জ ও তাবলিগ জামাত নিয়ে বিতর্কিত মন্তব্য করে মন্ত্রিত্ব ও আওয়ামী লীগের সদস্য পদ হারিয়েছেন টাঙ্গাইল-৪ আসনের সাংসদ আবদুল লতিফ সিদ্দিকী। আজ রোববার লতিফ সিদ্দিকী আওয়ামী লীগকে চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, আওয়ামী লীগের এখতিয়ার নেই তাকে বহিষ্কার করার। অপরদিকে জাতীয় সংসদের সদস্য পদ বাতিলের সুপারিশ করেছে আওয়ামী লীগ। নির্বাচন কমিশনের চিঠির জবাবে রোববার লতিফ সিদ্দিকী ও আওয়ামী লীগ পৃথকভাবে চিঠিতে এই জবাব দেয়। জাতীয় সংসদের সদস্য পদ নিয়ে নির্বাচন কমিশনে স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরীর দেওয়া চিঠির বিপরীতে লতিফ সিদ্দিকী ও আওয়ামী লীগের কাছে ব্যাখ্যা চায় কমিশন। এর জবাবে আওয়ামী লীগকে চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে নির্বাচন কমিশনে চিঠি দিয়েছেন লতিফ সিদ্দিকী। চিঠিতে তিনি বলেছেন, তাকে বহিষ্কারের এখতিয়ার আওয়ামী লীগের নেই। ব্যক্তিগত সহকারী মো. রুবেল প্রধান নির্বাচন কমিশনারের (সিইসি) কাছে চিঠিটি জমা দেন। নির্বাচন কমিশনকে শুনানি বিতর্কে না গিয়ে বিষয়টি স্পিকারের কাছে পাঠানোরও অনুরোধ জানিয়ে চিঠিতে লতিফ সিদ্দিকী বলেছেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর সফরসঙ্গী হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রে কূটনৈতিক সফরকালে নিউইয়র্কে বসবাসরত টাঙ্গাইলের অধিবাসীদের সঙ্গে আলাপকালে আমার বিরুদ্ধে ধর্ম অবমাননার কষ্টকল্পিত, বানোয়াট ও ভিত্তিহীন যে অভিযোগ আনা হয়েছে, তা আলোচনার স্বার্থে যদি ধরেও নেওয়া হয় যে আমি ওই বক্তব্য দিয়েছি তাহলেও তা বিবেচনায় নিয়ে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ থেকে আমার সদস্যপদ বাতিল করার কোনো এখতিয়ার আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় সংসদের নেই। কেননা আমি বাংলাদেশ সরকারের তথা জনগণের প্রতিনিধি হিসেবে সেখানে গিয়েছি এবং একজন জনপ্রতিনিধি হিসেবে উক্ত বক্তব্য রেখেছি বলে ধরে নেওয়া হবে। আওয়ামী লীগের একজন সদস্য সেই বক্তব্য দিয়েছি বলে বিবেচনা করার কোনো সুযোগ নেই। অতএব আওয়ামী লীগের সদস্য পদ থেকে আমাকে বহিষ্কার করার সিদ্ধান্তটাই সম্পূর্ণ ভুল ব্যাখ্যার ওপর ভিত্তি করে নেওয়া হয়েছে। বিধায় সে সিদ্ধান্তের আলোকে পরবর্তী যত সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে এবং হবে তাও ভুল বলে আইন অনুযায়ী বিবেচনা করা হবে।’ চিঠিতে তিনি দাবি করেন, ‘স্পিকারের পাঠানো ও সংবিধানে ৬৬ (৪) দফায় বর্ণিত সারমর্মের সঙ্গে তার বিতর্কটি সংগতিপূর্ণ নয়। ফলে নির্বাচন কমিশন সুনির্দিষ্টভাবে ৬৬ (৪) দফার বিষয়ে যা বলা এবং কার্যক্ষেত্রে ৬৬ (২) ও ৭০ ধারার কোনো ব্যত্যয় না ঘটায় কোনো কিছু করণীয় আছে বলে মনে হয় না।’ বিষয়টির গভীরতা ও ভবিষ্যতের কথা বিবেচনা করে শুনানিতে না গিয়ে স্পিকার বরাবর ফেরত পাঠানোর জন্য কমিশনকে অনুরোধ জানিয়েছেন লতিফ সিদ্দিকী। এদিকে কমিশনের চিঠির জবাবে দল থেকে বহিষ্কৃত আবদুল লতিফ সিদ্দিকীর সংসদ সদস্যপদ বাতিলের পদক্ষেপ নিতে সুপারিশ করেছে আওয়ামী লীগ। দলের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম স্বাক্ষরিত এ চিঠি নির্বাচন কমিশনে পৌঁছে দেন উপ-দপ্তর সম্পাদক মৃণাল কান্তি দাস। চিঠিতে বলা হয়, দলীয় গঠনতন্ত্র মেনে সর্বসম্মতিক্রমে দলের সব সদস্য পদ ও প্রাথমিক সদস্য পদ থেকে লতিফ সিদ্দিকীকে বহিষ্কার করা হয়েছে। তিনি আর বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের কেউ নন। সংবিধানের ৬৬ (৪) অনুচ্ছেদ, গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ ১৯৭২ এর ১২ (১) অনুচ্ছেদ, সংসদের কার্যপ্রণালী বিধি ১৭৮ ধারা অনুযায়ী টাঙ্গাইল-৪ আসনের সংসদ সদস্য লতিফ সিদ্দিকীর সদস্য পদ বাতিলের জন্য অনুরোধ করা হলো। সিইসি কাজী রকিবউদ্দীন আহমদকে লতিফ সিদ্দিকীর সংসদ সদস্য পদ থাকা না থাকার বিষয়ে সিদ্ধান্ত দিতে ১৩ জুলাই চিঠি পাঠান স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরী। ওই চিঠিতে লতিফ সিদ্দিকীর সাংসদ পদ বাতিলের বিষয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে স্পিকারকে পাঠানো আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলামের চিঠিও জুড়ে দেন তিনি। ওই চিঠিতে বলা হয়, ২০১৪ সালের ২৪ অক্টোবর আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের সভায় গঠনতন্ত্র অনুসারে লতিফ সিদ্দিকীকে দল থেকে চূড়ান্তভাবে বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত হয়। যেহেতু আওয়ামী লীগের প্রাথমিক সদস্য পদও নেই, সেহেতু এই দলের মনোনয়নে নির্বাচিত জাতীয় সংসদ সদস্য পদেও তাঁকে বহাল রাখা সমীচীন হবে না। গত বছরের ২৮ সেপ্টেম্বর নিউইয়র্কে এক অনুষ্ঠানে পবিত্র হজ ও তাবলিগ জামাত এবং প্রধানমন্ত্রীর ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়কে নিয়ে বিতর্কিত মন্তব্য করায় মন্ত্রিসভা থেকে অপসারণ করা হয় এবং দল থেকে বহিষ্কার করা হয়। ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাতের অভিযোগে তাঁর বিরুদ্ধে ঢাকাসহ দেশের ১৮টি জেলায় অন্তত ২২টি মামলা হয়। একই বছরের ২৫ নভেম্বর দেশে ফিরে আদালতে আত্মসমর্পণ করলে তাকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন আদালত। হাইকোর্ট থেকে জামিনে ২৯ জুন কারাগার থেকে মুক্তি পান।