগেই এসে যেত। কিন্তু হাশিম আমলার ক্যাচ ফেলে দিয়েছিলেন সাব্বির রহমান। কিন্তু অপেক্ষা দীর্ঘায়িত হয়নি। সেই আমলাকে ফিরিয়েই ২০০ পূর্ণ করেন সাকিব। সাকিবের আগে ২০১৩ সালের মার্চে শ্রীলঙ্কার পাল্লেকেলেতে ২০০ ছুঁয়েছিলেন রাজ্জাক। সাচিত্রা সেনানায়েকে ছিল রাজ্জাকের ২০০তম শিকার। সেই ম্যাচে ৬২ রানে ৫ উইকেট নিয়েছিলেন রাজ্জাক, শ্রীলঙ্কার মাটিতে প্রথম জয় পেয়েছিল বাংলাদেশ। রাজ্জাক ২০০ ছুয়েঁছিলেন ১৪১তম ম্যাচে। এই দুজন ছাড়া ওয়ানডেতে বাঁহাতি স্পিনার হিসেবে ২০০ উইকেট আছে মাত্র দুজনের। ৩২৩ উইকেট নিয়েছেন শ্রীলঙ্কার সনাৎ জয়সুরিয়া আর ৩০৫টি নিউজিল্যান্ডের ড্যানিয়েল ভেট্টোরি।
বাংলাদেশের ওয়ানডেতে সেরা পাঁচ বোলারের মধ্যে চারজনই খুলনা বিভাগের। ২০৭ উইকেট নিয়ে শীর্ষে আছেন আবদুর রাজ্জাক। তারপরই আছেন নড়াইলের মাশরাফি বিন মুর্তজা, ১১৯টি উইকেট নিয়ে চতুর্থ স্থানে আছেন ঢাকার স্পিনার মো. রফিক। এ ছাড়াও ৬৭ ম্যাচে ৮৫ উইকেট নিয়ে ৫ম স্থানে আছেন বাগেরহাটের রুবেল হোসেন।
ওয়ানডেতে ব্যাটে-বলে ৪০০০ রান ও ২০০ উইকেটের গর্বের ‘ডবল‘ পূর্ণ হলো সাকিব আল হাসানের। ক্যারিয়ারে ১৫৫ ওয়ানডেতে ব্যাট হাতে সাকিবের সংগ্রহ ৪৩৮২ রান। ৪৫ বছরের ওয়ানডে ইতিহাসে এমন কৃতিত্ব ছিল কেবল ৬ জন ক্রিকেটারের। ওয়ানডেতে অলরাউন্ড নৈপুণ্যে এমন তালিকায় সাকিব ছাড়িয়ে গেলেন ভারতীয় কিংবদন্তী কপিল দেবকে। ক্যারিয়ারে ২২৫ ওয়ানডেতে ব্যাটে-বলে কপিল দেবের সংগ্রহ ৩৭৮৩ রান ও ২৫৩ উইকেট।