মুঠোফোন কেনার কথা বলে এক ছাত্রকে অপহরণ করে মোটা অঙ্কের মুক্তিপণ দাবির অভিযোগে রাজধানীর শাহবাগ থানার একটি আবাসিক হোটেল থেকে গতকাল শুক্রবার রাতে সাতজনকে গ্রেপ্তার করেছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। একই হোটেল থেকে অপহরণের শিকার ওই ছাত্রকেও উদ্ধার করা হয়। গ্রেপ্তার ব্যক্তিদের মধ্যে একজন বিকাশের এজেন্ট ও আরেকজন তাঁর কর্মচারী।
আজ শনিবার রাজধানীর মিন্টো রোডে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) মিডিয়া সেন্টারে এক সংবাদ ব্রিফিংয়ে ডিবির যুগ্ম কমিশনার মনিরুল ইসলাম সাংবাদিকদের এ কথা জানান। ব্রিফিংয়ের সময় মোহাইমিনুল ইসলাম ওরফে আনাস নামের অপহরণের শিকার ওই ছাত্র ও তাঁর পরিবারের সদস্যরাও উপস্থিত ছিলেন। মোহাইমিনুলের শরীরের বিভিন্ন জায়গায় অপহরণকারীদের মারধরের গুরুতর জখম ছিল।
গ্রেপ্তার ব্যক্তিরা হলেন, শাহাদত হোসেন, শরীফ হোসেন, নিধন চন্দ্র দাস, মো. সেলিম, হোটেল কর্মচারী আব্দুল কাদের, বিকাশ এজেন্ট নাছির উদ্দিন ও নাছিরের কর্মচারী বাপ্পী।
ডিবির যুগ্ম কমিশনার মনিরুল ইসলামের ভাষ্য, সম্প্রতি মোহাইমিনুল অনলাইনে মুঠোফোন বিক্রির বিজ্ঞাপন দেন। তাঁর সূত্র ধরে অপহরণকারীরা তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করে ওই মুঠোফোন কেনার কথা বলেন। গত ২২ জুলাই বিকেলে আদাবর শেখেরটেক এলাকায় অপহরণকারীরা ক্রেতা বেশে মোহাইমিনুলের কাছ থেকে ওই মুঠোফোন সংগ্রহ করতে যান। একজন মোহাইমিনুলের সঙ্গে মুঠোফোনের দরদাম নিয়ে আলাপ আলোচনা করছিলেন। এর মধ্যেই অন্যরা তাঁকে একটি মাইক্রোবাসে ধাক্কা দিয়ে তুলে নিয়ে অপহরণ করে নিয়ে যায়। এরপর মোহাইমিনুলের মুঠোফোন নম্বর থেকে তাঁর পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করে মুক্তিপণের টাকা দাবি করা হয়। প্রথমে বিকাশের মাধ্যমে পরিবার ১০ হাজার টাকা পাঠায়। পরে অপহরণকারীরা ১০ লাখ টাকা দাবি করে। অন্যথা মোহাইমিনুলকে মেরে ফেলা হবে বলেও হুমকি দেওয়া হয়। অপহরণকারীরা মোহাইমিনুলকে বেধড়ক মারধরও করে। মোহাইমিনুলের আর্তনাদ মুঠোফোনের মাধ্যমে তাঁর পরিবারকেও শোনায় অপহরণকারীরা।
মনিরুল আরও বলেন, এ ঘটনায় মোহাইমিনুলের পরিবার গত ২৩ জুলাই একটি অপহরণ মামলা করে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে ডিবি মামলার ছায়া তদন্তে নামে। তদন্তে ডিবি জানতে পারে, অপহরণকারীরা মোহাইমিনুলকে নিয়ে রাজধানীর শাহবাগ থানার তোপখানা রোডের বৈশাখী হোটেলে অবস্থান করছে। নিশ্চিত হওয়ার পর গতকাল রাত সাড়ে আটটার দিকে ডিবি ওই হোটেলে অভিযান চালিয়ে অপহরণে জড়িত সাতজনকে আটক করে। এরপর হোটেলের পাঁচ তলার ৫০১ নম্বর কক্ষ থেকে মোহাইমিনুলকে উদ্ধার করা হয়।
মনিরুল বলেন, আটক ব্যক্তিরা প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানিয়েছেন, তাঁরা দীর্ঘদিন ধরে বিভিন্ন লোকজনকে অপহরণ করে বৈশাখী হোটেলে রেখে একই কায়দায় মুক্তিপণ আদায় করে আসছিলেন। কেউ কোনো কিছু বিক্রির জন্য অনলাইনে ব্যক্তিগত বিজ্ঞাপন দিলে এই চক্রটি ক্রেতা সেজে বিজ্ঞাপনদাতাকে অপহরণ করে। আবার নিজেরাই বিজ্ঞাপন দিয়ে একই ঘটনা ঘটান। এদের মধ্যে আটক নাছির ও তাঁর কর্মচারী বাপ্পী বিকাশের মাধ্যমে বিভিন্ন পরিবারের কাছ থেকে মুক্তিপণের টাকা নিতেন। বৈশাখী হোটেলের পাশের একটি ভবনের নিচতলায় নাছির টেলিকম নামের একটি দোকান নিয়ে ব্যবসা করে আসছিলেন আটক নাছির।
মনিরুল বলেন, দীর্ঘদিন ধরে ওই হোটেলে অপহরণ করে লোকজনকে নির্যাতন করে মুক্তিপণ আদায় করা হচ্ছে। মোহাইমিনুলকে মারধর করে তাঁর চিৎকার পরিবারকে শোনানোও হয়েছে। সেই হিসেবে হোটেলের অন্য লোকজনও এসব ঘটনা জানার কথা। তাই হোটেল কর্তৃপক্ষ বা হোটেলের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট আরও কেউ এসব ঘটনার সঙ্গে জড়িত কিনা তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
সংবাদ ব্রিফিং শেষে অপহরণের শিকার মোহাইমিনুল প্রথম আলোকে বলেন, তিনি মোহাম্মদপুর মডেল স্কুল এন্ড কলেজ থেকে এসএসসি ও এইচএসসি পাস করেছেন। বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির চেষ্টা চালাচ্ছেন। মোহাইমিনুল বলেন, তিনি প্রায় সময় অনলাইনে বিজ্ঞাপন কিছু না কিছু বিক্রি করেন। কিন্তু এবারই প্রথম তিনি বিজ্ঞাপন দিয়ে অপহরণের শিকার হয়েছেন।